বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

মাছের ত্বক থেকে পাওয়া জেলাটিনে খাদ্যদ্রব্য তৈরি বাকৃবির গবেষকদের

  • প্রতিবেদক, ময়মনসিংহ    
  • ২ জানুয়ারি, ২০২৪ ১০:০০

গবেষক দলের প্রধান অধ্যাপক ড. মো. ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘পাঙাশ, সামুদ্রিক পোয়া, ইল বা বাইন, শোল মাছের ফেলে দেয়া ত্বক থেকে প্রাথমিকভাবে জেলাটিন নিষ্কাশন করতে সক্ষম হয়েছি। পরে প্রাপ্ত এই জেলাটিন বাজারের বহুল ব্যবহৃত জেলাটিনের সঙ্গে  তুলনা করে এর বৈশিষ্ট্য, পানি ধারণ ক্ষমতা ও গলনাঙ্কের তুলনা করে এর মান যাচাই করেছি। পরে এই নিষ্কাশিত জেলাটিন দিয়ে আইসক্রিম, চকলেট ও পুডিং তৈরি করেছি।’

মাছের ত্বক থেকে জেলাটিন নিষ্কাশন করে জেলি আইসক্রিম, জেলি ক্যান্ডি, জেলি পুডিং উদ্ভাবন করতে সক্ষম হয়েছেন বলে দাবি করেছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) গবেষকরা। তারা বলছেন, নিষ্কাশিত এই জেলাটিন একদিকে যেমন বিদেশ থেকে জেলাটিন আমদানি কমাবে তেমনি মাছের ফেলে দেয়া বর্জ্যের সঠিক ব্যবস্থাপনা করা সম্ভব হবে।

পাঁচ সদস্যের ওই গবেষক দলের প্রধান বাকৃবির ফিশারিজ টেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. ইসমাইল হোসেন। দলে ছিলেন একই বিভাগের অধ্যাপক ড. ফাতেমা হক শিখা এবং তিনজন স্নাতকোত্তর অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী।

বাকৃবি সূত্র জানায়, জেলাটিন এক ধরনের প্রোটিন উপাদান, যেটি কোলাজেন থেকে আসে। কোলাজেন প্রাকৃতিক প্রোটিন, যা স্তন্যপায়ী প্রাণীর রগ, অস্থিসন্ধি এবং কলায় উপস্থিত থাকে। খাদ্য হিসেবে জেলাটিন জেলি ডেজার্ট তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। এ ছাড়াও ফল ও গোশত সংরক্ষণে এবং গুঁড়া দুধ তৈরি করতে এটি ব্যবহার করা হয়। ক্যাপসুল ও ওষুধের সিরাপ হিসেবে এটির ব্যবহার করা হয়।

বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকার মতো মৎস্য ও মৎস্যজাত পণ্য বিদেশে রপ্তানি করা হয়। এই মৎস্য খাত ব্যবহার করে আরও বৈদেশিক মুদ্রা আনা সম্ভব। এজন্য ভালোমানের ও বিভিন্ন ধরনের নতুন পণ্য তৈরি করতে হবে।

মাছের ত্বকের জেলাটিন থেকে আইসক্রিম তৈরি। ছবি: নিউজবাংলা

গবেষক দলের প্রধান অধ্যাপক ড. মো. ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘পাঙাশ, সামুদ্রিক পোয়া, ইল বা বাইন, শোল মাছের ফেলে দেয়া ত্বক থেকে প্রাথমিকভাবে জেলাটিন নিষ্কাশন করতে সক্ষম হয়েছি। পরে প্রাপ্ত এই জেলাটিন বাজারের বহুল ব্যবহৃত জেলাটিনের সঙ্গে তুলনা করে এর বৈশিষ্ট্য, পানি ধারণ ক্ষমতা ও গলনাঙ্কের তুলনা করে এর মান যাচাই করেছি। পরে এই নিষ্কাশিত জেলাটিন দিয়ে আইসক্রিম, চকলেট ও পুডিং তৈরি করেছি।

‘আমরা নিষ্কশিত জেলাটিনকে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদিত জেলাটিনের সঙ্গে তুলনা করে উচ্চতর গবেষণা করছি। ফলাফলে এসেছে যেকোনো প্রজাতির মাছ থেকে উচ্চ গুণগত মানসম্পন্ন জেলাটিন পাওয়া সম্ভব হবে।’

ওষুধ শিল্পে এর চাহিদার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ ওষুধ শিল্প ও খাদ্য শিল্পে ব্যবহারের জন্য বিদেশ থেকে প্রচুর পরিমাণে জেলাটিন আমদানি করে। তাই দেশেই যদি দেশীয় এসব মাছ থেকে জেলাটিন বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন করা হয়, তবে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন ছোট, বড় মাছের বাজারে উচ্ছিষ্ট অংশ যা বর্জ্য হিসেবে ফেলে দেয়া হয় তার একটি সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা হবে।

‘বিদেশ থেকে আমদানিকৃত জেলাটিনের প্রধান উৎস গরু ও শূকর। তাই মাছ থেকে নিষ্কাশিত জেলাটিন খাদ্যপণ্যে ব্যবহার করা হলে ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত সম্ভব হবে।’

মাছের ত্বক থেকে তৈরি জেলাটিন। কোলাজ: নিউজবাংলা

গবেষক দলের অধ্যাপক ড. ফাতেমা হক শিখা বলেন, ‘মাছের উচ্ছিষ্ট থেকে উৎপাদিত এসব পণ্যের মধ্যে বিপুল পরিমাণে প্রোটিন রয়েছে। এই প্রোটিন আমরা নষ্ট না করে একটি বিকল্প উপায়ে ব্যবহার করতে পারি। আমাদের চারপাশে প্রচুর পরিমাণে মাছের বর্জ্য ফেলে দেয়া হয়। এগুলো যেমন পরিবেশের ক্ষতি করে, পরিবেশকে নষ্ট করে, তেমনিভাবে মানুষের স্বাস্থ্যও নষ্ট করে।

‘এগুলো ব্যবহার করে যদি আমরা জেলাটিন তৈরি করতে পারি তাহলে একদিকে যেমন ধর্মীয় হালাল-হারামের বিষয়টা কমানো যাবে, অন্যদিকে পরিবেশকে সুরক্ষা প্রদান করা যাবে।’

এ বিভাগের আরো খবর