একটি আধা পাকা ঘরের বারান্দায় হ্যাঙ্গারে ঝুলছে নানা ধরনের জামাকাপড়। সামনে ডিজিটাল ব্যানারে অনেকটা শিরোনামের মতো বড় ফন্টে লেখা ‘মানবতার দেয়াল’। তার ঠিক নিচে লেখা ‘দিতে গর্ব নাই, নিতে লজ্জা নাই’।
ব্যানারটিতে অপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র দিয়ে প্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানাানো হয়। এতে বলা হয়, ‘আপনার আমার ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা হতে পারে অপরের হাসিমুখ।’
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার চা শ্রমিক ও অসহায়দের মধ্যে সাড়া ফেলেছে এ ‘মানবতার দেয়াল’। চায়ের রাজ্যে চলতি মৌসুমে হাড়কাঁপানো শীতে এ দেয়ালের প্রতি ঝোঁক বেড়েছে হতদরিদ্র মানুষদের।
কমলগঞ্জের মিরতিংগা চা বাগানে সমাজসেবক ও ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) সদস্য ধনা বাউরীর প্রচেষ্টায় মানবতার দেয়ালে ঝুলছে অন্যের রেখে যাওয়া কাপড়।
নতুন বছরের শুরুতে সোমবার দুপুরে ধনা বাউরীর ব্যক্তিগত কার্যালয়ের সামনে মানবতার দেয়ালের কাছে গেলে দেখা যায়, কয়েকজন শীতার্ত মানুষ সেখান থেকে তাদের প্রয়োজনীয় কাপড় সংগ্রহের চেষ্টা করছেন। আবার কেউ কেউ তাদের অপ্রয়োজনীয় পুরোনো কাপড়ের সঙ্গে ভালো কাপড়ও রেখে যাচ্ছেন।
স্থানীয় বিত্তবান কয়েকজন জানান, মানুষের দৈনন্দিন জীবনের ব্যবহারের অতিরিক্ত এবং অপ্রয়োজনীয় অথচ ব্যবহারযোগ্য অনেক পোশাক ঘরে অকারণে ও অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে থাকে। এ পোশাকগুলো এখানে জমা দেয়া হলে চা শ্রমিকসহ সব শ্রেণি-পেশার শীতার্ত মানুষের উপকার হবে।
কাপড় সংগ্রহ করতে আসা চা শ্রমিক রাজভর অম্লীক বলেন, ‘আমরা দিন-দুঃখী মানুষ। শীত আইলে অনেক কষ্ট করি থাকা লাগে। সপ্তাহ শেষে যে টেকা পাই, তা দিয়া কোনোমতে সংসার চালাই লাই। সাতজনর সংসারও আমি একলা রোজগারি। ছেলে- মেয়ে স্কুলে পড়ে। তাদের পড়ালেখার পয়সাও জোগানি লাগে; আবার সংসারও চালানো লাগে।
‘জিনিসপত্রের যে দাম! কিছু হয় না আমাদের। খুব কষ্টে দিন কাটাই। এখন শীতকাল।’
তিনি আরও বলেন, ‘শীতও ভালা গরম কাপড় কিনতাম পারি না। মাইনষে কইল ওউ (এ) ওয়াল থাকি টেকা-পয়সা ছাড়া কাপড় নেয়া যাইব। তাই আইছি।
‘দেখি আমার বাচাকাচ্চার লাগি নিতার পারিনি। আমরার লাগি যারা এত সুন্দর একটা মহান কাজ করছইন, তারার লাগি ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করব।’
এ বিষয়ে উদ্যোক্তা ইউপি সদস্য ধনা বাউরী বলেন, ‘আমার সাধ্যমতো আমি সবসময় চা শ্রমিক ছাড়াও সকল শ্রেণি-পেশার মানুষকে সহযোগিতা করি। আজ মানবতার দেয়াল তৈরি করে সমাজের চা শ্রমিক, দরিদ্র ও হতদরিদ্র অবহেলিত মানুষের জন্য কিছু করতেই আমার এই সামান্য ক্ষুদ্র প্রয়াস। আমি আশা করি সমাজের বিত্তবান মানুষেরা তাদের অপ্রয়োজনীয় জামাকাপড় এসব দেয়ালে রেখে যাবেন।’
তিনি বলেন, “শীতে সুবিধাবঞ্চিত শিশুসহ নারী-পুরুষরা ও চা শ্রমিকরা কষ্ট পান। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কল্যাণে এই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়বে। সারা দেশের পাড়া-মহল্লায় যদি তরুণেরা একটি করে ‘মানবতার দেয়াল’ গড়ে তোলেন, তাহলে শীতে গরিব লোকজনকে ততটা কষ্টে পড়তে হবে না।”