খুলনার পাইকগাছা উপজেলার চাঁদখালী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক মুনসুর আলী গাজীর বিরুদ্ধে একটি পরিবারকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে।
ওই সময় তার সঙ্গে থাকা ২০ থেকে ২৫ জন লোক ওই বাড়ির লোকজনকে বেঁধে রেখে মারধর করে ঘরে তালা লাগিয়ে দেয় বলেও অভিযোগ পাওয়া যায়।
পরিবারটির ভাষ্য, আওয়ামী লীগ নেতা ও তার সঙ্গীরা বৃহস্পতিবার দুপুর আড়াইটা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৫টা পর্যন্ত তাণ্ডব চালান। বাড়ির একটি ঘর, সীমানার বেড়া ভাঙচুর করেন তারা। শীতের মধ্যে রাতভর পরিবারের সবাইকে ঘরের বাইরে রাখেন। পরে বৃহস্পতিবার রাত ১টার দিকে পুলিশ গিয়ে ঘরের তালা খুলে দেয়।
পরিবারটি আরও জানায়, বাড়ির স্নাতক প্রথম বর্ষের তরুণীকে বেঁধে রেখে নির্যাতন করা হয়।
গত বৃহস্পতিবার চাঁদখালী ইউনিয়নের বিষ্ণুপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। বর্তমানে বাড়ির মালিক আবদুল গফুর শেখ পাইকগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন। আওয়ামী লীগ নেতা মুনসুর গাজী ওই ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান।
বাড়ির মালিক আবদুল গফুর শেখ বলেন, ‘বৃহস্পতিবার দুপুর আড়াইটার দিকে পুকুরে মাছ ধরছিলাম। এমন সময় মুনসুর গাজী ২০ থেকে ২৫ জন লোক ও তিনটি ট্রলি নিয়ে বাড়ির সীমানা বেড়া ভেঙে প্রবেশ করেন। বাড়ির মধ্যে ঢুকেই তাণ্ডব শুরু করেন তারা। ওই সময় বাধা দিতে গেলে স্নাতক প্রথম বর্ষে পড়ুয়া আমার মেয়ের মোবাইল কেড়ে নিয়ে ঘরের মধ্যে দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখেন তারা। ওই সময় চিৎকার শুনে আমি বাড়ি আসতেই আমাকে মারধর করেন মুনসুরের লোকজন। পরে আমাকেও একটি গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখা হয়।
‘ঘরের মধ্যে থাকা আমার মা ও শাশুড়িকে বের করে দিয়ে ঘরে তালা ঝুলিয়ে দেয়া হয়। বাড়ির কাজের জন্য নিয়ে আসা ইট ট্রলিতে করে নিয়ে যায় মুনসুর গাজীর লোকজন। শত শত মানুষ আমাদের ওপর হওয়া ওই নির্যাতন প্রত্যক্ষ করলেও কেউ এগিয়ে আসেননি। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৫টার দিকে আমাদের সেখান থেকে ছেড়ে দেয়া হয়।’
তিনি বলেন, ‘ওই ঘটনার পর পাইকগাছা থানায় সাহায্যের জন্য গেলেও আমাদের কোনো সাহায্য করা হয়নি। চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা পর অভিযোগ না নিয়ে পুলিশ এসে বাড়ির তালা খুলে দেয়। ওই সময় বাড়িতে থাকা মুনসুর গাজীর তিনজন লোককে আটক করে নিয়ে যায় পুলিশ।’
আবদুল গফুর শেখের মেয়ে বলেন, ‘একটা কুকুরকে যেভাবে মারধর করা হয়, আমাদের সেভাবে নির্যাতন করা হয়েছে। পুরুষরা আমাকে টেনেহিঁচড়ে বিভিন্নভাবে নির্যাতন করেছেন।’
চাঁদখালী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান শাহজাদা মো. আবু ইলিয়াস বলেন, ‘জমিজমা সংক্রান্ত ব্যাপার নিয়ে গফুর শেখের পরিবারকে মারধর করে ঘর থেকে বের করে দেয়া হয়েছে। ওই জমি নিয়ে বর্তমানে আদালতে মামলা চলছে।’
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মুনসুর আলী গাজী দাবি করেন, ২০১৭ সালে ওই জমি কেনার জন্য বায়নাপত্র দিয়ে দখলে নেন গফুর শেখ। পরে তিনি আর টাকা পরিশোধ করতে পারেননি। এ কারণে জমির মালিক জমিটি তার কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন। তারা ওই জমিতে ঘর করতে গিয়েছিলেন। সেখানে কাউকে মারধর করা বা ঘরে তালা দেয়ার ঘটনা ঘটেনি।
এ বিষয়ে জানতে পাইকগাছা থানার ওসি ওবায়দুর রহমানকে একাধিকবার মোবাইল ফোনে কল করেও পাওয়া যায়নি।
পাইকগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ আল-আমিন বলেন, ‘ওই পরিবারকে মারধর করে ঘর থেকে বের করে দেয়ার ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেছে। ইতোমধ্যে দুইজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। থানায় মামলাও নেয়া হয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্যাপারটিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে।’