গণতান্ত্রিক বিশ্বের নিষেধাজ্ঞার খড়গ এবং অনিবার্য পতন থেকে আত্মরাক্ষায় সরকার ভোটার হান্টিং মিশনে নেমেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেছেন, ‘ছলে বলে কৌশলে ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে আনার জন্য মরিয়া তারা। ভোটকেন্দ্রে না গেলে হত্যা, গ্রাম ছাড়া করার হুংকার দেয়া হচ্ছে। কোনো কোনো প্রার্থী হুমকি দিচ্ছে, ভোটকেন্দ্রে না গেলে নাগরিক সুবিধা বাতিল করা হবে। কিন্তু এত কিছুর পরও কেউ ভোটকেন্দ্রে যাবে না। অনিবার্য পতন অপেক্ষা করছে শেখ হাসিনা এবং মাফিয়াচক্রের জন্য।’
শুক্রবার (২৯ নভেম্বর) সন্ধ্যায় এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে রিজভী এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, ‘২০১৮ সালে আওয়ামী লীগ ঘোষিত নির্বাচনি ইশতেহারের মূল কথা ছিল- সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ। আসলে গত ৫ বছর তারা তাদের নিপীড়ন, খুন-গুম-দুর্বৃত্তায়ন, দুর্নীতি, লুটপাট আর দুঃশাসনের অগ্রযাত্রা হয়েছে। ২০০৮ সালের নির্বাচনি ইশতেহারকে ‘দিন বদলের সনদ’ ঘোষণা করে গত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ ও তাদের লোকজনের দিন বদল করেছে। দলীয়করণের আরেক চূড়ান্ত রূপ প্রশাসনের প্রতিটি স্তর। দেশটা যেন একটি দলের, বাকিরা সব বহিরাগত; জীবনযাত্রাকে করে তুলেছে বিভীষিকাময়।’
তিনি বলেন, ‘এবার যে ইশতেহার ঘোষণা করেছে তার মূল উপজীব্য বিষয় হলো- স্মার্ট বাংলাদেশ। তাদের স্মার্ট বাংলাদেশ হলো স্মার্ট লুটপাট, স্মার্ট শ্মশান। এবারের ইশতেহারে দুর্নীতিবাজদের অর্থ-সম্পদ বাজেয়াপ্তের অঙ্গীকার করেছে দুর্নীতিবাজ সরকার। তার মানে এবার যতটুকু লুটপাট করে খেতে বাকি ছিল সেটুকুও চেটেপুটে খাওয়ার টার্গেট নিয়েছে। কারণ শেখ হাসিনার মজ্জাগত স্বভাব হলো- তিনি যা বলেন, করেন ঠিক তার উল্টোটা।’
‘৯৯ নয়, ১০০ শতাংশ নিশ্চিত করতে পারি এবার আর আগের রাতে ভোট হবে না। এ জন্য অনেক কেন্দ্রই ব্যালট পেপার সকালে যাবে’- গত ২৬ ডিসেম্বর প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল মতবিনিময় সভায় যে বক্তব্য রেখেছেন সে বিষয়ে রিজভী বলেন, ‘সিইসি স্বীকার করেছেন যে, ২০১৮ সালে রাতে ভোট হয়েছিল। তার এমন বক্তব্যের পর রাতের ভোট নিয়ে এতদিন যে বিতর্ক ছিল, তা বন্ধ হবে। শুধু সিইসি নয়, ৭ জানুয়ারি নির্বাচনকে সামনে রেখে বহু এলাকায় ডামি প্রার্থী ও তাদের সমর্থকরাই প্রকাশ্যে স্বীকার করছেন- কীভাবে ২০১৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর রাতে ভোট ডাকাতি করেছিল।’
বিএনপির জ্যেষ্ঠ এ নেতা বলেন, ‘এবার দেশের সমস্ত সচেতন মানুষ জানেন, দিনের বেলায় প্রকাশ্যে ৫৭ সেকেন্ডে ৪৩টি সিল মারার ভোট হবে। প্রার্থী সবাই তো একদলীয়- ‘আমরা আর মামুরা’। জেলায় জেলায় আগে ব্যালট পেপার পাঠানোর মানে নৌকায় সিল মেরে আগেই বাক্সটা ভরে সকালে কেন্দ্রে পাঠাতে সুবিধা হবে। তারপর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের ঘোষণামতো ৭০ পার্সেন্ট ভোট কাস্ট হয়েছে দেখিয়ে গণভবনের তালিকা অনুযায়ী ফলাফল ঘোষণা করবে।’
সিইসিকে উদ্দেশ্য করে রিজভী বলেন, ‘যদি ন্যূনতম মনুষ্যত্ব থাকে তাহলে এই প্রহসনের পাতানো ডামি নির্বাচন বন্ধ করুন; পদত্যাগ করুন। নইলে যারা রাতের ভোট করেছিলেন তাদের মতো আপনাদেরও বিচার একদিন হবেই।’
তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘অবৈধ ক্ষমতার মেয়াদ বাড়াতে পূর্বনির্ধারিত ফলাফল ঘোষণার পাতানো ডামি নির্বাচন ঘিরে দেশে এক অকল্পনীয় ভয়ঙ্কর অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি করা হয়েছে। বন্দুক-পিস্তল, রামদা, রড, জিআই পাইপ, হকিস্টিকসহ দেশীয় অস্ত্র উঁচিয়ে প্রকাশ্যে মিছিল করছে তারা। নৌকা-ডামি, আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী, প্রশাসন, রাষ্ট্রযন্ত্র প্রিসাইডিং অফিসার- সব আওয়ামীময়-একাকার হয়ে গেছে। গণতান্ত্রিক বিশ্বের নিষেধাজ্ঞার খড়গ থেকে বাঁচতে পুরো মাফিয়াচক্র গলদঘর্ম হয়ে পড়েছে ভোটার হান্টিং মিশনে, কিন্তু ভোটকেন্দ্রে ভোটার আসবে এমন নিশ্চয়তা পাচ্ছে না।’
রিজভী বলেন, ‘বহু এলাকায় আগামী ৭ জানুয়ারি একতরফা নির্বাচন নিয়ে প্রার্থীদের মাঝেও কোনো আগ্রহ নেই। নোয়াখালী-২ আসনে নৌকার প্রার্থী মোরশেদ আলমের মতো কোনো কোনো স্থানে প্রার্থীরা ভোট চাইতে গিয়ে জুতাপেটা খাচ্ছেন।
‘প্রতিটি জনপদের মানুষ প্রার্থী আর তাদের সমর্থক এবং প্রশাসনের দলবাজ কর্মকর্তাদের প্রকাশ্য হুমকি-ধামকিতে সন্ত্রস্ত। ভোটকেন্দ্রে না গেলে হত্যা, গ্রাম ছাড়া করার হুংকার দেয়া হচ্ছে। কোনো কোনো প্রার্থী হুমকি দিচ্ছে, ভোটকেন্দ্রে না গেলে নাগরিক সুবিধা বাতিল করা হবে। ভোট না দিলে মসজিদ-কবরস্থান বন্ধ করার হুমকি দেয়া হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সরকার যত যাই করুক, কেউ ভোটকেন্দ্রে যাবে না। অনিবার্য পতন অপেক্ষা করছে শেখ হাসিনা এবং মাফিয়াচক্রের জন্য। ৭ জানুয়ারি জনগণ শেখ হাসিনাকে লাল কার্ড দেখিয়ে বিদায় করবে।’