ইন্দ্রজিতের ছোট্ট মাটির বাড়িটি এখন রং-তুলির ছোঁয়াতে হয়ে উঠেছে রঙিন, পেয়েছে নবপ্রাণ নানান রকম আল্পনা, গ্রাফিতি ও শিল্পকর্ম শোভা পাচ্ছে ঘরটির দেয়ালে দেয়ালে।
নিজেদের হাতের কাজের মাধ্যমে মাটির ঘরটিকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলেছেন কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) চারুকলা বিভাগের কিছু শিক্ষার্থী। পকেটমানির টাকা বাঁচিয়ে নিজেদের উদ্যোগেই ইন্দ্রজিৎ সাহার বাড়িটিকে নতুন রূপ দিয়েছেন তারা।
ভ্যানচালক ইন্দ্রজিতের বাড়ি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্শ্ববর্তী ত্রিবেণী বাজারে।
বাড়িটির একাধিক ঘরের মোট আটটি দেয়ালে হয়েছে শিল্পকর্মের কাজ। বিভিন্ন দেয়ালে শোভা পাচ্ছে নানান ডিজাইনের আল্পনা। বাড়ির দরজা ও জানালাগুলোকে আকর্ষণীয় করে তুলতে ব্যবহার করা হয়েছে একাধিক রং। একটি ঘরের সদর দেয়ালে দেখা যাচ্ছে হিন্দু ধর্মের শ্রীকৃষ্ণ এবং দেবীর প্রতিকৃতি। পাশাপাশি অন্য দেয়াল সাজানো হয়েছে মাছ, পালকি, গ্রামীণ বধূ এবং হরেকরকম গ্রাফিতি দিয়ে।
শিক্ষার্থীরা জানান, চারুকলা বিভাগের সিনিয়র ও জুনিয়র শিক্ষার্থীদের চায়ের আড্ডায় হুট করেই সিদ্ধান্ত হয় ইন্দ্রজিৎ সাহার বাড়িতে আল্পনা তৈরির। ২০২০-২১ সেশনের শিক্ষার্থী সুদিপ রয়, মিষ্টি, হিমিকা, ২১-২২ সেশনের সজল, প্রমি, নুসরাত ঐশি, নেহা ও ২২-২৩ সেশনের প্রণয় অন্ত, মাহমুদ নাহিন, শাহেদ বিশ্বাস, অর্ক, জুবায়ের, দীনবন্ধু রায় দেবা, প্রাপ্তি, যুক্তা জ্যোতি, সুমি, শিমু, কবিতা, তাসনিমসহ আরও অনেকে মিলে হাতখরচের টাকা জমিয়ে নিজ অর্থায়নে বিশ্ববিদ্যালয়ের শীতকালীন অবকাশ শুরু হওয়ার পরদিন নেমে পড়েন বাড়িটি রং তুলির আঁচড়ে ফুটিয়ে তুলতে।
সকাল ৭টা থেকে কাজ শুরু করে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে এই আল্পনা তৈরির কাজ।
পুরো বিষয়টির তত্ত্বাবধানে থাকা চারুকলা বিভাগের ২০-২১ শিক্ষাবর্ষের সুদিপ রায় বলেন, ‘ইবির চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে রং-তুলি হাতে একটা ছোট্ট যুদ্ধ ছিল এটি। ভিন্নধর্মী কিছু করার ইচ্ছা থেকেই এই শিল্পকর্ম করা হয়, যা আমাদের জুনিয়রদের সঙ্গে পরবর্তী সময়ে বড় পরিসরে কাজ করার অনুপ্রেরণা যোগাবে। বাড়িটিতে রং-তুলির আঁচড় ফুটিয়ে তুলতে পেরে আমাদেরও ভালো লাগছে।’
২১-২২ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র সজল বলেন, ‘কিছুদিন আগে চারুকলা বিভাগের কয়েকজন মিলে ফোকলোর স্টাডিজ বিভাগের প্রোগ্রামের সমস্ত সাজ ও আল্পনার কাজ করি। সেখান থেকে মনে হলো অল্প কয়জনেই এত কাজ করলে, আরও কিছু শিক্ষার্থী যুক্ত হলে আরও অনেক কাজ করতে পারব। বিষয়টি সিনিয়র জুনিয়রদের জানালে সঙ্গে সঙ্গেই সবাই কাজ করতে রাজি হয়ে যায়।
‘এর পর প্রয়োজনীয় রং, তুলি, মগ ইত্যাদি সরঞ্জামের ব্যবস্থা করে কাজে লেগে যাই। দিনব্যাপী শ্রমের মাধ্যমে সুন্দর কারুকার্য সম্পন্ন হয়েছে।’
২০২২-২৩ সেশনের ছাত্র প্রণয় বলেন, ‘হঠাৎ গল্পে গল্পেই এমন একটি কাজের উদ্যোগ নেয়া হয়। আমরাও অনেক আগ্রহী ছিলাম।’
ভ্যানচালক ইন্দ্রজিৎ সাহা বলেন, ‘অনেকদিন থেকেই ছেলে-পেলেদের সঙ্গে আমার চেনাজানা। কয়দিন আগে বলল যে, আমার বাড়িতে ওরা আঁকাআঁকি করবে। তো আমিও রাজি হয়ে যাই। পরে ওরা এসে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কাজ করে আমার বাড়ির দেয়াল সাজিয়ে দেয়।
‘নিজের বাড়ির দেয়ালে এত সুন্দর শিল্পকর্ম দেখে নিজের মধ্যেই ভালো লাগা কাজ করছে। সাজানো দেখে বাড়ির বাচ্চারাও খুব খুশি। অনেকেই আমার বাড়ি দেখতে আসতেছে, এটা আমার কাছে খুবই ভালো লাগে।’