বায়ুদূষণের ভয়াবহতা থেকে ঢাকাবাসীকে রক্ষায় সতর্কতা বা অ্যালার্ট সিস্টেম চালু করতে পরিবেশ অধিদপ্তরকে চিঠি পাঠানো হয়েছে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) উচ্চ আদালতের নির্দেশনা কার্যকর করতে বৃহস্পতিবার পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর এ চিঠি পাঠায়।
চিঠিতে বলা হয়, ‘২২ মিলিয়নের (দুই কোটি ২০ লাখ) অধিক লোকের আবাসনদাতা রাজধানী ঢাকা আন্তর্জাতিক ও জাতীয় বিভিন্ন সূচকে পরিবেশগত মানদণ্ডে পিছিয়ে রয়েছে। পৃথিবীর অযোগ্য শহরগুলোর তালিকায় ঢাকার অবস্থান সপ্তম। ঢাকা নগরীর বাতাস প্রায়শই বিশ্বে শীর্ষ দূষিত বাতাস হিসেবে চিহ্নিত হয়, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকিস্বরূপ। ঢাকার বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে বেলা একটি জনস্বার্থে মামলা করে।
‘সেই মামলার শুনানি নিয়ে নিয়ে ২০২২ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণ ও জনস্বাস্থ্য রক্ষায় বিবাদীগণের ব্যর্থতা কেন বেআইনি, আইনগত কর্তৃত্ব-বহির্ভূত ও জনস্বার্থ পরিপন্থি ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন। একই সঙ্গে একটি সময়াবদ্ধ কর্মপরিকল্পনার মাধ্যমে বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণ এবং বায়ুর মান উন্নয়নের নির্দেশ কেন প্রদান করা হবে না, তাও জানতে চাওয়া হয়। পাশাপাশি বায়ুদূষণের প্রধান উৎসসমূহ চিহ্নিতকরণ ও তা হ্রাসের সময়াবদ্ধ কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন এবং অস্বাস্থ্যকর, অতি অস্বাস্থ্যকর ও বিপজ্জনক বায়ু থেকে জনসাধারণকে রক্ষায় অ্যালার্ট সিস্টেম চালুর নির্দেশ দেয় উচ্চ আদালত।’
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, ‘বায়ুদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা, ২০২২-এর বিধি ১৩(৫) অনুযায়ী বায়ুদূষণের মাত্রা বৃদ্ধি পেয়ে স্বাস্থ্যগত বিবেচনায় অত্যন্ত ক্ষতিকর পর্যায়ে উপনীত হলে পরিবেশ অধিদপ্তর উপযুক্ত মাধ্যমে জনগণকে সতর্কীকরণ বার্তা প্রদান করবে এবং জনগণকে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য সুরক্ষামূলক ব্যবস্থাদি গ্রহণের পরামর্শ প্রদান করবে। একই বিধিমালার বিধি ১৫ অনুযায়ী বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত জাতীয় কমিটি গঠনের বিষয় উল্লেখ রয়েছে।
‘এ কমিটির অন্যতম কার্যাবলীর মধ্যে রয়েছে কোনো শহর, অঞ্চল বা নির্দিষ্ট স্থানের বায়ুদূষণের মাত্রা অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর পর্যায়ে উপনীত হলে উক্ত শহর, অঞ্চল বা স্থানে জনসাধারণের চলাচলের ওপর সতর্কতা আরোপের বিষয়ে সরকারকে পরামর্শ প্রদান করা ও বায়ুদূষণ সৃষ্টিকারী যে কোনো উৎসের চলাচল ও কার্যক্রমের উপর বিধিনিষেধ আরোপ করার নির্দেশনা প্রদান করা।’
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও যুক্তরাষ্ট্রের পরিবেশবিষয়ক সংস্থা ইপির হিসাব তুলে ধরে চিঠিতে বলা হয়, “কোনো শহরের বায়ুর মানের সূচক ১৫১-২০০ হলে তাকে অস্বাস্থ্যকর বলা হয়। এটি বিশেষ শ্রেণির নগরবাসীর স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। যেমন: শিশু, বৃদ্ধ ও বক্ষব্যাধিতে আত্রান্ত ব্যক্তিগণ। বায়ুর মান বা একিউআই স্কোর ২০১ থেকে ৩০০ হলে তা খুবই অস্বাস্থ্যকর এবং তা স্বাস্থ্য জরুরি অবস্থা হিসেবে বিবেচিত হয়। এ অবস্থায় শিশু, প্রবীণ ও অসুস্থ রোগীদের বাড়ির ভেতরে এবং অন্যদের বাড়ির বাইরের কার্যক্রম সীমাবদ্ধ রাখার পরামর্শ দেয়া হয়ে থাকে। বায়ুর মান তিন শর বেশি থাকা মানে ওই স্থানের বায়ু ‘বিপজ্জনক’ যা সবার জন্য ক্ষতিকর।
“অথচ গত ২৭ ডিসেম্বর ঢাকা বায়ুদূষণের শীর্ষ নগরী হিসেবে চিহ্নিত হয় যেখানে বায়ুর মান ছিল ৩২৫। এ অবস্থায়ও উচ্চ আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী ক্রমাগত অস্বাস্থ্যকর, অতি অস্বাস্থ্যকর ও বিপজ্জনক বায়ু সেবন থেকে জনসাধারণকে রক্ষায় কোনো রকম সতর্কতা বা অ্যালার্ট সিস্টেম চালু করা হয়নি, যা আইন ও আদালতের আদেশের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন ও আদালত অবমাননার শামিল।”
চিঠিতে জরুরি ভিত্তিতে ঢাকা সতর্কতা জারি করতে বলা হয়েছে।