পাবনা-৩ আসনে (চাটমোহর, ভাঙ্গুড়া, ফরিদপুর) নৌকার প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনি প্রচারে অংশগ্রহণ করায় ৯ শিক্ষককে শোকজ করেছে নির্বাচনি অনুসন্ধান কমিটি। এদের অধিকাংশ জনই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্বাচনি পরিচালনায় বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করবেন।
বৃহস্পতিবার দুপুরে পাবনা-৩ আসনের জন্য গঠিত নির্বাচনি অনুসন্ধান কমিটি প্রধান এবং যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ প্রথম আদালতের বিচারক তাজউল ইসলাম শোকজের চিঠি প্রদানের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এদিন সকালে প্রত্যেককে পৃথকভাবে পাঠানো শোকজ চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘আপনি (আপনারা) একজন শিক্ষক হয়ে আওয়ামী লীগ মনোনীত সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী মকবুল হোসেনের পক্ষে নৌকা প্রতীকের সমর্থনে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর হতে প্রকাশ্যে নির্বাচনি প্রচার পরিচালনা করছেন। এ বিষয়ে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য পদপ্রার্থীর (ট্রাক প্রতীক) প্রধান এজেন্ট মো. আব্দুল ওয়াহিদ নিম্ন স্বাক্ষরকারী বরাবরে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করলে তার প্রেক্ষিতে সরেজমিনে অনুসন্ধান করে আপনার (আপনাদের) বিরুদ্ধে প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োজিত একজন শিক্ষক হিসেবে নৌকা প্রতীকের পক্ষে সরাসরি প্রচারাভিযানসহ ভোট প্রার্থনার বিষয়ে অভিযোগের সত্যতা আপতদৃষ্টে প্রতীয়মান হয়েছে, যা একটি নির্বাচন-পূর্ব অনিয়ম। আপনার (আপনাদের) এমন কাজ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে নির্বাচনি এলাকা পাবনা-৩ (চাটমোহর, ভাঙ্গুড়া, ফরিদপুর) অধিক্ষেত্রের মধ্যে সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা-২০০৮-এর বিধি ১৪(২)-এর লঙ্ঘন মর্মে দৃষ্ট হয়। এমন আইনভঙ্গের কারণে কেন আপনার (আপনাদের) বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, সে মর্মে আগামী ৩১ ডিসেম্বর সকাল ১১টায় সশরীরে রিটার্নিংক কর্মকর্তার খাস-কামরায় উপস্থত হয়ে আপনি নিজে অথবা প্রতিনিধির মাধ্যমে লিখিতভাবে ব্যাখ্যা প্রধান করতে নির্দেশ প্রদান করা হলো।’
শোকজপ্রাপ্তরা হলেন- ভাঙ্গুড়ার মাদারবাড়ীয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. আলমগীর হোসেন, সুলতানপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. হাসানুজ্জামান স্বপন, খানমরিচ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সকারী শিক্ষক মো. আব্দুল সোবাহান, চকদিগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সকারী শিক্ষক মো. রফিকুল ইসলাম, চন্ডিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সকারী শিক্ষক মো. মিজানুর রহমান, সুলতানপুর আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের সকারী শিক্ষক মো. শহিদুল ইসলাম, পুকুরপাড় আইডিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের সকারী শিক্ষক মো. জিয়াউর রহমান, একই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রওশন আলী এবং মন্ডতোষ নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. ফারুক আহম্মেদ।
এ বিষয়ে ট্রাক প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুল হামিদ মাস্টার বলেন, ‘নির্বাচনের শুরু থেকেই নৌকার সমর্থকরা একের পর এক আচরণবিধি লঙ্ঘন করেই চলেছে। তারা বিভিন্ন সময় আমার লোকজনকে হুমকি-ধামকি ও মারধর করছে। আমার নির্বাচনি অফিস ভাঙচুর করা হয়েছে ও পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে। এমনকি ভোটকে প্রভাবিত করতে নৌকার প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছেন প্রশাসনের অনেকেই। এর মধ্যে শিক্ষকরাও রয়েছেন, যারা ভোটের দিন বিভিন্নভাবে নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্বে থাকবেন। এরকম পরিস্থিতি চলতে থাকলে সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। এসব বিষয়ে নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসনের কাছে সহায়তা চেয়ে আমি লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।’
এ বিষয়ে বক্তব্য নিতে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মকবুল হোসেনের সঙ্গে মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করেও কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
এ ব্যাপারে অভিযুক্তদের একজন ও নির্বাচনে সহকারি প্রিসাইডিং অফিসারের দায়িত্ব পাওয়া পুকুড়পাড় আইডিয়াল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রওশন আলী বলেন, ‘আমি এমন কোনো চিঠি এখনও পাইনি। কেউ হয়ত ষড়যন্ত্রমূলকভাবে অভিযোগ দিতে পারেন। এসব অভিযোগ মিথ্যা, সঠিক নয়। নির্বাচনে সহকারী প্রিসাইডিং অফিসারের দায়িত্ব পেয়েছি, কিন্তু কেন্দ্র এখনও বণ্টন করা হয়নি।’