মাদারীপুর-৩ আসনে ভোট কেন্দ্রে দায়িত্ব পাওয়া শিক্ষকদের নিয়ে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর পক্ষে বৈঠক করায় ৩৫ জন শিক্ষককে তাদের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার সকাল ৯টার দিকে মাদারীপুর-২ (রাজৈর ও সদরের একাংশ) আসনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী সংসদ সদস্য শাজাহান খানের বাসভবনে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সদর উপজেলা চেয়ারম্যান এবং ইউপি চেয়ারম্যানরাও সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ওই সভার একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে। ৩ মিনিট ৩ সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে দেখা যায়, মাদারীপুর-৩ (কালকিনি-ডাসার ও সদরের একাংশ) আসনে ভোট কেন্দ্রে দায়িত্ব পাওয়া শিক্ষকদের উদ্দেশে মাদারীপুর সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও সাবেক নৌমন্ত্রী শাজাহান খানের ছোট ভাই ওবায়দুর রহমান খান বক্তব্য দিচ্ছেন।
ওবায়দুর রহমান খানকে তার বক্তব্যে বলতে শোনা যায়, ‘আপনাদের প্রাণপ্রিয় নেতা শাজাহান খান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দ্বারা নির্দেশিত হয়েছেন তিনের (মাদারীপুর-৩) আসনের ওপর গুরুত্ব দেয়ার জন্য এবং তিনের (মাদারীপুর-৩) প্রচার চালানোর জন্য। সেই হিসেবে আমরা কিন্তু তিনের (মাদারীপুর-৩) উপরে বেশি দায়িত্ব পালন করতেছি।
‘আপনারাও তিনে (মাদারীপুর-৩) সেইভাবে দায়িত্ব পালন করবেন। তিনে (মাদারীপুর-৩) যদি আমার গোলাপ ভাইকে নির্বাচিত করতে পারি তাহলে দাদায় (শাজাহান খান) ও গোলাপ ভাই মিলে দীর্ঘদিনের জন্য মাদারীপুরকে স্থিতিশীলতায় নিয়ে আসতে পারবে।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন শিক্ষক জানান, নির্বাচনের বিষয়ে সভার কথা বলে উপজেলা চেয়ারম্যান হঠাৎ আমাদেরকে তাদের বাসায় ডেকেছেন। তিনি আমাদের মাদারীপুর সদর উপজেলা শিক্ষক সমাজের সভাপতি। সভাটি হওয়ার কথা ছিল উপজেলা পরিষদে। কিন্তু সেটা না হয়ে এমপি মহোদয়ের (শাজাহান খান) বাসায় মিটিং হয়েছে।’
এ বিষয়ে মাদারীপুর-৩ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী তাহমিনা বেগমের সমর্থক ও কালকিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তৌফিকুজ্জামান শাহিন বলেন, ‘মাদারীপুর-২ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী শাজাহান খান তার নির্বাচনী এলাকার পছন্দের শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের প্রিসাইডিং ও পোলিং এজেন্ট করার চেষ্টা করছেন। সদর উপজেলার ৫টি ইউনিয়ন আমাদের মাদারীপুর-৩ আসনের মধ্যে পড়েছে। তাই তিনি সেখানে নিজের প্রভাব বিস্তার করে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করছেন।’
তৌফিকুজ্জামান শাহিন বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে শাজাহান খানের নির্বাচনী এলাকার কোনো লোককে প্রিসাইডিং ও পোলিং এজেন্ট হিসেবে নিয়োগ করা যাতে না হয় সেজন্য নির্বাচন কমিশনে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।’
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মাসুদ করিম এ বিষয়ে বলেন, ‘যারা ওই মিটিংয়ে ছিলেন তাদের সবাইকে আমাদের জেলা স্যার শোকজ করেছেন। এ বিষয়ে স্যার ভালো বলতে পারবেন।’
জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আহমদ আলী বলেন, ‘বিষয়টি রিটার্নিং কর্মকর্তার নজরে আসার সঙ্গে সঙ্গে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে অবগত করা হয়েছে। আগামী দুদিনের মধ্যে তদন্ত করে সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে। একইসঙ্গে সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের নির্বাচনের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।’