বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

রিপন-বুবলীর ভোটযুদ্ধের ফাঁকে লাঙ্গলের আশা

  •    
  • ২৫ ডিসেম্বর, ২০২৩ ১৪:৪৭

বিএনপি না থাকা এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে অংশ নেয়ার সুযোগ দিলে সেই সুযোগ লুফে নেন রাব্বী কন্যা বুবলী।

গাইবান্ধা-৫ আসনের (ফুলছড়ি-সাঘাটা) ছয় প্রার্থীর মধ্যে সবচেয়ে সরব ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নৌকা ও দলটিরই স্বতন্ত্র ট্রাক প্রতীকের প্রার্থী। এই দুই প্রার্থীর হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাসের মধ্যে পার পাওয়ার সুযোগ খুঁজছেন জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী।

স্থানীয় নেতা-কর্মী ও সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থী মাহমুদ হাসান রিপন ও স্বতন্ত্র প্রার্থী ফারজানা রাব্বী বুবলীর (ট্রাক) মধ্যেই হবে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা। তবে সরব প্রচারণায় না থাকলেও কৌশলে তীরে তরী নেয়ার চেষ্টা করছেন জাতীয় পার্টি সমর্থিত আতাউর রহমান আতা (লাঙ্গল)।

আসনটির বর্তমান এমপি মাহমুদ হাসান রিপন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি। আর ফারজানা রাব্বী বুবলী ফুলছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জাতীয় সংসদের প্রয়াত ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়ার মেয়ে। তিনি এই নির্বাচনে আওয়ামী ললীগের মনোনয়ন চেয়ে পাননি।

এ ছাড়াও এ আসন থেকে লড়বেন বিকল্পধারার জাহাঙ্গীর আলম (কুলা), ন্যাশনাল পিপলস পার্টির ফারুক মিয়া (আম) ও শামসুল আজাদ শীতল (ঈগল)।

জাপার এক সময়ের দুর্গ

গাইবান্ধা-৫ আসনটি জাতীয় পার্টির দুর্গ হিসেবে পরিচিত হলেও ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের কাছে আসনটি হারায় তারা। তখন থেকেই এ আসন আওয়ামী লীগের দখলে।

ভোটাররা বলছেন, হেভিওয়েট তিন প্রার্থীর মধ্যে আওয়ামী লীগেরই দুইজন প্রার্থী। তাদের মধ্যে দলগত প্রকাশ্য শত্রুতা দীর্ঘদিনের। ফলে আওয়ামী লীগ এ আসনে দুই ভাগে বিভক্ত। ভোটের লড়াইয়ে দুজনেই শক্ত অবস্থানে রয়েছেন। ভোটের মাঠে মূল যুদ্ধটা হবে নৌকা-ট্রাকে।

আসনটির দুই উপজেলাতেই আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা দুইভাগে বিভক্ত হয়ে ওই দুই প্রার্থীর সাথে প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন। উঠান বৈঠক, বিভিন্ন হাট-বাজার, চায়ের দোকান বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটারদের বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোট প্রার্থনা করছেন। নদী বেষ্টিত ফুলছড়ির দুর্গম চরাঞ্চলেও নৌকায় গিয়ে বিভিন্নভাবে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন এই দুই প্রার্থী।

এক সময়ের জাতীয় পার্টির এই দুর্গে এবার নৌকা ও ট্রাকের ভোটের প্রচার-প্রচারণা ব্যাপকভাবে চললেও প্রচারণায় খুব একটা সরব দেখা যাচ্ছে না লাঙ্গলকে।

তবে জাপার একাধিক নেতা-কর্মীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ভোটের প্রচারণায় তুলনামূলক সরব কম থাকলেও অনেকটা কৌশলে প্রচারণা চালাচ্ছে লাঙ্গল। নৌকা-ট্রাকের ভোটযুদ্ধের সমীকরণে এদিক-ওদিক হলেই সেই সুযোগটিই কাজে লাগাতে চায় জাতীয় পার্টি।

এ আসনে জাতীয় পার্টি মনোনীত প্রার্থী আতাউর রহমান আতা। তিনি জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা ও গাইবান্ধা জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান।

আতাউর রহমান আতা নিউজবাংলাকে বলেন, গাইবান্ধা-৫ আসনটি জাতীয় পার্টির দুর্গ। বিভিন্ন কারণে দীর্ঘদিন থেকে আসনটি আমাদের হাতছাড়া রয়েছে। এবারের নির্বাচনে আসনটি জাতীয় পার্টির পুনরুদ্ধার হবে।

প্রকাশ্য দ্বন্দ্ব ও বিভক্ত আ.লীগ

গাইবান্ধা-৫ এ আসনে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব প্রকাশ্য রুপ নেয় ২০০৮ সালে। জাতীয় নির্বাচনের মনোনয়নকে কেন্দ্র করে সাবেক সংসদ সদস্য ফজলে রাব্বী মিয়া এবং বর্তমান সাংসদ মাহমুদ হাসান রিপনের মধ্যে বিভাজন শুরু হয় তখন। এর পর থেকেই এই আসনে আওয়ামী লীগের প্রকাশ্য দুটি অংশ, যা ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বীর মৃত্যুর পরও চলমান রয়েছে।

স্থানীয় সূত্র জানায়, ফজলে রাব্বী মিয়া ১৯৮৬ সালের তৃতীয়, ১৯৮৮ সালের চতুর্থ, ১৯৯১ সালের পঞ্চম, ১৯৯৬ সালের সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির মনোনয়ন নিয়ে গাইবান্ধা-৫ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

এরপর দল পরিবর্তন করে আওয়ামী লীগে যোগ দেন ফজলে রাব্বী মিয়া। পরে ২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন চান তিনি। অন্যদিকে ওই আসন থেকে তখন মনোনয়ন চান আওয়ামী লীগের দুঃসময়ের (২০০৬ সালের ৪ এপ্রিল থেকে ২০১১ সালের ১১ জুলাই) কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি মাহামুদ হাসান রিপন। এই মনোনয়নকে কেন্দ্র করে তাদের দুজনের মধ্যে প্রকাশ্য দ্বন্দ্ব শুরু হয়। এ নিয়ে দলের কর্মী-সমর্থকরাও বিভক্ত হয়ে পড়েন।

পরে ২০০৮ সালের ওই নির্বাচনে দল ফজলে রাব্বীকে মনোনয়ন দিলে তিনি সাংসদ নির্বাচিত হন। এ ছাড়া পরে ২০১৪ সালের দশম ও ২০১৯ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। একই সঙ্গে দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদে টানা দ্বিতীয় মেয়াদে ডেপুটি স্পিকারের দায়িত্ব পালন করেন ফজলে রাব্বী মিয়া।

আসনটির সাতবারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য ফজলে রাব্বী মিয়া ২০২২ সালের ২২ জুলাই মারা গেলে গাইবান্ধা-৫ শূন্য আসনে ২০২৩ সালের ৪ জানুয়ারির উপনির্বাচনে মাহামুদ হাসান রিপন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

বাবার মৃত্যুর পর ফুলছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হন ফজলে রাব্বীর মেয়ে ফারজানা রাব্বী বুবলী। তিনি বিচারপতি খুরশিদ আলমের স্ত্রী।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হয়ে বাবার পথেই হাঁটেন ফারজানা রাব্বী বুবলী। বাবার অনুসারীদের সঙ্গে নিয়ে মাঠে সরব হন তিনি। জনসংযোগ ও নানাভাবে প্রচার-প্রচারণার পর চান দলীয় মনোনয়ন। কিন্তু দল মাহামুদ হাসান রিপনকে মনোনয়ন দেয়।

তবে বিএনপি না থাকা এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে অংশ নেয়ার সুযোগ দিলে সেই সুযোগ লুফে নেন রাব্বী কন্যা বুবলী।

স্বতন্ত্র প্রার্থী ফারজারা রাব্বী বুবলী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আমাদেরকে প্রার্থী হওয়ার বিষয়টি উন্মুক্ত করে দেয়ায় স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছি। জয়ের ব্যাপারে আমি শতভাগ আশাবাদী। কেননা, আমার বাবা এই আসনের সাত বারের নির্বাচিত এমপি। তার আমলে তিনি এই আসনে ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন। আশা করি জনগণ আমাকেই নির্বাচিত করবেন।’

নৌকার প্রার্থী মাহমুদ হাসান রিপন বলেন, ‘আমি উপনির্বাচনে নির্বাচিত হয়ে মাত্র ১০ মাসেই দুই উপজেলায় ব্যাপক উন্নয়ন করেছি। নদী ভাঙন কবলিত ফুলছড়ি-সাঘাটা উপজেলায় ভাঙ্গন রক্ষায় বড় বড় পদক্ষেপ নিয়েছি। এই এলাকার স্থায়ী ভাঙন রোধে ইতোমধ্যে ২২০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প একনেকে অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা রামসাগর ট্রেন চালু করেছি। এবারও নির্বাচিত হলে গাইবান্ধার বালাসী-বাহাদুরাবাদ পর্যন্ত টানেল নির্মাণের উদ্যোগ নেব।’

দুই উপজেলা নিয়ে এ আসনে সাঘাটার ১০টি এবং ফুলছড়ি উপজেলার সাতটি ইউনিয়নসহ মোট ১৭টি ইউনিয়নে ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৩৯ হাজার ৯৮ জন। স্বাধীনতার পর থেকে এই আসনে ১১টি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পাঁচবার জাতীয় পার্টি, চারবার আওয়ামী লীগ ও দুবার বিএনপি জয়লাভ করে।

এ বিভাগের আরো খবর