বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

যোগাযোগ অব্যবস্থাপনায় ভোটে অনীহা

বরিশাল-৫ আসনের বর্তমান সাংসদ ও নৌকা প্রতীকের প্রার্থী জাহিদ ফারুক বলেন, ‘বরিশাল সদরের উন্নয়নে আমি সর্বাত্মক কাজ করেছি। চরবাড়িয়ায় নদীর তীর রক্ষায় বিশাল প্রকল্প করেছি। সামান্য কিছু কাজ বাকি আছে যা নির্বাচিত হতে পারলে সম্পন্ন করব।’

যোগাযোগ ব্যবস্থায় বছরের পর বছর বরিশাল অঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় পরিবর্তন না আসায় ভোটে অনীহা রয়েছে সাধারণ মানুষের। নির্বাচন এলেও জনগণের মধ্যে এ নিয়ে কোনো মাথা ব্যথা নেই।

তাদের ভাষ্য, জনপ্রতিনিধি আসে, জনপ্রতিনিধি যায়, কিন্তু তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন হয় না। রাস্তা নেই, মাটির ওপর দিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। তাই তারা ভোট এলে তা নিয়ে তেমন কিছুই ভাবেন না।

তবে জনপ্রতিনিধিরা বলছেন, বেশিরভাগ এলাকারই সড়ক নির্মাণ ও সংস্কার করা হয়েছে। কিছু এলাকার সমস্যা রয়েছে, তারা নির্বাচিত হতে পারলে সেই সব সমস্যার সমাধান করবেন।

বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার গোবিন্দপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা ফজলুর রহমান বাচ্চু। কৃষিকাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন ৭২ বছর বয়সী এ ব্যক্তি। পরিবারে দুই সন্তান ও স্ত্রীসহ সদস্য সংখ্যা সাতজন।

ফজলুর রহমান বাচ্চু বলেন, ‘গোবিন্দপুর ইউনিয়নের ভোটার হলেও ভোট দিতে যেতে হয় উলানিয়া ইউনিয়নে। ভাঙন কবলিত এলাকা হওয়ায় এই সমস্যার মধ্যে পড়তে হয়। আর গোবিন্দপুর থেকে উলানিয়া যেতে উত্তাল মেঘনা পারি দিতে হয়। যে কারণে এই এলাকার অনেকেই ভোট দিতে যায় না।’

একই ইউনিয়নের বাসিন্দা আজগর আলী বলেন, ‘আমরা তো প্রতিদিনিই ভিটেমাটি নিয়ে আতঙ্কে থাকি, কোন সময় নদী ভাঙনে সব নিয়ে যায়। আমাদের নিয়ে কোনো জনপ্রতিনিধি ভাবে না। আমাদের ভোটের কোনো মূল্য নেই। আমার বাড়ির সামনের রাস্তা থেকে ইউনিয়নের প্রায় সবাই চলাচল করে তবে সেই রাস্তা এখনও মাটির।

‘যেখানে বাংলাদেশ ডিজিটাল হলেও আমরা এনালগ হিসেবে আছি। যাতায়াতের মূলত সমস্যার কারণেই আমাদের উন্নতি হচ্ছে না। ভোট দিতে যেতে পারি না।’

গফুর সরদার নামে এক মুদি দোকানি বলেন, ‘আমাদের ইউনিয়নের ভোট কেন্দ্র নদী ভাঙনে বিলীন হয়ে যাওয়ায় ভোট দিতে হয় উলানিয়া ইউনিয়নে গিয়ে। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন এলে আমাদের বেশ কদর থাকে। তখন বড় ট্রলারে করে আমাদের ভোট দিতে নিয়ে যাওয়া হয় উলানিয়ায়।

‘এলাকার অনেকেরই ভোট নিয়ে কোনো মাথা ব্যথা নেই। এত কষ্ট করে ভোট দিতে কেউ চায় না।’

বরিশালের হিজলা উপজেলার আন্ধারমানিক এলাকায় সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা খারাপ হওয়ায় সেখানেও ভোটারদের মধ্যে ভোট নিয়ে বেশ অনীহা রয়েছে বলে জানান স্থানীয়রা। ভোট দিতে অনেকটা পথ হেঁটে যেতে হয়।

ভোট না দিয়ে নাগরিক অধিকার প্রয়োগ থেকে কেন বঞ্চিত থাকছেন- এমন প্রশ্নের জবাবে এক গৃহবধূ বলেন, ‘জনপ্রতিনিধিরা নির্বাচিত হওয়ার পর আর কোনো খোঁজ রাখেন না, তাই ভোট দিতে যাই না। ইউনিয়ন নির্বাচনে ভোট দেই কারণ ইউনিয়ন পরিষদে আমাদের কাজ থাকে।’

সরেজমিনে বরিশাল সদর উপজেলার চরমোনাই ইউনিয়নের নলচর গ্রামের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা যায় এখানকার অনেক বাসিন্দারা জানেনই না তাদের সংসদ সদস্যের নাম।

আমেনা বিবি নামের এক গৃহবধূ বলেন, ‘কারে ভোট দিমু, আমি তো চিনিই না। বাড়ি ঢোকতে হইলে তিনটা বাঁশের চার পার হওয়া লাগে। আইলের ওপর দিয়া হাঁটা লাগে। রাস্তাই তো নাই কোনো।’

সরফুদ্দিন আহম্মেদেরও একই কথা, ‘ভোট দেতে (দিতে) গেলে কাদামাটি পার হইয়া যাওয়া লাগে। তাও যদি বোঝতাম (বুঝতাম) আমাগো (আমাদের) কপাল খোলবে (খুলবে), তা তো বছরের পর বছর পার হওয়ার পরও খোলে নাই।’

এ বিষয়ে কথা হয় বরিশাল সদরের কাশিপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কামাল হোসেন মোল্লা লিটনের সঙ্গে।

তিনি বলেন, ‘আমার ইউনিয়নের কিছু কিছু স্থানে যোগাযোগ অব্যবস্থাপনা রয়েছে। জানি মানুষের ক্ষোভও রয়েছে, আমার পক্ষ থেকে যতটুকু সম্ভব তা করেছি।’

বরিশাল-৪ আসনের বর্তমান সাংসদ ও ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী পঙ্কজ নাথ বলেন, ‘বরিশাল-৪ অর্থাৎ হিজলা ও মেহেন্দিগঞ্জের মানুষের উন্নয়নে দিনভর কাজ করেছি। কিছু কাজ অসম্পূর্ণ রয়েছে, কিছু মানুষের ক্ষোভ রয়েছে যা এবার নির্বাচিত হতে পারলে আশা আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে পারব।

‘আমার নির্বাচনি এলাকা পুরোটা নদীতে ঘেরা। একটাও ছোট খাটো নদী নয়, সবগুলোই বড় বড় নদী। আর এই কারণে যোগাযোগে বা যাতায়াতে সমস্যা রয়েছে। আমার সাধারণ মানুষকে উদ্বুদ্ধ করছি ভোট দিতে যাতে কেন্দ্রে যায়।’

বরিশাল-৫ আসনের বর্তমান সাংসদ ও নৌকা প্রতীকের প্রার্থী জাহিদ ফারুক বলেন, ‘বরিশাল সদরের উন্নয়নে আমি সর্বাত্মক কাজ করেছি। চরবাড়িয়ায় নদীর তীর রক্ষায় বিশাল প্রকল্প করেছি। সামান্য কিছু কাজ বাকি আছে যা নির্বাচিত হতে পারলে সম্পন্ন করব।’

জনগণ কেন ভোট দিতে আগ্রহী নয় জিজ্ঞাসা করলে জাহিদ ফারুক বলেন, ‘মানুষ এবার ভোট দিতে এমনিই আসবেন, যারা ভোট দিতে আসতেন না তারাও আসবেন। কারণ পুরো উপজেলাজুড়ে অনেক কাজ হয়েছে। এই কাজের ধারা অব্যাহত রাখতে নৌকাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবেন তারা।’

এ বিভাগের আরো খবর