আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রিসাইডিং কর্মকর্তাদের নিয়ে বৈঠকে আচমকা হাজির হয় মোবাইল কোর্ট। এ ঘটনায় হন্তদন্ত হয়ে ছোটাছুটি শুরু করেন প্রিসাইডিং কর্মকর্তারা। কুমিল্লা নগরীর একটি অভিজাত হোটেলে রোববার এ ঘটনা ঘটে।
কুমিল্লা-৪ (দেবিদ্বার) আসনে নৌকার প্রার্থী রাজী মোহাম্মদ ফখরুল এমপির সমর্থকরা এই বৈঠকের আয়োজন করেছিলেন বলে জানা গেছে।
সরজমিনে দেখা যায়, কলেজ শিক্ষকদের (প্রিসাইডিং কর্মকর্তা হিসেবে তালিকাভুক্ত) নিয়ে হোটেলটির চার তলায় দেবিদ্বার উপজেলা কলেজ শিক্ষক সমিতি কর্তৃক বর্ষ সমাপনী মিলন মেলার ব্যানারে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। ওই অনুষ্ঠানে শুধু এমপির আশীর্বাদপুষ্ট কলেজ শিক্ষকদের আমন্ত্রণ জানানো হয়। আর এসব শিক্ষক আসন্ন সংসদ নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রে দায়িত্ব পালনের জন্য প্রিসাইডিং অফিসার হিসেবে আবেদন করেছেন।
কুমিল্লা নগরীর অভিজাত হোটেলে রোববার আয়োজিত বৈঠকস্থলে মোবাইল কোর্টের অভিযান। ছবি: নিউজবাংলা
ম্যাজিস্ট্রেট আসার খবরে বাইরে ছুটে আসেন দেবিদ্বার আলহাজ্ব জোবায়দা খাতুন মহিলা বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের প্রভাষক নূর মোহাম্মদ বাবু। তিনি প্রথমে নিজেকে সাংবাদিক পরিচয় দেন এবং উপস্থিত সাংবাদিকদের সঙ্গে তর্কে জড়িয়ে পড়েন। পরক্ষণেই জানান, তিনি দেবিদ্বার উপজেলার কলেজ শিক্ষক সমিতির নেতা। কথা বলার একপর্যায়ে তিনি নিজের রাজনৈতিক দলের পরিচয়ও দেন।
ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতির কারণে অনুষ্ঠান আর শুরু হয়নি। পরে একজন/দুজন করে অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগ করেন সবাই।
বৈঠকে অংশ নিতে হোটেলে আসা বেশ কয়েকজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘এই বৈঠকে আসা আমরা অনেকেই আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রিসাইডিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালনের জন্য তালিকাভুক্ত আছি। এখানে শুধু এমপির কাছের শিক্ষকদেরই দাওয়াত করা হয়েছে। এমপি মহোদয়ের আসার কথা ছিল। কিন্তু কিছুক্ষণ আগে আয়োজকরা দুঃখ প্রকাশ করে জানিয়েছেন যে এমপি এ অনুষ্ঠানে উপস্থিত হতে পারছেন না।’
অনুষ্ঠানের আয়োজক ছিলেন এমপি রাজী মোহাম্মদ ফখরুল সমর্থিত নেতা কুমিল্লা উত্তর জেলা সৈনিক লীগের আহ্বায়ক ও দেবিদ্বার আলহাজ্ব জোবায়দা খাতুন মহিলা কলেজের প্রভাষক নূর মোহাম্মদ বাবু। তিনি বলেন, ‘আমরা কলেজ শিক্ষকদের অনুষ্ঠান করছি। এখানে কোনো রাজনৈতিক বিষয় নেই।’
রাজনৈতিক বিষয় না হলে উপজেলার সব কলেজের শিক্ষকদের কেন ডাকা হয়নি- এমন প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে ‘তাড়া আছে’ বলে তিনি চলে যান।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত মোবাইল কোর্ট পরিচালনাকারী জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার অতীশ সরকার বলেন, ‘আমরা ঘটনাস্থলে আসার পর আয়োজকরা জানিয়েছেন যে এটি শিক্ষক সমিতির প্রোগ্রাম। আমরা শিক্ষকদের তালিকা চেয়েছি। যদি নির্বাচন-সংশ্লিষ্ট কোনো তথ্য পাওয়া যায় তবে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে।’