চট্টগ্রামের ১৬টি আসনের ১০টিতেই নৌকা প্রতীক ও স্বতন্ত্র প্রার্থী উভয়েই আওয়ামী লীগের। এ অবস্থায় নির্বাচনি প্রচার নিয়ে বেকায়দায় পড়ে গেছেন ক্ষমতাসীন দলটির স্থানীয় নেতাকর্মীরা। ভোটের প্রচার নিয়ে নেতাকর্মীরা দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েছেন।
কেউ দলীয় প্রার্থীর আবার কেউ স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে অবস্থান নিয়ে কার্যক্রম চালাচ্ছেন। তৃণমূলেও বিভক্ত হয়ে পড়েছেন কর্মীরা। এ অবস্থায় এবার নৌকার প্রার্থীরা দলীয় নেতাকর্মীদের একচ্ছত্র সমর্থন পাচ্ছেন না। ফলে দলের মনোনয়নবঞ্চিত স্বতন্ত্র প্রার্থীর সঙ্গে একাধিকবার নির্বাচিত সংসদ সদস্যরাও তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে পড়তে যাচ্ছেন।
কোনো কোনো আসনে প্রচারণাকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাকর্মী-সমর্থকরা পরস্পর সংঘাতে জড়িয়ে পড়ছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নির্বাচনে নৌকার প্রার্থীদের বিরুদ্ধে এবার নিজ দলের স্বতন্ত্র প্রার্থীরা গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছেন। দলের বাইরে অন্যান্য মতের ভোটারদেরও কাছে টানার চেষ্টা করছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা।
এবার বিএনপি নির্বাচনে না আসায় আওয়ামী লীগ নির্বাচনকে উৎসবমুখর করার জন্য দলীয় প্রার্থীদের পাশাপাশি দল থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার পথটিও উন্মুক্ত করে দেয়। এ কারণে সারাদেশের মতো চট্টগ্রামেও ১০টি আসনে দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের নেতারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে ভোটের মাঠে লড়ছেন।
চট্টগ্রামের ১০টি আসনে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী ও দলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থীর গ্রহণযোগ্যতা সমানে সমান বলে অভিমত অনেকের। ফলে এসব আসনে দলীয় প্রার্থীরা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারেন বলে স্থানীয়দের ধারণা।
চট্টগ্রাম-১ (মীরসরাই) আসনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মাহবুব উর রহমান রুহেলের সঙ্গে সমানতালে নির্বাচনী মাঠে লড়ছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দীন। এখানেও দলীয় নেতাকর্মীরা দ্বিধাবিভক্ত।
চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী খাদিজাতুল আনোয়ার সনির পাশাপাশি স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক ফটিকছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান হোসাইন মো. আবু তৈয়ব এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ শাহজাহান সমান তালে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। এ আসনে নেতাকর্মীরা তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন।
চট্টগ্রাম-৩ (সন্দ্বীপ) আসনে নৌকার প্রার্থী মাহফুজুর রহমানের সঙ্গে স্বতন্ত্র প্রার্থী স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) নেতা মো. জামাল উদ্দিন চৌধুরীর প্রচারণায় নেতাকর্মীরা সরব।
চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুণ্ড) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী এস এম আল মামুনের বিপরীতে এতোদিন শক্ত প্রতিপক্ষ কেউ না থাকলেও বুধবার হাইকোর্টের নির্বাচনি ট্রাইব্যুনালে প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন লায়ন মোহাম্মদ ইমরান। এরপরই তিনি মাঠে নেমে পড়েছেন।
চট্টগ্রাম-১০ (ডবলমুরিং) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মহিউদ্দিন বাচ্চুর সঙ্গে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতায় মাঠে রয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক মেয়র মনজুর আলম এবং অপর স্বতন্ত্র প্রার্থী ফরিদ মাহমুদ। দলীয় নেতাকর্মীরাও তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন।
চট্টগ্রাম-১১ (বন্দর-পতেঙ্গা) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য এম এ লতিফ। স্বতন্ত্র প্রার্থী জিয়াউল হক সুমন তার সঙ্গে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সরব ভোটের মাঠে। এখানে নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ বিশাল অংশ স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। কর্মীদের বড় অংশ লতিফবিরোধী অবস্থান নিয়েছেন।
চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরীর সঙ্গে মাঠে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য হুইপ সামশুল হক চৌধুরী। এ আসনে ভোটের প্রচারণাকালে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপে সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে।
চট্টগ্রাম-১৪ (চন্দনাইশ) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী নজরুল ইসলাম চৌধুরীর সঙ্গে সমানতালে মাঠে সক্রিয় স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুল জব্বার চৌধুরী। সেখানেও নেতাকর্মীরা দু’ভাগে বিভক্ত।
চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া) আসনে নৌকার আবু রেজা মোহাম্মদ নেজামউদ্দিন নদভীর সঙ্গে লড়ছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল মোতালেব।
চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) আসনে নৌকার প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীর জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মুজিবুর রহমান। এই আসনের অপর স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল্লাহ কবির লিটনও পিছিয়ে নেই ভোটের প্রচারে।
চট্টগ্রাম-৭ (রাঙ্গুনিয়া) আসনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালী) আসনে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, চট্টগ্রাম-১৩ (আনোয়ারা) আসনে ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ, চট্টগ্রাম-৬ (রাউজান) আসনে এবিএম ফজলে করিম চৌধুরীর বিপরীতে শক্ত কোনো প্রতিপক্ষ নেই। আওয়ামী লীগের এসব প্রার্থী অনেকটাই নির্ভার।