প্রিসাইডিং অফিসার কোনো ভোটকেন্দ্রের ভেতর ভারসাম্য রক্ষায় ব্যর্থ হলে প্রয়োজনে ১০ বার ভোটগ্রহণ করা হবে বলে আশ্বস্ত করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল।
ময়মনসিংহের টাউন হলে রোববার দুপুরে নির্বাচন সংশ্লিষ্টদের নিয়ে মতবিনিময় শেষে ব্রিফিংয়ে তিনি এ আশ্বাস দেন।
বক্তব্যে কেন্দ্রে কেউ প্রভাব খাটাতে চাইলে শাস্তির আওতায় আনা হবে বলে হুঁশিয়ার করে দেন সিইসি।
তিনি বলেন, ‘ওসি, এসপি, ডিআইজি, আইজি যিনিই যে কেন্দ্রেই যাক না কেন, খেলাটা হবে কিন্তু প্রার্থীদের মাঝে ভোটের দিন। কেন্দ্রের ভেতরে কিন্তু আইজি-ডিআইজি ঢুকতে পারবে না। শুধু রিটার্নিং অফিসার কেন্দ্রে ঢুকতে পারবে।
‘প্রিজাইডিং অফিসার যদি কেন্দ্রে তার কর্তৃত্ব বজায় রাখতে পারে, তাহলে ওসি, ইউএনও, এসপি, ডিআইজি, কিছুই করতে পারবে না। আর যদি কেউ প্রভাব খাটাতে চায়, সে যেই হোক, তাকে শাস্তির আওতায় আনা হবে।’
ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা নিয়ে সিইসি বলেন, ‘প্রতি কেন্দ্রে ১৫ থেকে ১৬ জন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য থাকবে। আনসার ও ভিডিপি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করবে। তারা ১২ জন থাকবে। তাদের মাঝে কেউ কেউ সশস্ত্র অবস্থায় থাকবে। কেন্দ্রে বিভিন্ন বাহিনীর লোকজন থাকবে।
‘যদি শুধু ১২ জন পুলিশ সদস্য থাকত, তাহলে প্রার্থীরা পুলিশকে হাত করতে পারত, কিন্তু কেন্দ্রে যদি পাঁচটি বাহিনীর লোক থাকে, তাহলে কাউকে হাত করতে পারবে না। কাজেই সেখানে পুলিশ, আনসার, বিজিবি, র্যাব থাকবে। আর স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে সেনাবাহিনী থাকবে। কাজেই কেন্দ্রের বাইরের যে অংশ, তা পুরোপুরি সংরক্ষিত থাকবে।’
কেন্দ্রের ভেতরের ভারসাম্য পোলিং এজেন্টরা রক্ষা করবেন উল্লেখ করে কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, পোলিং এজেন্ট না রাখলে হবে না। নির্বাচনকে বিশ্বাসযোগ্য করতে হলে পোলিং এজেন্টকে ভেতরে থাকতেই হবে।
তিনি বলেন, ‘পোলিং এজেন্ট না রেখে নির্বাচন শেষ হয়ে যাওয়ার পর বলল আমাকে বের করে দেয়া হয়েছিল। তাহলে তো হলো না। যদি কাউকে বের করে দেয়া হয়, তাহলে সঙ্গে সঙ্গে প্রিসাইডিং অফিসারের কাছে নালিশ করতে হবে।
‘ভেতরে ভারসাম্য রক্ষা করতে ব্যর্থ হলে প্রিসাইডিং অফিসার সঙ্গে সঙ্গে ভোটগ্রহণ বন্ধ করে দেবেন। ওই কেন্দ্রের ভোট আরেকবার নেব, প্রয়োজনে ১০ বার ভোট নেব।’
আচরণবিধির বিষয়ে সিইসি বলেন, ‘প্রার্থীরা আচরণবিধি মানছে না, বিষয়টি এমন না। কিছু কিছু ক্ষেত্রে আচরণবিধি লঙ্ঘন হচ্ছে, তবে আমি অনেককেই বলেছি, আপনারা প্রস্তুতি নেন।
‘যেদিন ভোটগ্রহণ হবে, সেদিন আপনাদের (প্রার্থীদের) সতর্ক থাকতে হবে। ভোটের আগে কী হলো, সেটি মানুষ ভুলে যাবে, কিন্তু ভোটের দিন কারচুপি করে ফেললে নির্বাচন নিরপেক্ষ হবে না।’
এর আগে সকাল সাড়ে ১০টায় জেলা পরিষদের সম্মেলনকক্ষে ময়মনসিংহ জেলার ১১টি সংসদীয় আসনের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের নিয়ে মতবিনিময় করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। এ সময় প্রার্থীদের নানা অভিযোগ ও ভোট নিয়ে শঙ্কার কথা শোনেন তিনি।
নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী প্রতীক বরাদ্দ হয়েছে ১৮ ডিসেম্বর। নির্বাচনি প্রচার-প্রচারণা ১৮ ডিসেম্বর থেকে শুরু হয়েছে, যা চলবে ৫ জানুয়ারি সকাল ৮টা পর্যন্ত। ভোটগ্রহণ আগামী বছরের ৭ জানুয়ারি হবে।
ময়মনসিংহ জেলার ১৩ উপজেলায় মোট ভোটার ৪৪ লাখ ৪৩ হাজার ৯১ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার রয়েছে ২২ লাখ ৪০ হাজার ৫৮৬ জন। আর নারী ভোটার রয়েছে ২২ লাখ ২ হাজার ৪৭০ জন। অন্যদিকে হিজড়া ভোটার রয়েছে ৩৫ জন।