বর্তমান নির্বাচন কমিশনকে শয়তানের অনুচর বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেছেন, ‘নির্বাচন কমিশনার আনিছুর রহমান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের চেয়ে এক ডিগ্রি বেশি কথা বলেন। হাছান মাহমুদের চাইতেও তাকে আরও বেশি মনে হয়েছে আওয়ামী অনুগত, আওয়ামী ফ্যাসিবাদের দোসর। আজকে নির্বাচন নিয়ে, গণতন্ত্র নিয়ে, মানুষের স্বাধীনতা নিয়ে যে শয়তানি করা হচ্ছে, সামগ্রিকভাবে সেই শয়তানের অনুচর মনে হচ্ছে এই নির্বাচন কমিশনার আনিছুর রহমানকে।’
শনিবার বিকেলে ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে রিজভী এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, ‘দেশের বেশিরভাগ জনগণের পক্ষে কাজ করা দল হচ্ছে বিএনপি, যার বিপুল পরিমাণ নেতা-কর্মী দেশের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে আছে। অসংখ্য নেতা-কর্মী এখন নিজের বাড়িতে থাকতে পারেন না। সারা দেশে এক ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি বিরাজমান। এই বিরাজমান পরিস্থিতির মধ্যেও প্রধানমন্ত্রী বলে, বিএনপি নাকি সন্ত্রাসী দল। কারো ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে দেব না। জনগণের ভাগ্য নিয়ে তো আপনি ছিনিমিনি খেলছেন। আজকে সিপিডি বলেছে গত ১৫ বছরে শুধুমাত্র ব্যাংক থেকেই ৯৬ হাজার কোটি টাকা পাচার করা হয়েছে। কারা করেছে? আপনারা করেছেন।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘তাহলে আওয়ামী লীগ কি সন্ন্যাসী দল? আমাদের দলের প্রধানকে ফ্যাসিবাদের করাল গ্রাসে বন্দী করে রেখেছেন। আমাদের ২৩ থেকে ২৪ হাজার নেতা-কর্মীকে বন্দী করে রেখেছেন। দলের মহাসচিবসহ স্থায়ী কমিটি এবং হাজার হাজার নেতা-কর্মীকে জেলে বন্দী করে রেখেছেন। এর চেয়ে দুঃশাসন আর কী হতে পারে?’
প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে রিজভী বলেন, ‘যারা ছাত্র রাজনীতি করে এসেছে তারা অনেকেই আপনার কাছে তাদের আত্মা বিক্রি করেছে। তাদের সেই মনুষত্ব, বিবেক আর নেই। ওবায়দুল কাদের, হাছান মাহমুদরা জানতাম ছাত্র রাজনীতি করেছেন। ওবায়দুল কাদের ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন, তিনি এখন ফ্যাসিবাদের মুখপাত্র হয়েছেন। শুধু আমরা কেন, সারা দেশের জনগণ কেউ আর তাদেরকে পছন্দ করে না।
বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, ‘এরশাদের আমলেও আমরা নির্বাচন বর্জন করেছি। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৫ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন বর্জন করেনি? তখন তিনি সরকার চেয়েছিলেন, নির্বাচন পছন্দ হয়নি তাই নির্বাচন বর্জন করেছেন। ২২ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছিলেন। মনে হচ্ছে উনি হলেন পবিত্র সন্ন্যাসী। উনি যেটা বলবেন সেটাই মানতে হবে। দেশের জনগণ, বুদ্ধিজীবী এমনকি আন্তর্জাতিক মহল থেকেও সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা বলেছে। শুধু উনার একগুয়েমি, তিনি অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন করবেন না। তিনি জানেন অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগ জিতবে না।’
রিজভী বলেন, ‘বিএনপি ও সমমানা দলগুলো যে আন্দোলন করছে, সে আন্দোলন ন্যায়সঙ্গত, সত্যের স্বপক্ষের আন্দোলন। যারা সত্যের পক্ষে থাকে তাদের ওপর নিপীড়ন, নির্যাতন নেমে আসে। আমাদেরকে সকল বাধা অতিক্রম করতে হবে। সরকারের সব রাষ্ট্রীয় ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করেই আমাদেরকে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে।’
বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ‘পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে এ দেশে এসে খবরদারি করছে। মনে হচ্ছে, আমরা উপনিবেশের মধ্যে বসবাস করছি। এটি হতে পারে না। বাংলাদেশের গণতন্ত্রের পক্ষে যারা সমর্থন দেবে আমরা তাদেরকে স্বাগত জানাই। আমাদের রাষ্ট্রীয় শক্তি নেই, আমাদের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী নেই, কিন্তু আমাদের আছে জনগণ।’
২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে বিএনপি ও অঙ্গসহযোগী সংগঠনের মোট ১৮৫ জনের বেশি নেতা-কর্মী গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মোট পাঁচটি মামলায় ৪৭০ জনের বেশি বিএনপি নেতা-কর্মীকে আসামি করা হয়েছে বলে এ সময় জানান রিজভী।