আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘বিএনপি কোনো রাজনৈতিক দল নয়, সন্ত্রাসী দল। দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়া আমাকে নানাভাবে হত্যার চেষ্টা চালিয়েছে। তারেকের নির্দেশেই দেশে আগুন দিয়ে মানুষ হত্যা করা হচ্ছে। বাংলার জনগণ এসব হত্যার প্রতিশোধ নেবে।
শনিবার কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, সাতক্ষীরা, নেত্রকোনা, রাঙ্গামাটি এবং বরগুনা জেলার বামনা ও পাথরঘাটা উপজেলার জনসভায় ভার্চুয়ালি দেয়া বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
রাজধানীর তেজগাঁওয়ে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ অফিস থেকে ভিডিও কনফারেন্সে তিনি এসব জেলার জনসভায় অংশ নেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিএনপি একটি সন্ত্রাসী দল। জামায়াত যুদ্ধাপরাধী দল। এই যুদ্ধাপরাধী ও সন্ত্রাসীদের হাত থেকে দেশকে মুক্ত রাখতে হবে।
‘উন্নয়নের ধারা তখনই অব্যাহত থাকবে যখন নির্বাচন সুষ্ঠু হবে, নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণ তার মনমতো প্রার্থী বেছে নেবে এবং গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত থাকবে।’
বিএনপি-জামায়াতের সমালোচনা করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘বিএনপি নির্বাচনে আসেনি। নির্বাচন ঠেকানোর নামে ২০১৩-১৪ সালে যেভাবে অগ্নি-সন্ত্রাস করেছিল, সেই ভয়ংকর রূপ নিয়ে আবার তারা (মাঠে) নেমেছে।
‘মাত্র কয়েকদিন আগে রেলে আগুন দিলো, ফিসপ্লেট খুলে ফেলল, আগুনে পুড়িয়ে মানুষ মারল। আবার তারা অগ্নি-সন্ত্রাস শুরু করেছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘ট্রেনে একজন মা তার শিশুকে কোলে নিয়ে বসে আছে, সেখানে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে কঙ্কাল করেছে। কোনো মানুষের ভেতরে মনুষত্ব থাকলে এ ঘটনা ঘটাতে পারে না।’
আওয়ামী লীগ প্রধান বলেন, ‘বিএনপির নেতা কে সেটাই প্রশ্ন। দুইটাই তো সাজাপ্রাপ্ত। এতিমের অর্থ আত্মসাৎ এবং বিভিন্ন দুর্নীতির কারণে খালেদা জিয়া সাজাপ্রাপ্ত আসামি। তারপরও শারীরিক অবস্থা বিবেচনা করে, তার বোন-ভাই যখন আমাদের অনুরোধ করেছে, আমরা সাজা স্থগিত করে তাকে বাড়িতে থাকতে দিয়েছি।
‘তারেক জিয়া গ্রেনেড হামলা করে আমাকে মারতে চেয়েছিল। বোমা মেরে মারতে চেয়েছিল। গুলি করেছে। তারপরও তার জন্য আমরা এটুকু মানবতা দেখিয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক এলে মুচলেকা দিয়ে আর কখনও রাজনীতি করবে না বলে নাকে খত দিয়ে বিদেশে পাড়ি দেয়। বিদেশে থেকেও হুকুম দিচ্ছে পুড়িয়ে মানুষ মারার।
‘বিএনপির যারা নেতাকর্মী তাদের বলছি- আগুন দিয়ে মানুষ পোড়ানোর পাপের ভাগিদার আপনারাই হবেন, তারেক জিয়া হবে না। ও তো ওখানে জুয়া খেলে ভালো আছে আর হুকুম দিচ্ছে।
‘আপনারা নাচেন, কার জন্য নাচেন? জীবনে কোনোদিন সে তো দেশে আসে নাই, মা মরে মরে, তাও তো দেখতে আসে না। এত সাহস থাকলে একবার দেশে এসে দেখুক! এ দেশের মানুষ এই হত্যাকাণ্ডের প্রতিশোধ নেবে।’
ভোট জনগণের সাংবিধানিক অধিকার উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘সামনে ইলেকশন। এই নির্বাচন আমরা এবার উন্মুক্ত করে দিয়েছি। কারণ আমরা চাই জনগণ অংশগ্রহণ করুক, শান্তিমতো ভোট দিক।
‘সবাই জনগণের কাছে যাবে। জনগণ যাকে ভোট দেবে সেই নির্বাচিত হবে। আমি চাই নির্বাচনটা শান্তিপূর্ণ হোক। জনগণের যে ভোটের অধিকার সেটা তারা সঠিকভাবে প্রয়োগ করতে পারুক। গণতন্ত্রকে আমরা সুরক্ষিত করতে চাই। গণতান্ত্রিক পরিবেশ থাকলে, গণতান্ত্রিক বিধি-ব্যবস্থা থাকলে দেশে উন্নতি হয়।’
৭ জানুয়ারির নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জয় হবে আশা প্রকাশ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘নৌকা মার্কায় ভোট চাই। সবাই নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে আবার জনগণের সেবা করার সুযোগ দেবেন।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশের ইতিহাসে শান্তিপূর্ণভাবে একবারই ক্ষমতা হস্তান্তর হয়েছিল। আমরা ২০০১ সালে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করেছি।
‘বাংলাদেশের জনগণের ভাগ্য নিয়ে আমরা আর কাউকে ছিনিমিনি খেলতে দেব না। ওই সন্ত্রাসী বিএনপি আর যুদ্ধাপরাধী জামায়াতের হাতে এ দেশ কোনোদিনই নিরাপদ নয়। কারণ এরা দেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস করে না। কাজেই এদের হাত থেকে দেশ ও জাতিকে রক্ষা করে দেশের উন্নয়ন অব্যাহত রাখার আহ্বান জানাচ্ছি।’
সূচনা বক্তব্যের পর আওয়ামী লীগ সভাপতি কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, সাতক্ষীরা, নেত্রকোনা, রাঙ্গামাটি ও বরগুনা জেলার বামনা ও পাথরঘাটা উপজেলা প্রান্তে অনুষ্ঠিত জনসভায় যুক্ত হয়ে নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।