বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

হত্যার শিকার ২ বাংলাদেশির পরিবারকে ৩০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ সৌদির

  • কূটনৈতিক প্রতিবেদক   
  • ২০ ডিসেম্বর, ২০২৩ ২২:৫৬

দীর্ঘসময় বিচারকাজ শেষে ঘটনাগুলো হত্যাকাণ্ড প্রমাণিত হওয়ার পর সম্প্রতি সৌদি আরবে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের কাছে ক্ষতিপূরণের অর্থ তুলে দেয়া হয়।

সৌদি আরবে খুন হওয়া দুই বাংলাদেশির পরিবারকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে প্রায় ৩০ কোটি টাকা দিয়েছে দেশটির সরকার।

হত্যাকাণ্ডের শিকার ওই দুই বাংলাদেশি হলেন ২০০৬ সালে দাম্মাম শহরে গুলিতে নিহত হওয়া সাগর পাটোয়ারী এবং ২০১৯ সালে রিয়াদের আজিজিয়ায় গৃহকর্ত্রীর অত্যাচারে প্রাণ হারানো মোসাম্মৎ আবিরুন বেগম।

দীর্ঘসময় বিচারকাজ শেষে ঘটনাগুলো হত্যাকাণ্ড প্রমাণিত হওয়ার পর সম্প্রতি সৌদি আরবে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের কাছে ক্ষতিপূরণের এই অর্থ তুলে দেয়া হয়।

এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে রিয়াদে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘সৌদি আরবে নিহত দুই বাংলাদেশির পরিবারকে দেয়ার জন্য প্রায় ৩০ কোটি টাকা আদায় করা হয়েছে। সৌদি আরবে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ড. মোহাম্মদ জাবেদ পটোয়ারীর মধ্যস্থতায় এ ক্ষতিপূরণ আদায় করা হয়। ক্ষতিপূরণের টাকা ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের কাছে শিগগিরই হস্তান্তর করা হবে। এই বোর্ড নিহতদের পরিবারকে খুঁজে বের করে ক্ষতিপূরণের টাকা তুলে দেবে।’

২০০৬ সালে দাম্মাম শহরে নিহত সাগর পাটোয়ারীর পরিবারকে ৫১ লাখ সৌদি রিয়াল এবং ২০১৯ সালে রিয়াদে নিহত আবিরুনের পরিবারকে ৪৮ লাখ ৮০ হাজার সৌদি রিয়াল ক্ষতিপূরণ আদায় করা হয়েছে।

সূত্র অনুযায়ী, কুমিল্লা জেলার বরুড়া থানার সাগর পাটোয়ারী ২০০৬ সালের ২৭ জুন অজ্ঞাত বন্দুকধারীর গুলিতে দাম্মাম শহরে নিহত হন। দীর্ঘসময় আততায়ীকে শনাক্ত করতে না পারায় যথাসময়ে মামলার অগ্রগতি হয়নি। দীর্ঘ ১২ বছর পর ২০১৮ সালের ১২ সেপ্টেম্বর শ্রমকল্যাণ উইং প্রতিনিধি দাম্মাম দক্ষিণ থানায় পরিদর্শনকালে জানতে পারেন সেখানে একটি চুরির মামলায় সৌদি নাগরিক উমর আল শাম্মেরি আটক আছেন, যিনি সাগর পাটোয়ারি হত্যা মামলায় সন্দেহভাজন।

সে সময় থানা থেকে জানানো হয়, প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ উমরকে বিবাদী করে মামলা করলে এই বিষয়ে পুনঃতদন্ত করা হবে। এর পরিপ্রেক্ষিতে নিহত সাগরের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং বিভিন্ন লোকের সহযোগিতায় তার পরিবারের ফোন নম্বর সংগ্রহের মাধ্যমে দূতাবাসের অনুকূলে পাওয়ার অফ অ্যাটর্নি নিয়ে রাষ্ট্রদূতের দিকনির্দেশনায় আদালতে অভিযুক্তের মৃত্যুদণ্ডের দাবি জানিয়ে অভিযোগ দাখিল করেন শ্রম কল্যাণ উইংয়ের প্রতিনিধি।

বিচারে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় সংশ্লিষ্ট আদালত ২০২১ সালের ২৪ মার্চ অভিযুক্ত উমর আল শাম্মেরির বিরুদ্ধে শিরোচ্ছেদের মাধ্যমে মৃত্যুদণ্ডের রায় দেয়। তবে অভিযুক্তের পিতা অর্থের বিনিময়ে মৃত্যুদণ্ডের দাবি প্রত্যাহারে আপস প্রস্তাব করলে রাষ্ট্রদূতের মধ্যস্থতায় ৫১ লাখ রিয়ালে আপস প্রস্তাবে নিহত সাগর পাটোয়ারীর ওয়ারিশরা সম্মত হন।

আদালত অভিযুক্তের পরিবারের কাছ থেকে রক্তপণের চেক গ্রহণ করে মামলা চূড়ান্ত নিষ্পত্তি করে এবং এ বছরের ৬ ডিসেম্বর দাম্মামের সৌদি ফ্রান্সি ব্যাংকের ফয়সলিয়া শাখা মারফত দূতাবাসের ব্যাংক হিসাবে ৫১ লাখ রিয়াল জমা করে।

অন্যদিকে, খুলনার পাইকগাছার গৃহকর্মী মোসাম্মৎ আবিরুন বেগম ২০১৯ সালের ২৪ মার্চ রিয়াদের আজিজিয়ায় নিয়োগকর্তার বাসভবনে গৃহকর্ত্রী আয়েশা আহমাদ সগির আল জিজানির হাতে নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। এ হত্যার ঘটনায় আজিজিয়া পুলিশ গৃহকর্ত্রী আয়েশা আল জিজানী, গৃহকর্তা বাসেম সালেম সগির এবং তাদের ছেলে ওয়ালিদ বাসেম সালেমকে গ্রেপ্তার করে।

দীর্ঘ বিচারকাজ শেষে ২০২১ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি আদালতের ৩ সদস্যবিশিষ্ট বিচারক বেঞ্চ প্রধান আসামি গৃহকর্ত্রীর বিরুদ্ধে কেসাস (জীবনের বিনিময়ে জীবন) এবং অন্যান্য আসামিদের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার সৌদি রিয়াল অর্থদণ্ড দিয়ে মামলার রায় ঘোষণা করেন। ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল হলে আপিল আদালতের ৫ সদস্যবিশিষ্ট ফুল বেঞ্চ কেসাস বা মৃত্যুদণ্ডের রায় বহাল রাখেন।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামির পরিবার ও সৌদি সরকারের পক্ষ থেকে রক্তপণের বিনিময়ে আসামিকে ক্ষমা করার জন্য অনুরোধ জানানো হলে নিহতের পরিবার সর্বোচ্চ ক্ষতিপূরণের বিনিময়ে আসামিদের ক্ষমার সম্মতি দিয়ে রাষ্ট্রদূত বরাবর আবেদন করেন।

সৌদি আরবে সর্বনিম্ন রক্তপণ ৩ লাখ সৌদি রিয়াল হলেও রাষ্ট্রদূতের প্রচেষ্টায় নিহতের পরিবার ৪৮ লাখ ৮০ হাজার সৌদি রিয়াল রক্তপণ পরিশোধের বিনিময়ে ক্ষমা করতে সম্মত হয়।

অভিযুক্তের পরিবার আদালত কর্তৃক নির্ধারিত সময়ের মধ্যে রক্তপণের অর্থ পরিশোধে ব্যর্থ হলে রাষ্ট্রদূতের নির্দেশে কাউন্সিলর (শ্রম) রিয়াদের ডেপুটি গভর্নর নাবিল বিন আব্দুল্লাহ আল-তাওয়ীলের সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করে ক্ষতিপূরণ আদায়ের বিষয়ে তার ব্যক্তিগত উদ্যোগ ও হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

বিচারক চলতি বছরের ১৫ মে প্রধান আসামির হত্যার রায় বাতিল করে আপস অনুযায়ী নিহত মোসাম্মৎ আবিরুন বেগমের বৈধ ওয়ারিশদের নামে মৃত্যুজনিত ক্ষতিপূরণ বাবদ ৪৮ লাখ ৮০ হাজার সৌদি রিয়াল ক্ষতিপূরণের চেক ইস্যু করে এবং সৌদি আরবের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদনের পর তা দূতাবাসের অ্যাকাউন্টে জমা হয়।

এ ঘটনার মাধ্যমে বহুল আলোচিত ও চাঞ্চল্যকর সাগর পাটোয়ারী এবং আবিরণ হত্যা মামলায় সৌদি আরবে কোনো বাংলাদেশির অনুকূলে সর্বোচ্চ ব্লাডমানি আদায় হলো। এ বিষয়ে সর্বাত্মক সহযোগিতা করায় নিহতদের পরিবার সৌদি আরবে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ও দূতাবাসের কর্মরত সবার প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানিয়েছে।

এ মধ্যস্থতার ফলে একজন সৌদি নাগরিকের প্রাণ বেঁচে যাওয়ায় সৌদি সরকার এবং নিহতের পরিবারও সন্তোষ প্রকাশ করেছে।

এ বিভাগের আরো খবর