চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল থেকে হঠাৎ উধাও হওয়া এক নবজাতককে উদ্ধার করেছে পুলিশ। নিজের শিশুকে হাসপাতালে রেখে ওই শিশুটিকে নিয়ে গিয়েছিলেন এক দম্পতি।
পুলিশ বলছে, ফেনীর পশুরাম এলাকা থেকে মঙ্গলবার রাতে মেয়ে নবজাতকটিকে উদ্ধার ও অভিযুক্ত তিনজনকে আটক করা হয়। তারা জানিয়েছেন- নিজের বাচ্চার ওজন কম হওয়ায় নবজাতককে বদলে নেন তারা।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি-উত্তর) পংকজ দত্ত নিউজবাংলাকে এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মঙ্গলবার চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে চারদিন বয়সী একটি নবজাতক চুরি হওয়ার অভিযোগ করেন স্বজনরা। সকাল ৮টা থেকে দুপুর ২টার মধ্যে হাসপাতালের নিওনেটাল ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (এনআইসিইউ) নবজাতক চুরির এ ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় রাতেই পাঁচলাইশ থানায় বাদী হয়ে অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে মামলা করেন নবজাতকের বাবা আবু মো. নোমান।
চমেক হাসপাতালের এনআইসিইউতে ভর্তি ছিল চার দিন বয়সী ওই নবজাতক। একই হাসপাতালের ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডে নবজাতকের মা আসমা বেগমও উচ্চ রক্তচাপ এবং সার্জারি পরবর্তী নানা জটিলতা নিয়ে চিকিৎসাধীন।
নবজাতকের স্বজনরা জানান, নোমান-আসমা দম্পতির প্রথম সন্তান ওই নবজাতক। শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে নগরীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে জন্ম হয় শিশুটির। শ্বাসকষ্টসহ কিছু সমস্যা নিয়ে রোববার শিশুটিকে চমেক হাসপাতালের নিউরোসার্জারি ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়।
ফেনীর পশুরাম এলাকা থেকে মঙ্গলবার রাতে ওই মেয়ে নবজাতককে উদ্ধার করা হয়। ছবি: নিউজবাংলা
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার পংকজ দত্ত বলেন, ‘শিশুটিকে রাতে ফেনীর পশুরাম থেকে উদ্ধার করা হয়েছে এতটুকু জানি। এখনও বিস্তারিত জানি না আমি।’
নিওনেটাল ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (এনআইসিইউ) একটি নবজাতক অতিরিক্ত পাওয়ার সূত্র ধরে হারানো নবজাতককে উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানান চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহসান।
তিনি বলেন, ‘বাচ্চাটি নিখোঁজের পর আমরা সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করেছি। কিন্তু সিসিটিভি ফুটেজেও সবাইকে যথাযথ কাগজপত্র নিয়ে বের হতে দেখা গেছে। তবে হিসাব করে ওয়ার্ডে একটা নবজাতক বেশি পাওয়া গেছে। ওই নবজাতকের রেকর্ডে দেয়া মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে যারা নবজাতকের অভিভাবকের কথাবার্তা সন্দেহজনক মনে হয়। রাতেই পুলিশ তার অবস্থান শনাক্ত করে শিশুটিকে উদ্ধার করে।’
হারানো নবজাতককে পুলিশ দ্রুত সময়ে উদ্ধার করায় দারুণ খুশি নবজাতকের বাবা আবু মো. নোমান।
শিশুটি উদ্ধারের পর তিনি বলেন, ‘আমি এখন অনেক খুশি। আমার বাচ্চাকে ফিরে পেয়েছি, পুলিশের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা হচ্ছে এখন। যেই নারী বাচ্চাটা নিয়ে গেছে তাকে, তার স্বামী ও মাকে পুলিশ নিয়ে আসছে। মূলত ওজন কম ও শারীরিক অবস্থা বেশি খারাপ হওয়ায় তার বাচ্চা রেখে আমার বাচ্চা চুরি করে নিয়ে গেছে।’
এর আগে নবজাতক হারানোর পর মঙ্গলবার রাতে আবু মো. নোমান বলেন, ‘হাসপাতালের নিয়ম অনুযায়ী সকাল ৮টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত ওয়ার্ডে কোনো স্বজন যেতে পারেন না। সকালে আমার শাশুড়ি আমার বাচ্চাকে দেখে এসেছেন। দুপুরে খাওয়া-দাওয়ার পর সোয়া দুটার দিকে আমার খালা বাচ্চাটা দেখতে গিয়ে দেখে বাচ্চা নাই। অনেক খোঁজাখুঁজি করেও পাওয়া না যাওয়ায় আমরা সবাইকে জানাই।’