দুই লাখ টাকার বিনিময়ে কক্সবাজারে মোহাম্মদ রফিক নামে এক যুবককে ধর্ষণের দায় থেকে মুক্তি দেয়ার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় এক ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে। ধর্ষণের অভিযোগ থানায় পৌঁছে দিতে ভুক্তভোগীর পরিবার ওই জনপ্রতিনিধির শরণাপন্ন হলে টাকার বিনিময়ে তিনি সালিশের মাধ্যমে শেষ করার চেষ্টা করেছেন বলে অভিযোগ। সেইসঙ্গে তাকে বিচারকাজে সহযোগিতা করায় স্থানীয়দের তোপের মুখে পড়েছেন ওই এলাকার আওয়ামী লীগের নেতারাও।
সোমবার রাতে কক্সবাজারের পিএমখালী ইউনিয়নের ফুরাকাটা রশিদের ঘোনা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
অভিযুক্ত ২৪ বছর বয়সী ওই যুবক ফুরাকাটা রশিদের ঘোনা এলাকার সৈয়দ নুরের ছেলে।
ভুক্তভোগী তরুণীর অভিযোগ, মোহাম্মদ রফিক ও তার বাড়ির দুরত্ব এক কিলোমিটারের মধ্যে। পাহাড়ি এলাকা হওয়ায় তাদের বাড়িতে নিয়মিত আসা-যাওয়া করতেন রফিক। সেই সুবাদে পরিচয়ের এক পর্যায়ে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে তাদের মধ্যে। এরপর বিয়ের আশ্বাস দিয়ে ভুক্তভোগীর সঙ্গে একাধিকবার শারীরিক সম্পর্কে জড়ান ওই যুবক। এর মধ্যে ওই তরুণী অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়লে বিষয়টি তিনি দুই পরিবারকে জানান। তখন মেয়ের পরিবার তাদের দুজনের বিয়ের বিষয়টি মেনে নিলেও তা মানতে আপত্তি জানায় রফিকের পরিবার। তখন বিপাকে পড়ে তরুণীর পরিবার থানায় যেতে চাইলে আসে বাধা, দেয়া হয় হুমকি। এরপর থেকে তাদের ধারাবাহিকভাবে ভয়ভীতি দেখাতে থাকে রফিকের পরিবার। এক পর্যায়ে শালিসে বসতেও রাজি হয় দুই পরিবার। কিন্তু দুইবার সালিশে বসেও কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছতে ব্যর্থ হয় স্থানীয় মোড়লরা। মূলত ছেলের পরিবার কোনভাবে বিয়েতে রাজি না হওয়ায় ভেস্তে যায় বিচার। ঘটনার বিষয়টি স্বীকার করলেও বিয়েতে আপত্তি তাদের। এক পর্যায়ে পিএমখালী ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মিজান ও বিচারে উপস্থিত লোকজন দুই লাখ টাকার বিনিময়ে অভিযুক্তকে রেহায় দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
এ বিষয়ে তরুণীর মা বলেন, ‘সৈয়দ নুর সন্ত্রাসী লোক- মিজান মেম্বার এ কথা বলায় আমরা টাকা নিতে রাজি হয়েছি। তবে বিয়েতে আমরা রাজি ছিলাম। গরীব মানুষ বলে তারা আমাদের ভয় দেখাচ্ছে, হুমকি দিচ্ছে। তাই তাদের সিদ্ধান্ত মানতে বাধ্য হয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘আমরা এখনও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। কখন আবার হামলা করে! বাড়িটা পাহাড়ের কিনারায় বলে ভয়টাও বেশি। যেকোনো মুহূর্তে তারা হামলা করতে পারে।’
তিনি আরও বলেন, ‘স্থানীয় একটি হাসপাতালে গিয়ে মেয়েটির পরীক্ষা করিয়েছি। সেখান থেকে আমার মেয়ে ৫ মাসের অন্তঃসত্ত্বা বলে জানিয়েছে ডাক্তার। টাকার জন্য এখনও রিপোর্টের কাগজ আনতে পারিনি। এদিকে থানায়ও যেতে পারছি না পয়সার অভাবে।’
অভিযুক্ত ইউপি সদস্য মিজানুর রহমান অভিযোগের কথা স্বীকার করে বলেন, ‘আইনগতভাবে বিষয়টি আমি করতে পারি না। তবে সামাজিকতা রক্ষায় সালিশি বৈঠকে বসেছিলাম। উভয়পক্ষের সম্মতিতে আমি বিচার করেছি। স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যাক্তিরাও সেখানে উপস্থিত ছিলেন।’
পুলিশকে বিষয়টি জানাননি কেন- প্রশ্নের মিজান মেম্বার বলেন, ‘ছেলেটির পরিবারের সঙ্গে মেয়েটির পরিবার পেরে উঠবে না। তাই বিচার করে একটা সমাধান দিতে চেয়েছিলাম। তবে যদি তারা না মানে, তাহলে হবে না।’
অভিযুক্ত মোহাম্মদ রফিকের বাড়িতে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। তার বাবাও সাংবাদিক যাওয়ার খবর শুনে কেটে পড়েন। পরে মোবাইল ফোনে দুজনের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করা হলেও সাংবাদিক পরিচয় পাওয়া মাত্র ফোন কেটে দেন তারা। ফলে এ ব্যাপারে তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
কক্সবাজার সদর মডেল থানার ওসি মো. রকিবুজ্জামান বলেন, ‘একজন ইউপি সদস্য কখনও এ কাজ করতে পারেন না। যদি কেউ তাদের থানায় আসতে বারণ করে থাকে, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে। ঘটনার সত্যতা যাচাই করে যত ধরনের ব্যবস্থা নেয়া লাগে, সব করব।’
কক্সবাজার সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সম্রাট খীসা বলেন, ‘জনপ্রতিনিধি হিসেবে তিনি এই বিচার করতে পারেন না। এটি সংশ্লিষ্ট থানার ব্যাপার। যদি ভুক্তভোগী আমাকে অভিযোগ করে, তাহলে আমি ব্যবস্থা নেব।’