ঢাকার তেজগাঁওয়ে ট্রেনে নাশকতার আগুনে শিশুসহ চারজনের প্রাণহানির ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। সংস্থাটি বলেছে, রাজনৈতিক অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়ন বা আন্দোলনের নামে মানুষ পোড়ানোর অধিকার কোনো রাজনৈতিক দলের নেই।
গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এসব কথা জানিয়েছে টিআইবি।
মঙ্গলবার ভোর ৫টার দিকে তেজগাঁও স্টেশনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নেত্রকোণা থেকে আসা মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেসের ট্রেনটির তিনটি বগি পুড়ে যায়। এর একটি বগি থেকে এক মা, তার শিশু সন্তানসহ চারজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
এ বিষয়ে বিবৃতিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেছেন, ‘মানুষ পুড়িয়ে কিসের রাজনীতি? ক্ষমতা কি মানুষের জীবনের থেকে বেশি মূল্যবান? মৃতদেহ নিয়ে রাজনীতির অধিকার কোনো রাজনৈতিক দলের নেই।’
এ সময় ট্রেনে দেয়া আগুনে তিন বছরের শিশুসহ চারজনকে হত্যা, গণপরিবহনে আগুন, ট্রেন লাইন কাটার মতো ধ্বংসাত্মক ও জীবননাশের রাজনীতি থেকে বের হয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
তেজগাঁওয়ের ঘটনাকে বিচ্ছিন্ন হিসেবে দেখার সুযোগ নেই মন্তব্য করে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে এর আগেও গণপরিবহনে আগুন, ট্রেনের লাইন কেটে ফেলার মতো ঘটনা ঘটেছে। এগুলো কোনোভাবেই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা, ভোটের অধিকারের দাবিতে আন্দোলন হিসেবে বিবেচিত হতে পারে না।’
‘বলপ্রয়োগ ও সহিংসতা বাংলাদেশের রাজনীতিতে স্বাভাবিক বিষয়ে পরিণত হয়েছে’ উল্লেখ করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘মানবতাকে জিম্মি করে, অনেক ক্ষেত্রে মানুষের মরদেহকে সিঁড়ি হিসেবে ব্যবহার করে রাষ্ট্রক্ষমতা বা দলীয় অ্যাজেন্ডা হাসিলের জন্য ব্যবহারের ঘটনাই সময়ের পরিক্রমায় আমাদের দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে।’
নির্বাচনকে সামনে রেখে ‘মাঠ গরম’ আর ‘মাঠ দখল’-এর নামে সব ধরনের বলপ্রয়োগসহ মানুষের জীবননাশের রাজনীতি থেকে বের হয়ে আসতে দুই ‘রাজনৈতিক প্রভাব বলয়ের’ সবার কাছে দাবি জানিয়েছে টিআইবি।
এ বিষয়ে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘চলমান আন্দোলনের মধ্যে এসব ধারাবাহিক নৃশংসতার দায় আন্দোলনরত দলগুলো এড়াতে পারে না। আবার এর পেছনে সরকারি দলের মদদ রয়েছে বলে যে অভিযোগ, তা মিথ্যা হলে প্রমাণের দায়িত্ব সরকারের ও সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানেরও।’
টিআইবি বাংলাদেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চায় বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে। সেখানে আরও বলা হয়েছে, নৃশংসতার রাজনীতি জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা বা অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের দাবি আদায়ের পথ হতে পারে না। অন্যদিকে সহিংসতা প্রতিরোধের নামে বলপ্রয়োগ, মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে ক্ষুণ্ন করা, ঢালাও ধরপাকড়, বিনা বিচারে মানুষকে জেল খাটানো- কোনোভাবে গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।