বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

‘চোখের সামনেই বোন ও ভাগিনাটা পুড়ে মরল’

  •    
  • ১৯ ডিসেম্বর, ২০২৩ ১৪:৩৬

মঙ্গলবার ভোর ৫টার দিকে মোহনগঞ্জ থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছাড়া মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস আন্তঃনগর ট্রেনে দুর্বৃত্তদের দেয়া আগুনে পুড়ে মারা যান ৩৫ বছর বয়সী নাদিরা ও তার শিশু সন্তান ইয়াসিনসহ চারজন। বাকি দুজনের পরিচয় মেলেনি এখনও।

রাজধানীর তেজগাঁওয়ে ট্রেনে নাশকতার আগুনে তিন বছরের ছেলেসহ নিহত নাদিরা আক্তার পপির স্বামীর বাড়িতে নেত্রকোনায় চলছে শোকের মাতম। সকালে ঘটনা জানাজানির পর থেকে স্থানীয় জনতার ভিড় বাড়তে থাকে বাড়িটিতে। শোকে বিহ্বল হয়ে পড়েছেন নাদিরার মা, বাবা, শ্বশুর-শাশুড়িসহ স্বজনরা।

মঙ্গলবার ভোর ৫টার দিকে মোহনগঞ্জ থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছাড়া মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস আন্তঃনগর ট্রেনে দুর্বৃত্তদের দেয়া আগুনে পুড়ে মারা যান ৩৫ বছর বয়সী নাদিরা ও তার শিশু সন্তান ইয়াসিনসহ চারজন। বাকি দুজনের পরিচয় মেলেনি এখনও।

নাদিরার ভাই হাবিবুর রহমানের চোখের সামনেই ঘটে এ ঘটনা। নাদিরার বড় ছেলে ফাহিমকে নিয়ে কোনোভাবে ট্রেন থেকে নামতে পারলেও নাদিরা ও ইয়াসিনকে বাঁচাতে পারেননি তিনি। পরে দমকল বাহিনী তাদের মরদেহ উদ্ধার করে।

নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলার বৈরাটি ইউনিয়নের আলমপুর গ্রামের ফজলুল হকের মেয়ে ৩৫ বছরের নাদিরা। প্রায় ১০ বছর আগে এসএসসি পাশের পর সদর উপজেলার বরুনা গ্রামের আব্দুল মজিদের ছেলে মিজানুর রহমানের সঙ্গে বিয়ে হয় তার। পাঁচ বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে নাদিরা দ্বিতীয়।

নাদিরা স্বামী মিজানুর রহমান ঢাকার কারওয়ান বাজারে রহমান এন্টারপ্রাইজ নামে একটি হার্ডওয়্যারের দোকান পরিচালনা করেন। তিনি পরিবার নিয়ে তেজতুরি বাজার এলাকায় থাকেন। তাদের বড় ছেলে ৮ বছরের ফাহিম স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে।

গত ৩ ডিসেম্বর রাতে বড় ভাই হাবিবুর রহমানের সঙ্গে নাদিরা তার দুই ছেলে ফাহিম ও ইয়াসিনকে নিয়ে প্রথমে বাবার বাড়িতে বেড়াতে যান। সেখান থেকে কয়েকদিন পর বরুনা গ্রামে স্বামীর বাড়িতে আসেন। গত রোববার নাদিরা ও পরিবারের সদস্যরা জেলা শহরের কুরপাড় এলাকায় নিজেদের বাসায় আসেন।

সোমবার রাত পৌনে ১২টার দিকে নাদিরা ও তার দুই ছেলেসহ পরিবারের মোট ৯ জন নেত্রকোনা স্টেশন থেকে মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেসে করে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন। বিমানবন্দর স্টেশনে পাঁচজন নেমে যান। আর তারা চারজন কমলাপুরে নামতে চেয়েছিলেন।

নাদিরার ভাই হাবিবুর রহমান বলেন, ‘তেজগাঁও স্টেশনে এসে ট্রেনটির গতি থামলে আমাদের পেছনের কয়েক যাত্রী নেমে যান। এরপর ট্রেনটা চলতে শুরু করা মাত্রই পেছনের সিট থেকে আগুন জ্বলে ওঠে। মুহূর্তে তা পুরো বগিতে ছড়িয়ে পড়ে।

‘এরপর আমি দৌড়ে ফাহিমকে নিয়ে কোনোরকমে নেমে যাই। কিন্তু ইয়াসিনকে কোলে নিয়ে নাদিরা ঘুমিয়ে থাকায় সে আর নামার সুযোগ পায়নি। আমিও তাদের রক্ষা করার সুযোগ পাইনি। চোখের সামনেই আমার বোন ও ভাগিনাটা পুড়ে মরল।’

নিহতের বাড়িতে ভিড় করেছেন অনেকে। ছবি: নিউজবাংলা

নাদিরার বাবা ফজলুল হক জানান, রাত পৌনে পাঁচটার দিকে হাবিবুর রহমানের ফোন পেয়ে তারা ঘুম থেকে জাগেন। এ সময় অপরপ্রাপ্ত থেকে হাবিব কেঁদে ট্রেনে আগুন দেয়ার ঘটনা জানিয়ে বলেন, ‘ফাহিমকে নিয়ে আমি কোনভাবে ট্রেন থেকে নামতে পেরেছি। কিন্তু নাদিরা আর ইয়াসিনকে নামাতে পারনি। তারা কোন অবস্থায় আছে জানি না। ট্রেনের ভিতরে আগুন জ্বলছে।’ এরপর দোয়া চেয়ে ফোন কেটে দেন হাবিব। এর কিছুক্ষণ পর আবার ফোন করে হাবিব জানান, নাদিরা আর ইয়াসিন বেঁচে নেই।’ এরপর সকালে তারা বরুনা গ্রামে চলে আসেন।

ফজলুল হক বলেন, ‘নাদিরা শহরের জীবন পছন্দ করত না। গ্রামে থাকতেই বেশি ভালবাসতো। এজন্য প্রায় সময় গ্রামে চলে আসতো।’ বলেই ডুকরে কেঁদে ওঠেন সত্তোরোর্ধ ফজলুল। তিনি আরও বলেন, ‘বাইচ্যা থাইক্যা সন্তান ও নাতির মরা মুখ দেখলাম, আল্লাহ এমন শাস্তি কেন দিলা।’

নাদিরার মা হাওয়া আক্তার বিলাপ করে বলেন, ‘আমার মেয়ে বলতো, বাসে দুর্ঘটনার ঝুঁকি থাহে। তাই ট্রেইনেই বেশি আসাযাওয়া করতো। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ট্রেইনেই পুইড়া মরল আমার দুই কইলজার টুকরা।’

হাওয়া বারবার বলতে থাকেন, ‘যারা ট্রেইনে আগুন দিছে, তারা মানুষ না, পশু। আল্লায় এদের বিচার করব।’

নাদিরার শ্বশুর অশিতিপর আব্দুল মজিদ বলেন, ‘কয়েকদিন নাতি দুইডারে নিয়া খুব আমোদে আছলাম। নাতি দুইডারে কোলে-কান্ধে নিয়া ঘুরছি। ইয়াসিন দাদা ডাইকাই আমার কোলে উইঠ্যা পড়তো। ইয়াসিনের নামডাও আমিই রাখছিলাম। আর তো কোনদিন আমার ইয়াসিনরে পাইতাম না।’

বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত বরুনা গ্রামে অবস্থান করে দেখা গেছে, নাদিরাদের বাড়িতে প্রায় দুই শতাধিক গ্রামবাসী ও আত্মীয়-স্বজনের ভিড়। তারা মরদেহের অপেক্ষা করছেন আর একে অপরকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন।

এ বিভাগের আরো খবর