আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নয়, সেনা ঘাঁটি করার উদ্দেশ্যেই বাংলাদেশের নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্র মাথা ঘামাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন। তিনি বলেছেন, ‘শুরু থেকেই আমি বলে এসেছি, পার্লামেন্টের শেষ অধিবেশনের আগেও আমি বলেছি- যুক্তরাষ্ট্রের লক্ষ্য আমাদের নির্বাচন নয়, দেশের ভূখণ্ডের মধ্যে এবং বাইরে বঙ্গোপসাগরে ঘাটি স্থাপন নিয়ে তারা বহুদিন ধরে চাপাচাপি করছে। সেই লক্ষ্য পূরণ করতে না পেরে তারা আমাদের দেশের শাসন পরিবর্তনের লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছে।’
মেনন বলেন, ‘সেই জায়গা থেকে এই নির্বাচনকে একটি শান্তিপূর্ণ পরিবেশে সফল করার দায়িত্ব আমাদের সকলের রয়েছে। আর তাই বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি এই নির্বাচনের প্রশ্নে দৃঢ়তার সঙ্গে ভূমিকা রেখে চলেছে।’
রোববার সকালে বরিশাল নগরীর কাউনিয়ার নীলু-মনু ট্রাস্ট ও পাবলিক লাইব্রেরিতে দলটির নেতা-কর্মীদের নিয়ে বিশেষ বর্ধিত সভার শুরুতে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন তিনি।
এ সময় মেনন বলেন, ‘নির্বাচনকে কেন্দ্র করে একটা সঙ্কট তৈরি হয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে এবারের নির্বাচনের বৈশিষ্ট হচ্ছে বিদেশি চাপ, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র আমাদের এ নির্বাচনের ব্যাপারে অধিকতর আগ্রহী ও অধিক তৎপরতা দেখিয়েছে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা সক্ষম হয়নি। আজকেও পত্রিকায় রয়েছে নির্বাচন যদি বানচাল করতে নাও পারে, তাহলে নির্বাচন-পরবর্তীকালে আরব বসন্তের মতো এখানে একটা পরিস্থিতি তৈরি করার চেষ্টা তারা করবে।’
তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের শরিক দল হিসেবে ১৪ দলে আমরা আছি। আমরা বহুদিন ধরে একত্রে আন্দোলন, নির্বাচন, সরকার ইত্যাদি পরিচালনা করছি। এখনও আমরা আশা করি ঐক্যবদ্ধভাবেই এগোব। আসন বণ্টন নিয়ে কিছু সমস্যা হয়েছিল, এখনও কিছু সমস্যা রয়ে গেছে। গত সংসদে আমরা ৫টি আসনে নির্বাচন করেছিলাম, তার মধ্যে দুটি আসনে নৌকার প্রার্থী থাকলেও তারা হেরে গিয়েছিল। সেটি কী কারণে হয়েছিল, বরিশালবাসী ভালো জানেন এবং তিনটি আসনে আমরা জয়ী হয়েছিলাম। তারপরও আমাদের প্রত্যাশা ছিল এবার ন্যূনতম ৭টি আসনে আমরা ছাড় পাব, কিন্তু জাতীয় পার্টির অংশগ্রহণ ও ভূমিকার কারণে আমাদের আসন সংখ্যা কমে গেছে বলে তারা আমাদের জানিয়েছেন।’
বরিশালের নীলু-মনু ট্রাস্ট ও পাবলিক লাইব্রেরিতে অনুষ্ঠিত দলের বর্ধিত সভায় রাশেদ খান মেনন। ছবি: নিউজবাংলা
মেনন বলেন, ‘আমরা রাজশাহী-২, সাতক্ষীরা-১ ও বরিশাল-২ নিয়ে তিনটি আসন পেয়েছি। বরিশালের আসন নিয়েও একটা দ্বিধার সৃষ্টি হয়েছিল। কারণ তারা আমাকে প্রথমে বরিশাল-৩-এ দিয়েছিল, তারপর গত পরশুদিন রাত ৮টার সময় আমাকে জানানো হয়, বরিশাল-৩-এর পরিবর্তে আমাকে বরিশাল-২ দেয়া হচ্ছে। এ ধরনের বিব্রতকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে আমাদের কর্মীদের মাঝেও সমস্যা তৈরি হয়, প্রার্থীদের মাঝেও সমস্যা তৈরি হয়। তারপরও আমি এটা মেনে নিয়ে নির্বাচনে এসেছি।
‘এই বরিশালে ১৯৭৩ সালে নির্বাচন দিয়ে যাত্রা শুরু করেছিলাম। সেবার নির্বাচিত হয়েও নির্বাচিত হইনি; সে এক করুণ ইতিহাস। ২০০৮ সালে এখানে নমিনেশন সাবমিট করার পরও আজকের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে ঢাকায় নিয়ে যান। এরপর আমি পরপর তিনবার ঢাকা-৮ থেকে নির্বাচিত হয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘এবার নির্বাচনের ব্যাপারে আমি নিজেও খুব আগ্রহী ছিলাম না। আমার বয়স হয়ে গেছে, এরইমধ্যে ৮০ বছর অতিক্রম করেছি। সেদিক থেকে আমি ভেবেছিলাম, এবার নির্বাচনে আমি যাব না, কিন্তু আমার পার্টি কোনোভাবেই রাজি হয়নি। পরবর্তীতে দেশ এবং জাতীয় পরিস্থিতি দেখে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি।
‘আমি বরিশালের সন্তান, বরিশালের বাইরে থেকেও আমি এখানকার উন্নয়ন ও বিভিন্ন কার্যক্রমের বিষয়ে আগ্রহ বজায় রেখেছি। আমার স্ত্রীও সংরক্ষিত আসনের এমপি থাকা অবস্থায় এ অঞ্চলের উন্নয়নে ভূমিকা রেখেছেন। বরিশাল তথা এলাকার সঙ্গে আমার সম্পর্ক সবসময় ছিল। আমি আশা করি, উজিরপুর-বানারীপাড়াবাসীসহ গোটা বরিশালের মানুষ আমাকে সহযোগিতা করবেন।’
এসময় তার সঙ্গে ওয়ার্কার্স পার্টির বরিশাল জেলা কমিটির সিনিয়র সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মোজ্জাম্মেল হক ফিরোজসহ দলটির অন্যান্য নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে, শনিবার বিকেলে বরিশালের বাবুগঞ্জের নিজ বাড়িতে আসেন রাশেদ খান মেনন। পথে উজিরপুরের ইচলাদিতে বরিশাল-২ আসনের নেতা-কর্মীরা তাকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান।