ঢাকার ধামরাইয়ে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে বেপরোয়া গতির সেলফি পরিবহনের বাসের চাপায় বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এক শিক্ষার্থীসহ দুজন নিহতের ঘটনার রেষ কাটতে না কাটতেই এবার মা-বাবার চোখের সামনেই একই পরিবহনের বাস প্রাণ কেড়ে নিয়েছে এক শিশুর।
সাভারের গেন্ডা বাসস্ট্যান্ডে লাঙ্গলের মোড়ে শনিবার গভীর রাতে এ ঘটনা ঘটে। নিহত ১১ বছর বয়সী মো. তাওহিদ পাবনা জেলার সাথিয়া থানার ফকিরপাড়া এলাকার মোস্তফা কামালের ছেলে।
নিহত শিশুটির বাবা মোস্তফা কামাল বলেন, ‘স্ত্রীকে নিয়ে সাভারের গেন্ডা এলাকায় ভাড়া থেকে আল মুসলিম পোশাক কারখানায় কাজ করি। আমাদের দুই ছেলে ও এক মেয়ে পাবনায় গ্রামে নানা-নানীর বাড়িতে থেকে পড়াশুনা করে। বার্ষিক পরীক্ষার শেষে ছুটিতে শনিবার রাতে আমাদের কাছে বেড়াতে আসে তিন সন্তান।
‘তাদের নিয়ে গেন্ডা বাসস্ট্যান্ডে গাড়ি থেকে নেমে মহাসড়ক পার হওয়ার সময় বিপরীত দিক থেকে আসা ঢাকা থেকে মানিকগঞ্জগামী দ্রুত গতির সেলফি পরিবহনের একটি বাস আমাদের বড় সন্তান তাওহীদকে চাপা দিলে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।’
ঘটনার পরপরই ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের পাশে সেলফি পরিবহনের বেশ কয়েকটি বাস আটকে রেখে ভাঙচুর করেছে বিক্ষুব্ধ জনতা।
সাভার হাইওয়ে থানার এস আই আব্দুল খালেক বলেন, ‘বাসচাপায় এক শিশু মৃত্যুর ঘটনায় সড়ক দুর্ঘটনা আইনে একটি মামলা করার প্রস্তুতি চলছে। মরদেহ তার পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হস্তান্তর করা হয়েছে।’
গত ৭ ডিসেম্বর ধামরাইয়ে সেলফি পরিবহনের দুই বাসের রেষারেষিতে নিহত হন সাবেক জাবি শিক্ষার্থীসহ দুজন। ওই ঘটনায় বেশ কয়েকটি বাস ক্যাম্পাসে এনে আটকে রাখেন শিক্ষার্থীরা। পরে সেলফি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বিক্ষুদ্ধ শিক্ষার্থীদের সমঝোতা হয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে। সেলফি পরিবহন আট লাখ টাকা দিয়েছে জাবির সাবেক শিক্ষার্থী রুবেল পারভেজের পরিবারকে। এ ছাড়া সরকারের পক্ষ থেকে আরও ৫ লাখ টাকা দেয়ার কথা রয়েছে।
ঢাকার গাবতলী বাসস্ট্যান্ড থেকে মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া রুটে চলাচল করা এই পরিবহনের ২০০টি বাসের মধ্যে প্রতিদিন দেড় শতাধিক বাস সড়কে চলাচল করে। ৫-১০ মিনিট পরপর বাস গন্তব্যের উদ্দেশে ছেড়ে যায়। সেলফি পরিবহন প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটিয়ে কেড়ে নিচ্ছে প্রাণ।
গত মে মাসের শেষ সপ্তাহে আশুলিয়া থেকে মোটরসাইকেলে মোহাম্মদপুরের মাদ্রাসায় যাওয়ার পথে সেলফি পরিবহনের দুটি বাসের রেষারেষিতে সড়কে প্রাণ হারায় ১৬ বছর বয়সী শাহেরা আক্তার ওরফে শিলা।
২০২২ সালের জুলাইয়ে মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলায় সেলফি পরিবহনের বাসের চাপায় মোটরসাইকেলের আরোহী দুই বন্ধু নিহত হন।
একই বছরের মে মাসে সেলফি পরিবহন ও জননী পরিবহনের দুটি বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে ঘিওরের মুলজান এলাকায় সেলফি পরিবহনের এক যাত্রী নিহত ও উভয় বাসের অন্তত ২২ জন আহত হন।
একই মাসে ধামরাইয়ের ইসলামপুর বাসস্ট্যান্ডে উল্টো পথে ঢাকাগামী লেন ধরে পাটুরিয়ায় যেতে গিয়ে এক পথচারীকে ধাক্কা দিয়ে আহত করে সেলফি পরিবহনের বাস।