ভারত থেকে রপ্তানি বন্ধের কারণে হুট করেই দেশের পেঁয়াজের বাজারে অস্থিরতা শুরু হয়। এক লাফেই পেঁয়াজের দাম হয় যায় দ্বিগুণেরও বেশি। এর আগে থেকেও বেশ কয়েকদিন ধরেই দেশে পেঁয়াজের বাজার বেশ চড়া।
এসব কারণে দাম বেশি পাওয়ায় নির্ধারিত সময়ের আগেই অপরিপক্ব পেঁয়াজ তুলে বাজারে বিক্রি শুরু করে দিয়েছেন মেহেরপুরের কৃষকরা। এতে চড়া দামে বিক্রির ফলে কৃষকরা বর্তমানে কিছুটা লাভবান হলেও পরবর্তীতে বাজারে পেঁয়াজের ঘাটতি তৈরির শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
চলতি মৌসুমে এ জেলায় উৎপাদিত মুড়িকাটাসহ গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ এখনো বাজারে আসার উপযোগী হতে সপ্তাহ তিনেক সময় লাগার কথা। কিন্তু সরেজমিনে মাঠে ও বাজারে গিয়ে দেখা যায়, অপরিপক্ব পেঁয়াজ মাঠ থেকে তুলে পাইকারদের কাছে বিক্রি করছেন কৃষকরা। আর এসব পেঁয়াজে সয়লাব মেহেরপুরের বাজারগুলো।
এ ক্ষেত্রে কৃষকদের যুক্তি, আমরা যদি এই পেঁয়াজ পরিপক্ব হওয়ার অপেক্ষা করে সময়মতো বাজারে তুলি ঠিক তখনই সরকার এলসির মাধ্যমে পেঁয়াজ আমদানি করে বাজারদর কমিয়ে আমাদের লোকসানে ফেলবে।
কৃষক দীন মোহাম্মদ বলেন, ‘আমরা মুড়িকাটা পেঁয়াজ বতর্মানে এক বিঘা জমিতে ৩৫ থেকে ৩৮ মণ পর্যন্ত ফলন পাচ্ছি। আরও মাসখানেক জমিতে রাখলে ফলন গিয়ে দাঁড়াবে ৬০ মণ পর্যন্ত। তবে তখন পেঁয়াজের বাজার দর অর্ধেকের কমে নেমে আসবে। তাতে লোকসানের আশঙ্কা বেশি থাকবে।’
আর কৃষি বিভাগ বলছে, আগেভাগে পেঁয়াজ তুলে ফেলায় লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হলেও বর্তমান পেঁয়াজের অস্থির বাজার নিয়ন্ত্রণে তা কাজে আসবে। তবে এ কারণে সামনের রমযানে পেঁয়াজ সঙ্কট বাড়তে পারে।
কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, জেলায় এ বছর ৩ হাজার ৫৩৬ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের চাষ হয়েছে। যার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৮ হাজার ৭৩৫ টন।
ব্যবসারী বলছেন, অপরিপক্ক পেঁয়াজে বাজার ভরে গেছে। প্রকৃতপক্ষে অপপরিপক্ব পেঁয়াজ মজুদ করে রাখা যায় না। ফলে মৌসুমের সময়ই যদি পেঁয়াজ মজুদ করা সম্ভব না হয় তাহলে পেঁয়াজের ঘাটতি দেখা দেবে এটাই স্বাভাবিক।
পেঁয়াজ ব্যাবসায়ী তায়েজ উদ্দিন বলেন, সপ্তাহ খানেক আগে পেঁয়াজ ৫ হাজার টাকা মণ বিক্রি হয়েছে। অথচ আজকের বাজার ৩৬ শ' টাকা। কারণ হচ্ছে বাজারে নতুন পেঁয়াজ আসা শুরু হয়েছে। তবে সেই পেঁয়াজ আকারে ছোট আবার ঝাঁজও কম। এখন যে পেঁয়াজ এক মণ ওজন হচ্ছে তা পঁচিশ দিন পরে ওজন করলে ডাবল হবে।
‘কৃষকরা ভালো দাম পেতে আগেভাগেই পেঁয়াজ তুলে ফেলছে। ফলে মজুদদার পেঁয়াজ মজুদ করতে পারছে না। এজন্য উৎপাদন কমে যাবে। ফলে আগামী রমজান কিংবা তার আগেই পেঁয়াজের বাজার আবারও বেড়ে যাবে।’
মেহেরপুর জেলা কৃষি বিভাগের প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা সামসুল আলম বলেন, ‘এটা সঠিক যে বাজারে এখন স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত অপরিপক্ক পেঁয়াজে ভরে যাচ্ছে। তাতে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন পূরণ হবে না। তবে এটাও ঠিক এ অপরিপক্ব পেঁয়াজ ওঠার ফলে সাময়িকভাবে পেঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণ হয়েছে। তাই আমরা এ পেঁয়াজ বাজারজাত করতে কৃষকদের উৎসাহ দিচ্ছি।’