বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

গাইবান্ধায় শর্ত ভঙ্গ করে খেয়াঘাট সাব লিজের অভিযোগ

  •    
  • ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৩ ০৯:২৪

ইজারাদার দুলু মিয়া সাব লিজ (ইজারা) দেয়ার বিষয়টি স্বীকার করে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সাব লিজ দেয়ার নিয়ম নাই, সেটা ঠিকই আছে, কিন্তু আমার নামে শুধু ঘাট ইজারা নেয়া হয়েছে। এর সবই করেন চেয়ারম্যান (সুইট) আর তার ছোট ভাই সুজা। কত টাকায় আর কীভাবে সাব লিজ দিয়েছেন, তারাই ভালো বলতে পারবেন।’

গাইবান্ধায় সাব লিজ তথা সাব ইজারা দিয়ে শর্তভঙ্গের লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে এক খেয়াঘাট ইজারাদারের বিরুদ্ধে।

নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প করে চুক্তির মাধ্যমে এসব ঘাট সাব ইজারা দেয়ার অভিযোগ উঠেছে খেয়াঘাট ইজারাদার মো. দুলু মিয়ার বিরুদ্ধে।

এসব খেয়াঘাটের সাব ইজারার দায়িত্বপত্রও নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে সই করে দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান।

শর্তভঙ্গের অভিযোগ তুলে ইজারা বাতিল চেয়ে দুলু মিয়ার বিরুদ্ধে এরই মধ্যে লিখিত অভিযোগ করেছেন সাঘাটা উপজেলার মো. সহিদুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি।

লিখিত অভিযোগ, সাব ইজারার চুক্তিপত্র করা নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পের কপি ও চেয়ারম্যানের স্ট্যাম্পের মাধ্যমে দেয়া দায়িত্বপত্রের কপিসহ আরও কিছু নথিপত্র এসেছে নিউজবাংলার হাতে।

কী আছে অভিযোগে

গত ১০ ডিসেম্বর গাইবান্ধা জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের কাছে করা অভিযোগে বলা হয়, ‘গাইবান্ধা জেলা পরিষদের অধীনে জেলার সাঘাটা উপজেলার মীরগঞ্জ খেয়াঘাট, ঝাড়কাটা ও গুয়াবাড়ী খেয়াঘাট বাংলা সনের ১৪৩০ খ্রিষ্টাব্দ হতে ১৪৩১ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত (এক বছরের জন্য) উপজেলার সাঘাটা ইউনিয়নের দক্ষিণ উল্যা গ্রামের মৃত ময়াজেম হোসেনের ছেলে মো. দুলু মিয়াকে ইজারাদার হিসেবে মনোনীত করা হয়, কিন্তু ইজারাদার দুলু মিয়া খেয়াঘাট ইজারার চুক্তিনামা (শর্ত) ভঙ্গ করে চলতি বছরের ১৪ এপ্রিল নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে অবৈধভাবে চুক্তিবদ্ধ হয়ে একই উপজেলার সোহেল কবির মোল্লা, জয়নাল মন্ডল ও শাহিন মিয়া নামের গাইবান্ধাগণের কাছে সাব ইজারা দেন, যা জেলা পরিষদের খেয়াঘাট ইজারার নীতিমালার পরিপন্থি।’

ওই ইজারা বাতিলসহ যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানানো হয়েছে লিখিত অভিযোগে।

চুক্তি ভঙ্গ

গাইবান্ধা জেলা পরিষদ সূত্রে জানা যায়, জেলা পরিষদের আওতায় সুন্দরগঞ্জ, গাইবান্ধা সদর, ফুলছড়ি ও সাঘাটাসহ চারটি উপজেলার ২১টি খেয়াঘাটের বিপরীতে ছয়টি প্যাকেজে চলতি বছরের ১৯ ফেব্রুয়ারি পেশাদার পাটুনীর কাছ থেকে দরপত্র আহ্বান করে জেলা পরিষদ।

সব কার্যক্রম শেষে সাঘাটা উপজেলার মীরগঞ্জ লটঘাট, ঝাড়কাটা ঘাট ও গুয়াবাড়ি ঘাটের ১৪৩০ সালের ইজারার তারিখ থেকে ৩০ চৈত্র ১৪৩০ পর্যন্ত এক বছরের জন্য ইজারাদার হিসেবে মনোনীত হন ওই উপজেলার সাঘাটা ইউনিয়নের দক্ষিণ উল্যা গ্রামের দুলু মিয়া, কিন্তু তিনি (দুলু মিয়া) ইজারার চুক্তিনামা (শর্ত) ভঙ্গ করে অবৈধভাবে আবার সাব ইজারা দেন এসব ঘাট, যা স্ট্যাম্পের মাধ্যমে চুক্তিনামা সম্পাদন করা হয়।

সাব ইজারা দেয়ার ৩০০ টাকা সমমূল্যের নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে ওই উপজেলার একই ইউনিয়নের হাসিলকান্দি গ্রামের মো. সোহেল কবির মোল্লার কাছে এসব ঘাটের একটি ১০ লাখ টাকায় সাব ইজারা দেন দুলু মিয়া।

চলতি বছরের ১৪ এপ্রিল সম্পাদন করা সোহেল কবিরকে দেয়া ওই চুক্তিনামা পত্রে উল্লেখ করা হয়, ‘প্রথম পক্ষ মো. দুলু মিয়া ১৪৩০ বঙ্গাব্দ সনে গাইবান্ধা জেলা পরিষদের মীরগঞ্জ লটঘাট, ঝাড়কাটা ও গুয়াবাড়ি ঘাট ইজারা গ্রহণ করেন। এই তিনটি ঘাটের মধ্যে হতে মীরগঞ্জ ঘাটটির সজ্ঞানে ও সুস্থ মস্তিস্কে সাক্ষীগণের মোকাবিলায় ১০ লাখ টাকা গ্রহণ করে বঙ্গ সনের ১৪৩০ হতে ১৪৩১ সন পর্যন্ত (একবছরের জন্য) দ্বিতীয় পক্ষ হিসেবে মো. সোহেল কবির মোল্লা সাহেবকে আদায়কারী হিসেবে প্রদান করিলাম।’

এতে আরও উল্লেখ করা হয়, ‘আপনি সোহেল কবির মোল্লা আমার (দুলু মিয়া) চুক্তি মোতাবেক অদ্য ১৪.৪.২০২৩ ইং অর্থাৎ ১৪৩০ বঙ্গ সনে আদায় করিতে থাকিবেন।’

এই সাব ইজারার চুক্তি সম্পাদনের মাধ্যমে ইজারাদার দুলু মিয়া ইজারার শর্ত ভঙ্গ করেছেন।

চলতি বছরের ১৯ ফেব্রুয়ারি গাইবান্ধা জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী মোহাম্মদ আব্দুর রউফ তালুকদার স্বাক্ষরিত জেলা পরিষদ খেয়াঘাট ইজারা প্রদান বিজ্ঞপ্তিতে ১৪টি শর্ত দেয়া হয়।

ওই ১৪ শর্তের মধ্যে ১৩ নম্বর শর্তে বলা হয়, ‘ইজারাপ্রাপ্ত খেয়াঘাট অন্যের নিকট সাব লিজ দেয়া যাবে না।’

এ ছাড়াও ইজারাদার হিসেবে দুলু মিয়ার সঙ্গে জেলা পরিষদের খেয়াঘাট ইজারার ৩০০ টাকার নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে করা চুক্তিপত্রে বলা হয়, ‘লিজগ্রহীতা এই ঘাট অন্য কাহাকেও সাব লিজ প্রদান করিতে পারিবেন না। সাব লিজ প্রদান করা হইলে লিজ তৎক্ষণাৎ বাতিল বলিয়া গণ্য হইবে।’

এ দিকে জেলা পরিষদের ওই তিন লটের (মীরগঞ্জলট, ঝাড়কাটা ও গুয়াবাড়ী) অন্তর্ভুক্ত সাঘাটা খেয়াঘাটের আংশিক দক্ষিণ নলছিয়ার পূর্বে গারামারাসিপি, উত্তর বেড়াঘাট এবং গুয়াইল ঘাটের ৫০ টাকার নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পের মাধ্যমে সই-স্বাক্ষর করে লিখিতভাবে দুই ব্যক্তির কাছে দায়িত্ব দেন সাঘাটা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. মোশারফ হোসেন সুইট।

একই তারিখে (১৪ এপ্রিল) জয়নাল উদ্দিন ও শাহিন মিয়া নামের দুই ব্যক্তিকে স্ট্যাম্প করে দেয়া দায়িত্বপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, গাইবান্ধা জেলা পরিষদের মালিকানাধীন সাঘাটা উপজেলায় সাঘাটা খেয়াঘাটের আংশিক দক্ষিণ নলছিয়ার পূর্বে গারামারাসিপি, উত্তর বেড়াঘাট এবং গুয়াইলঘাট বাজার পর্যন্ত সীমান্তবর্তী (১৪৩১ সনের ৩০ চৈত্র পর্যন্ত) দায়িত্ব প্রদান করা হলো। এর শর্তাবলীর মধ্যে জেলা পরিষদের সব আইন-কানুন মেনে চলতে বাধ্য থাকার কথা উল্লেখ করা হয়েছে, তবে সেখানে কোনো টাকার পরিমাণ উল্লেখ নেই।

এসব বিষয়ে সরেজমিনে সাঘাটার ওইসব ঘাট এলাকায় গেলে একাধিক নৌকার মালিক ও চালকের সঙ্গে কথা হয় প্রতিবেদকের। এর মধ্যে চিনিরপটল এলাকা ঘাটের নৌকার মাঝি কছিম উদ্দিন ও আশরাফুলসহ একাধিক মাঝি জানান, তারা ১৫ জন মিলে সুইট চেয়ারম্যানের কাছ থেকে চার লাখ টাকা দিয়ে এক বছরের জন্য এই ঘাট ইজারা নিয়েছেন।

যমুনা বাজারের নৌকাচালক শাহ আলম বলেন, ‘এই ঘাট আমরা সুইট চেয়ারম্যানের থেকে ৯ লাখ টাকায় পত্তন (সাব লিজ) নিয়েছি। আমরা এখানে ১৯ জন মিলে নিয়েছি।’

এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘এসব আমরা জানি না। ওপরের কোনো বিষয় থাকলে সুইট চেয়ারম্যান দেখবে।’

অভিযোগ রয়েছে, ডাকের মূল্য থেকে প্রায় দ্বিগুণ মূল্যে সাব ইজারা দেয়া হয়েছে ওইসব ঘাট।

জেলা পরিষদ সাঘাটা উপজেলার এসব ঘাট লিজ (ইজারা) দিয়েছেন মো. দুলু মিয়াকে, কিন্তু সাব লিজ নেয়ার বিষয়ে সুইট চেয়ারম্যানের কাছে টাকা দিয়ে ঘাট নেয়ার কথা কেন বলছেন নৌকা চালকরা আর কীভাবেই বা এসব ঘাট সাব লিজ দিলেন চেয়ারম্যান, এমন প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে জানা যায়, ইজারাদার দুলু মিয়া চেয়ারম্যানেরই প্রতিনিধি। মূলত এসব ঘাট নিয়েছেন তারাই। এ ছাড়া দুলু মিয়া চেয়ারম্যানের ভাই সুজার ম্যানেজার বলেও খবর পাওয়া গেছে।

জেলা পরিষদে অভিযোগকারী সহিদুল ইসলাম বলেন, ‘ঘাট সাব লিজ দিয়ে ইজারাদার ইজারার শর্ত ভঙ্গ করেছেন। শর্ত ভঙ্গ করলে আইন অনুযায়ী ইজারা বাতিল হবে। আমি লিখিত অভিযোগ করেছি। আশা করছি জেলা পরিষদ যথাযথ ব্যবস্থা নেবে।’

মীরগঞ্জ ঘাট সাব ইজারা নেয়া ইজারাদার সোহেল কবির মোল্লা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি মূল ঘাট মালিকের থেকে ১০ লাখ টাকায় সাব ইজারা নিয়েছি।’

সাব ইজারা বৈধ কি না, এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘যুগ যুগ ধরে এভাবেই চলে আসতেছে। যারা ডেকে নিয়েছে, তারা তো আর ঘাট চালাবে না। চেয়ারম্যানের ভাই সুজার ম্যানেজার দুলু মিয়াকে দিয়ে তারা (চেয়ারম্যানরা) শিডিউলের মাধ্যমে ঘাট ডেকে নিয়েছে। শুধু এই ঘাট নয়, ভরতখালী ঘাট বাদে, সবগুলোই বিক্রি করে দিয়েছে। আর আমি টাকা দিয়েছি। তাই স্ট্যাম্প করে নিয়েছি।’

এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ইজারাদার দুলু মিয়া সাব লিজ (ইজারা) দেয়ার বিষয়টি স্বীকার করেন।

সাব লিজ দিতে পারেন কি না বা কীভাবে দিলেন, এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সাব লিজ দেয়ার নিয়ম নাই, সেটা ঠিকই আছে, কিন্তু আমার নামে শুধু ঘাট ইজারা নেয়া হয়েছে। এর সবই করেন চেয়ারম্যান (সুইট) আর তার ছোট ভাই সুজা। কত টাকায় আর কীভাবে সাব লিজ দিয়েছেন, তারাই ভালো বলতে পারবেন।’

এ বিষয়ে জানতে সাঘাটা ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন সুইটের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করেও সাড়া পাওয়া যায়নি। পরে তাকে খুদেবার্তা পাঠিয়েও কোনো উত্তর মেলেনি।

এসব বিষয়ে গাইবান্ধা জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আবু বকর সিদ্দিক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘অভিযোগটি এখনও আমি দেখিনি। অভিযোগ হয়ে থাকলে বিধি মোতাবেক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

এ বিভাগের আরো খবর