ঢাকা-১৯ আসনের অধীন সাভারে আচরণবিধি ভঙ্গের অভিযোগে সম্প্রতি শোকজ করা হয় আওয়ামী লীগের প্রার্থী ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমানকে। তারপরও প্রতীক বরাদ্দের আগেই দলীয় মার্কা ব্যবহার করে পোস্টার ছাপিয়ে প্রচারণার অভিযোগ উঠেছে এ প্রার্থীর বিরুদ্ধে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার কর্মী-সমর্থকরা নৌকা মার্কা সংবলিত পোস্টার দিয়ে প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। এ ছাড়া সাভার ও আশুলিয়ার বিভিন্ন এলাকায় আচরণবিধির তোয়াক্কা না করেই তাদের নৌকার পক্ষে উঠান বৈঠকের মাধ্যম প্রচার চালানো হচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। এমনকি স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের হুমকি দেয়ারও অভিযোগ উঠেছে তাদের বিরুদ্ধে।
তফসিল অনুযায়ী আগামী ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে। প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হবে ১৮ ডিসেম্বর। নির্বাচনি আইন অনুযায়ী প্রতীক বরাদ্দের আগে প্রার্থীর পক্ষে কোনো ধরনের প্রচার-প্রচারণা বা লিফলেট বিতরণ, পোস্টার ছাপানো যাবে না। এ ছাড়াও প্রতীক বরাদ্দের পর প্রতিটি পোস্টারে ছাপানোর নির্দিষ্ট তারিখ উল্লেখ করতে হবে।
ঢাকা-১৯ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান প্রতীক বরাদ্দ পাওয়ার আগেই নিজ দলের প্রতীক দিয়ে পোস্টার ছাপিয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। এ ছাড়া মনোনয়ন জমা দেয়ার পর থেকেই তার সমর্থনে সাভার ও আশুলিয়ার বিভিন্ন এলাকায় উঠান বৈঠক ও আলোচনা সভা করে আসছেন তার কর্মী-সমর্থকরা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আশুলিয়া থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফারুক হাসান তুহিন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাভার উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান শাহাদত হোসেন খান, ইয়ারপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোশারফ হোসেন মূসা, থানা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মঈনুল ইসলাম ভূঁইয়াসহ নেতা-কর্মীরা নেতৃত্ব দিচ্ছেন প্রচারণায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন। এ ছাড়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নৌকা প্রতীক দিয়ে পোস্টার ছাপিয়ে চালানো হচ্ছে প্রচার-প্রচারণা।
গত কয়েক দিন ধরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পৌর হকার্স লীগের সভাপতি নজরুল ইসলাম, যুবলীগ নেতা শেখ সাঈদ, তাঁতী লীগের ঢাকা জেলার সাবেক সাধারণ সম্পাদক সামস সুমন, আওয়ামী লীগ নেতা আশরাফুল ইসলাম রাজিবসহ একাধিক নেতা-কর্মীর ব্যক্তিগত আইডি থেকে এসব পোস্টারের ছবি দিয়ে নৌকার পক্ষে ভোট চাওয়া হচ্ছে।
ইয়ারপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোশারফ হোসেন মূসা বলেন, ‘আমরা দলীয়ভাবে আওয়ামী লীগের আলোচনা সভা করেছি। এ ছাড়াও এ সভায় কোনো প্রার্থীর ছবি বা প্রতীকের ব্যানার দেয়া হয়নি।’
এদিকে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের ফেসবুকে দেয়া নৌকা মার্কার পোস্টারে কোনো তারিখ উল্লেখ করা না হলেও ছাপাখানার নাম উল্লেখ রয়েছে।
বৃষ্টি ডিজিটাল প্রিন্টার্স অ্যান্ড মেটালিকের মালিক মনির বলেন, ‘নৌকার প্রার্থীর প্রায় ১ লাখ পোস্টার কয়েক দিন আগে ছাপিয়ে দিয়েছি, তবে পোস্টারে মুদ্রণের তারিখ উল্লেখ করা হয়নি।’
এ বিষয়ে আশুলিয়া থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও স্বতন্ত্র প্রার্থী সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘প্রতীক বরাদ্দের আগেই নৌকার প্রার্থীর পক্ষে প্রতীক দিয়ে পোস্টার ছাপানো হয়েছে। এ ছাড়া থানা, ইউনিয়ন ও স্থানীয় পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা প্রায় প্রতিদিনই উঠান বৈঠক ও আলোচনা সভা করে নৌকার পক্ষে ভোট চাইছেন। এটি মন্ত্র্রী মহোদয় জানেন এবং অবগত রয়েছেন।
‘আর যারা আমার হয়ে কাজ করছেন, আওয়ামী লীগের প্রার্থীর বিভিন্ন লোকজন তাদের হুমকি দিচ্ছেন। এ বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামের সঙ্গে কথা বললেও তিনি কোনো ব্যবস্থা নেননি। পরে ডিসি অফিসে ভিডিও ফুটেজসহ লিখিত অভিযোগ দিলেও এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।’
স্বতন্ত্র প্রার্থী সাইফুল আরও বলেন, ‘নৌকার প্রার্থীর লোকজন বিভিন্নভাবে নির্বাচনকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছে। এমনকি বিভিন্ন জায়গায় বলে বেড়াচ্ছে, ভোট যেখানেই দেয়া হোক বা যাকেই দেওয়া হোক, কেন্দ্র অথবা উপজেলা থেকে ডিক্লিয়ার দিয়ে তারা বিজয় নিয়ে নেবে। এসব বক্তব্যে এবং নৌকার প্রার্থীর নেতা-কর্মীদের আচরণে সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়া নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।’
এসব অভিযোগের বিষয়ে ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ও ঢাকা-১৯ আসনের নৌকার প্রার্থী ডা. এনামুর রহমান বলেন, ‘পোস্টার ছাপানোর বিষয়টি আমার জানা নেই। অনেক নেতা-কর্মী অতি উৎসাহিত হয়ে এই কাজটি করতে পারে। এ ছাড়াও আমার পোস্টার দিয়ে ফেসবুকে প্রচারণা চালানোর বিষয়টিও আমার নজরে আসেনি। এখনই এসব বিষয়ে নেতা-কর্মীদের সতর্ক করে দেব।’
এ বিষয়ে ঢাকা-১৯ আসনের সহকারী রিটার্নিং অফিসার ও সাভার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফেরদৌস ওয়াহিদ বলেন, ‘প্রতীক বরাদ্দের আগে কোনো প্রার্থী প্রচারণা চালাতে পারবেন না। এমনকি পোস্টার ছাপানোও আইনগতভাবেই নিষেধ, তবে বিষয়টি এখনও আমার নজরে আসেনি বা কেউ কোনো অভিযোগ দেয়নি।
‘এসব বিষয়ে খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য আচরণবিধি ম্যাজিস্ট্রেট ও অনুসন্ধানী কমিটিকে জানানো হবে।’