বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

আশুলিয়ায় পোশাকশ্রমিককে খুনের পর মরদেহ গুম যেভাবে

  • নিজস্ব প্রতিবেদক   
  • ১২ ডিসেম্বর, ২০২৩ ১৭:৩৫

খন্দকার আল মঈন জানান, রুবিনাকে হত্যার পর এনামুল কীভাবে ঘটনা ধামাচাপা দেবেন, সে বিষয়ে উপায় না দেখে দূরসম্পর্কের আত্মীয় ও ঘনিষ্ঠ বন্ধু সোহাগকে মোবাইল ফোনে বিষয়টি অবহিত করে তার বাসায় আসতে বলেন। সোহাগ ঘটনার দিন আনুমানিক রাত ৮টার সময় এনামুলের বাসায় আসেন এবং রুবিনার মরদেহ গুম করার উদ্দেশ্যে নদীতে ফেলে দেয়ার পরিকল্পনা করেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী এনামুল ও সোহাগ রাত তিনটার সময় যৌথভাবে রুবিনার মরদেহটি চাদর দিয়ে পেঁচিয়ে বাসার নিচে নামিয়ে আনেন।

ঢাকার উপকণ্ঠ সাভারের আশুলিয়ায় নরসিংদীর এক পোশাকশ্রমিককে হত্যার পর তার প্রেমিক কীভাবে মরদেহ গুম করেছেন, তা জানিয়েছে র‌্যাব।

রাজধানীর কারওয়ান বাজারে মঙ্গলবার র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টি জানান র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

র‌্যাব জানায়, আশুলিয়ার শিমুলিয়া এলাকার বংশাই নদীতে ভাসমান নারীর মরদেহ উদ্ধারের পর র‌্যাবের প্রযুক্তির সহায়তায় মরদেহ শনাক্ত ও ক্লুলেস হত্যাকাণ্ডের হোতা এনামুল সানা ও সোহাগ রানাকে আশুলিয়া থেকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব-৪।

বাহিনীর ভাষ্য, গত ৯ ডিসেম্বর বিকেল আনুমানিক সাড়ে তিনটার দিকে বংশাই নদীতে এক নারীর মরদেহ ভাসতে দেখে স্থানীয় লোকজন নৌ-পুলিশ ও র‌্যাবকে বিষয়টি জানায়। পরবর্তী সময়ে র‌্যাব-৪-এর গোয়েন্দা দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় নারীর মরদেহটির নাম ও পরিচয় শনাক্ত করতে সক্ষম হয়। তারা নিশ্চিত হয় যে, ভাসমান মরদেহটি দিনাজপুর জেলার পার্বতীপুর থানার রঘুনাথপুর দোলাপাড়া গ্রামের আবদুল ওয়ারেছের মেয়ে রুবিনা খাতুনের।

পরবর্তী সময়ে র‌্যাব-৪ ভুক্তভোগীর পরিবারের সদস্যদের খবর দিলে তারা আশুলিয়ায় আসে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগীর ভাই বাদী হয়ে গত ১০ ডিসেম্বর আশুলিয়া থানায় অজ্ঞাতনামা আসামিদের নামে হত্যা মামলা করেন। এরই ধারাবাহিকতায় সোমবার রাতে র‌্যাব-৪-এর একটি দল আশুলিয়ার টেংগুরী এলাকায় অভিযান চালিয়ে এনামুল ও সোহাগকে গ্রেপ্তার করে। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় ভুক্তভোগীর ব্যবহৃত মোবাইল ফোন ও হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত মোটরসাইকেল।

গ্রেপ্তারকৃতদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে র‌্যাবের কমান্ডার বলেন, রুবিনা নরসিংদীর পলাশ এলাকায় পোশাক কারখানায় চাকরি করতেন। ছয় মাস আগে এনামুলের সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পরিচয় হয় এবং একপর্যায়ে তাদের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি হয়। এনামুল পরিবারসহ আশুলিয়া ভাড়া বাসায় থাকতেন এবং আগে পোশাক কারখানায় সুপারভাইজার হিসেবে চাকরি করতেন। বর্তমানে তিনি ভাড়ায় নিজের মোটরসাইকেল চালান। এনামুল প্রায়ই ভুক্তভোগীকে বেশি বেতনে অন্য জায়গায় চাকরি দেয়ার মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে আশুলিয়ায় আসতে বলতেন।

খন্দকার আল মঈন জানান, গত ৩ ডিসেম্বর এনামুলের স্ত্রী ও সন্তান গ্রামের বাড়ি খুলনার পাইকগাছায় চলে যান। সেই সুযোগে রুবিনাকে আশুলিয়ার ভাড়া বাসায় নিয়ে আসেন এনামুল এবং বিভিন্ন মিথ্যা প্রলোভন দেখিয়ে ৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত তার বাসায় রাখেন। বাসায় অবস্থানকালীন রুবিনা বারবার বিয়ের কথা বললেও এনামুল তাতে অস্বীকৃতি জানান। ওই সময় বিয়েসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তাদের মধ্যে মনোমালিন্য ও ঝগড়া হয়।

তিনি আরও জানান, গত ৮ ডিসেম্বর বিকেল আনুমানিক তিনটায় রুবিনা ফের বিয়ের কথা বলায় এনামুল তাকে বিয়ে করতে অস্বীকৃতি জানান এবং উভয়ের মধ্যে বাগবিতণ্ডার সৃষ্টি হয়। একপর্যায়ে এনামুল ক্ষিপ্ত হয়ে রুবিনার মুখে বালিশ চাপা দিয়ে তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন এবং ভুক্তভোগীর হাতে লেখা ‘এনামুল’ নামটি মেহেদী দিয়ে ঢেকে দেন।

যেভাবে সরানো হয় মরদেহ

খন্দকার আল মঈন জানান, রুবিনাকে হত্যার পর এনামুল কীভাবে ঘটনা ধামাচাপা দেবেন, সে বিষয়ে উপায় না দেখে দূরসম্পর্কের আত্মীয় ও ঘনিষ্ঠ বন্ধু সোহাগকে মোবাইল ফোনে বিষয়টি অবহিত করে তার বাসায় আসতে বলেন। সোহাগ ঘটনার দিন আনুমানিক রাত ৮টার সময় এনামুলের বাসায় আসেন এবং রুবিনার মরদেহ গুম করার উদ্দেশ্যে নদীতে ফেলে দেয়ার পরিকল্পনা করেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী এনামুল ও সোহাগ রাত তিনটার সময় যৌথভাবে রুবিনার মরদেহটি চাদর দিয়ে পেঁচিয়ে বাসার নিচে নামিয়ে আনেন।

র‌্যাব আরও জানায়, রুবিনার মরদেহ এনামুল তার মোটরসাইকেলের মাঝখানে বসিয়ে রাখেন এবং পেছন থেকে সোহাগ মরদেহটি ধরে রাখেন। এনামুল মোটরসাইকেল চালিয়ে আনুমানিক পাঁচ কিলোমিটার দূরত্বে বংশাই নদীর ওপর রাঙ্গামাটি ব্রিজে পৌঁছান এবং পরিকল্পনা অনুযায়ী রুবিনার মরদেহটি ব্রিজ থেকে নদীতে ফেলে দেন। পরবর্তী সময়ে তারা নিজ নিজ বাসায় গিয়ে স্বাভাবিক জীবনযাপন শুরু করেন। তাদের মধ্যে এই বিশ্বাস জন্মায় যে, যেহেতু তারা গোপনে মরদেহটি নদীতে ফেলে দিতে সক্ষম হয়েছেন, সেহেতু ভুক্তভোগীর মরদেহটি খুঁজে পাওয়া গেলেও হত্যাকারীকে শনাক্ত করা যাবে না।

এ বিভাগের আরো খবর