বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

১৩ লাখ টাকার সরকারি ভবন সোয়া ৩ লাখে বিক্রি, কার্যাদেশের আগেই তিন হাত বদল!

  • প্রতিনিধি, সিরাজগঞ্জ   
  • ১২ ডিসেম্বর, ২০২৩ ০৮:৪৬

এলজিইডি সিরাজগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী সফিকুল ইসলাম বলেন, ‘দোতলা ডরমিটরি ভবন ও পাকা মসজিদ সবশেষ এসে কেউ যদি ১৩ লাখ টাকায় কেনেন সেটা তিন লাখের একটু বেশি টাকায় কিভাবে নিলাম হয় সে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। আর কার্যাদেশ দেয়ার আগে স্থাপনা ভাঙার সুযোগ নেই। হাতবদলও সম্পূর্ণ বেআইনি। বিষয়টি আমি খতিয়ে দেখব এবং অসামঞ্জস্যপূর্ণ কিছু পেলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

সিরাজগঞ্জের বেলকুচিতে ১৩ লাখ টাকা মূল্যের দুটি সরকারি স্থাপনা নিলামে বিক্রি হয়েছে মাত্র তিন লাখ ৩৮ হাজার টাকায়। এমনকি নিয়ম অনুযায়ী সরকারি কার্যাদেশ পাওয়ার আগে স্থাপনাগুলো হাতবদলের সুযোগ না থাকলেও তা ইতোমধ্যে তিন হাত বদল হয়ে গেছে।

প্রধানমন্ত্রীর উপহারের মডেল মসজিদ নির্মাণের জন্য বেলকুচিতে সরকারি একটি ডরমিটরি ও মসজিদ নিলামে বিক্রির জন্য মূল্য নির্ধারণ করে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) বেলকুচি উপজেলা কার্যালয়। প্রধান কারচুপিটা এখান থেকেই শুরু হয়। দুই তলাবিশিষ্ট ডরমিটরি ও একটি পাকা মসজিদের মূল্য নির্ধারণ করা হয় মাত্র দুই লাখ টাকা।

দেড় বছর আগে নির্ধারণ করা এই মূল্য ধরেই ১২ নভেম্বর নিলামের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন নিলাম কমিটির সভাপতি বেলকুচি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আফিয়া সুলতানা কেয়া। বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী ২৮ নভেম্বর দুইটি স্থাপনার জন্য পৃথক নিলাম অনুষ্ঠিত হয়।

নিলামে মাত্র এক লাখ ৭০ হাজার টাকায় বিক্রি হয় উপজেলা পরিষদ মসজিদ। সেটি কিনে নেন বেলকুচি উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মো. ইউসুফ আলী শেখ। আর মাত্র এক লাখ ৬৮ হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি হয় ডরমিটরি ভবনটি। এটি কিনে নেন বেলকুচি পৌর আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মীর সেরাজুল ইসলাম।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ইউসুফ আলী শেখ উপজেলা পরিষদ মসজিদটি কিনে নিয়েই নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে আরমান নামে এক ব্যক্তির কাছে ৪ লাখ ৯৬ হাজার টাকায় বিক্রি করেন। আরমান আবার সেটি কালু নামের এক ভাঙারি দোকানির কাছে বিক্রি করেন সাড়ে ৫ লাখ টাকায়। এরপর কার্যাদেশ পাওয়ার আগেই ভবনটি ভাঙারও চেষ্টা করেন তারা।

আরমান আলী বলেন, ‘আমি নিলামে বিক্রি হওয়া মসজিদটি উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ইউসুফ আলী শেখের কাছ থেকে ৪ লাখ ৯৬ হাজার টাকায় কিনেছি এবং সাড়ে ৫ লাখ টাকায় বেলকুচিরই এক ভাঙারি ব্যবসায়ীর কাছে বিক্রি করেছি। তবে এর মাঝে কোনো নিয়মনীতি আছে কি না আমি জানি না।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি যার কাছে বিক্রি করেছি তিনিও আবার জানালা-দরোজা আলাদা করে আরেকজনের কাছে বিক্রি করেছেন।

‘এ ছাড়া ডরমিটরি যিনি নিলামে কিনেছেন তিনি আবার ৬ লাখ ৮৫ হাজার টাকায় সেটি বিক্রি করে দিয়েছেন বলে জানি।’

মসজিদ নিলামে কিনে পুনরায় বিক্রি করা এবং এখনও কার্যাদেশ না পাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেন বেলকুচি উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মো. ইউসুফ আলী শেখ। তিনি বলেন, ‘আমি উন্মুক্ত নিলামে মসজিদটি কিনে নিয়ে আবার বিক্রি করেছি। সে আবার বিক্রি করেছে কিনা জানি না।

‘কেউ কিনলে সে তো বিক্রি করে লাভবান হবে এটাই স্বাভাবিক। তবে নিলামে কিনে কার্যাদেশ পাওয়ার আগেই বিক্রি বা হাতবদলের নিয়ম নেই- এমন কিছু আমি জানি না।’

এদিকে দুটি স্থাপনাই শেষ পর্যন্ত কিনে নিয়েছেন বেলকুচির ভাঙারি ব্যবসায়ী কালু। তিনি মসজিদ ও ডরমিটরি ভবন তৃতীয় ব্যক্তি হিসেবে কিনে নেয়ার বিষয়টি স্বীকার করেন। তিনি বলেন, আমি আরমানের কাছ থেকে মসজিদ ভবনটি কিনেছি ৬ লাখ টাকায় এবং মীর সেরাজুলের ভাগিনা সোহেলের কাছ থেকে ডরমিটরি ভবনটি কিনেছি ৭ লাখ টাকায়।’

তিনি আরও বলেন, ‘ইতোমধ্যে আমি পুরো টাকা পরিশোধ করেছি। এতো টাকা দিয়ে ভবন দুটি কিনেও কাগজপত্র না পাওয়ায় ভাঙতে পারছি না। এদিকে ইটের দাম আবার কমে গেছে। এখন আমিই বিপদে পড়ে গেছি।’

নিলামে ডরমিটরি ভবন কিনে নেয়া মীর সেরাজুলের কাজ দেখাশোনা করেন তার ভাগ্নে সোহেল রানা। তিনি বলেন, ‘আমার মামা নিলামে একটি স্থাপনা ক্রয় করেছে। আমি তার হয়ে কাজটি করছি। কিন্তু আমরা কারও কাছে কাজটি বিক্রি করিনি। কালুকে আমরা লেবার হিসেবে নিয়েছি। সে আমাদের লেবার দেবে। যদি সে বলে থাকে কাজটি কিনেছে তাহলে সে মিথ্যা বলেছে।’

এ ব্যাপারে মীর সেরাজুল হক বলেন, ‘ওপেন নিলাম ডাকে স্থানীয় কয়েকজন অংশ নিয়েছিল। ডাকে ডরমিটরি ভবনটি আমি পেয়েছি। পরে কালু নামে একজনের কাছে বেশি লাভে ভবনটি বিক্রি করে দিয়েছে আমার ভাগ্নে।’

কার্যাদেশ পাওয়ার আগে কাজটি হাতবদলে কোনো বাধার বিধান আছে কিনা- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘অনেক ক্ষেত্রে বিধান থাকলেও মানা হয় না। আমরা ঠিকাদার, কম দামে কিনে বেশি দামে বিক্রি করি। এটাই আমাদের ব্যবসা।’

এ ব্যাপারে এলজিইডি’র বেলকুচি উপজেলা প্রকৌশলী মো. বোরহান উদ্দীন খান বলেন, ‘স্থাপনা দুটির মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে দেড় বছর আগে। আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় নিলাম করতে দেরি হলো।

‘আমরা এখান থেকে মূল্য নির্ধারণ করে পাঠাই। তারপর সেটা জেলা কমিটিতে পাস হয়ে মন্ত্রণালয়ে যায়। সেখান থেকে অনুমোদন হয়ে আসার পরই এখানে নিলাম হয়েছে। সেখানে সরকারি ধার্য মূল্যের চেয়ে আমরা বেশি টাকায় বিক্রি করেছি।’

এখনও কার্যাদেশ দেয়া হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘হাতবদল হওয়াটা সম্পূর্ণ অবৈধ। তাই হাতবদলের প্রশ্নই আসে না। সরকারি কোনও কর্মকর্তার সামনে হাতবদল হয়নি।

‘যেহেতু আমরা এখনও কার্যাদেশই দেইনি সেখানে তারা কিভাবে হাতবদল করলো এটা বোধগম্য নয়।’

হাতবদলের কোনও তথ্য থাকলে নিলাম কমিটির সভাপতি বেলকুচি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন তিনি।

এ ব্যাপারে কথা বলার জন্য নিলাম কমিটির সভাপতি ইউএনও আফিয়া সুলতানা কেয়ার মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

এ ব্যাপারে এলজিইডি সিরাজগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী সফিকুল ইসলাম বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে নিলামে কেউ কিনে থাকলে তিনি নিজেই সেটা অপসারণ করবেন। তারপর অন্যান্য মালামাল বিক্রি করতে পারবেন। কিন্তু নিলামে কিনে সেই অবস্থাতেই দ্বিতীয় বা তৃতীয় কোনও ব্যক্তির কাছে বিক্রি করতে পারবেন না। এটা করার সুযোগ নেই এবং বেআইনি।’

তিনি আরও বলেন, ‘যে স্থাপনা দুটি সবশেষ এসে কেউ ১৩ লাখ টাকায় কেনেন সেটা তিন লাখের একটু বেশি টাকায় কিভাবে নিলাম হয় সে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। বিষয়টি আমি খতিয়ে দেখব এবং অসামঞ্জস্যপূর্ণ কিছু পেলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

এ বিভাগের আরো খবর