পঞ্চগড় আদালতে একটি হত্যা মামলার আসামিদের জামিন দেয়ায় বিচারকের দিকে জুতা নিক্ষেপ করেছেন মামলার বাদী।
সোমবার দুপুরে পঞ্চগড় জেলা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এ ঘটনা ঘটে।
জানা যায়, জমি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছিল পঞ্চগড় সদর উপজেরার সাতমেরা ইউনিয়নের ডাঙ্গাপাড়া গ্রামের দুই ভাইয়ের মধ্যে। গত ৫ ডিসেম্বর এই বিরোধের জেরে তুমুল ঝগড়া-মারামারি হয়। এ সময় ছোট ভাই ৬৫ বছর বয়সী আব্দুল মমিনের কিলঘুষিতে বড় ভাই ৮৩ বছর বয়সী ইয়াকুব আলী নিহত হন। ঘটনার পর ওই দিন রাতেই ইয়াকুব আলীর মেয়ে মিনারা আক্তার বাদী হয়ে সদর থানায় ১৯ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন।
মামলার পর সোমবার দুপুরে পঞ্চগড় সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-১-এ হাজির হয়ে জামিন আবেদন করেন ১৫ জন আসামি। তাদের জামিন আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালতের বিচারক অলরাম কার্জী সকল আসামিকে অন্তবর্তিকালীন জামিনের আদেশ দেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে বাদী পক্ষ। এ সময় আদালতে হট্টোগোল শুরু হয়। এর মধ্যে বাদী মিনারা আক্তার ন্যয়বিচার না পাওয়ার অভিযোগে ক্ষিপ্ত হয়ে বিচারকের দিকে জুতা ছুড়ে মারেন। তাৎক্ষণিক মিনারাকে আটক করে হেফাজতে নেয় আদালত পুলিশ। এরপর হট্টগোল শুরু হলে আদালতের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। প্রায় দুই ঘণ্টা পর আবার কার্যক্রম শুরু হয়।
বাদীপক্ষের আইনজীবী হাবিবুর রহমান বলেন, ‘মামলার বিজ্ঞ বিচারক সাধারণ মামলাগুলোতেই আসামিদের জামিন দেন না। অথচ ৩০২ ধারার একটি হত্যা মামলার আসামিদের কীভাবে জামিন দিলেন, এটা বোঝা যাচ্ছে না। হত্যাকাণ্ডের ৭ দিনের মাথায় আসামিরা জামিন পান- আইনজীবী হিসেবে এটা আমরা কখনোই দেখি নাই।’
আসামিপক্ষের আইনজীবী রাকিব হোসেন বলেন, ‘এ মামলার ৪ থেকে ১৫ নম্বর পর্যন্ত আসামিরা জামিন আবেদন করলে আদালত জামিন মঞ্জুর করে। আমি আসামিদের কাছে শুনেছি, এটা হত্যাকাণ্ড নয়, বিরোধের সময় ইয়াকুব আলী স্ট্রোক করে মারা গেছেন। প্রতিপক্ষকে হয়রানি করতে বাদীপক্ষ হত্যা মামলা করেছে। এই মামলায় দূরের আত্মীয়-স্বজনসহ একাধিক নিরাপরাধ নারী রয়েছেন যারা ঘটনার সময় ঘটনাস্থলে ছিলেন না। আদালত সব কিছু বিবেচনা করেই ৪ থেকে ১৫ নম্বর আসামিদের অর্ন্তবর্তীকালীন জামিন দিয়েছে। এ ঘটনায় উত্তেজিত হয়ে বাদী বিচারকের উদ্দেশ্যে জুতা নিক্ষেপ করেছে যা মোটেও প্রত্যাশিত নয়।’
পঞ্চগড় আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুল বারী বলেন, ‘আদালতে একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে। আমরা আইনজীবীরা বসে সিদ্ধান্ত নিয়ে বিষয়টি সুরাহা করার চেষ্টা করব।’