নোয়াখালীর কবিরহাট উপজেলার চাপরাশিরহাট পশ্চিম বাজারে পাহারাদারকে খুন করে দুটি স্বর্ণের দোকান লুটের ঘটনায় থলের বেড়াল বেরিয়েছে। জেলখানায় পরিচয়ের পর ডাকাতির পরিকল্পনা করেন ডাকাতির মূল হোতা শাহাদাত ও রনি। পরে জামিনে বের হয়ে তারা শুরু করেন একের পর এক ডাকাতি।
পরিকল্পনা অনুযায়ী শুক্রবার (৮ ডিসেম্বর) ভোরে কবিরহাট উপজেলার চাপরাশিরহাট ইউনিয়নের চাপরাশিরহাট পশ্চিম বাজারের মা-মনি জুয়েলার্স ও নুর জুয়েলার্সে স্বর্ণ লুট করেন তারা।
ডাকাতির ঘটনার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে এ দলের পাঁচ ডাকাত ও দুই সহযোগীকে গ্রেপ্তার করেছে নোয়াখালী জেলা পুলিশের একটি বিশেষ দল। এ সময় তাদের কাছ থেকে ডাকাতির ৬০ ভরি স্বর্ণ, ১৬০ ভরি রুপা, নগদ সাড়ে তিন লাখ টাকা, একটি দেশীয় পাইপগান, দুই রাউন্ড কার্তুজ, একটি গ্যাস সিলিন্ডার ও একটি পাইপ উদ্ধার করা হয়েছে।
সোমবার দুপুরে নিজ কার্যালয়ের সভাকক্ষে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য নিশ্চিত করেন নোয়াখালীর পুলিশ সুপার (এসপি) মো. শহীদুল ইসলাম।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- ডাকাতির ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী উপজেলার নদনা ইউনিয়নের জগজীবনপুর গ্রামের মৃত আব্দুর রহিমের ছেলে ৩২ বছর বয়সী শাহাদাত হোসেন এবং কবিরহাট উপজেলার কবিরহাট পৌরসভার জৈনদপুর গ্রামের মোশারফ বিএসসির বাড়ির মৃত শহীদুল্লার ছেলে ৩৬ বছর বয়সী মিজানুর রহমান ওরফে রনি। অন্যরা হলেন- লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার তোরাবগঞ্জ ইউনিয়নের চরপাগলা গ্রামের মৃত শহীদুল্লার ছেলে ৩৫ বছর বয়সী নোমান, নোয়াখালী জেলার সোনাইমুড়ী উপজেলার বজরা ইউনিয়নের সোলেমানের ছেলে ৩০ বছর বয়সী সাদ্দাম হোসেন ওরফে জিতু, বেগমগঞ্জ উপজেলার চৌমুহনী পৌরসভার করিমপুর এলাকার মৃত অলি উল্যার ছেলে ৩২ বছর বয়সী সালাউদ্দিন। এ ঘটনায় সহযোগিতার দায়ে দুই স্বর্ণ ব্যবসায়ী লক্ষ্মীপুর জেলার কমলনগর উপজেলার চর মার্টিন ইউনিয়নের পশ্চিম চর মার্টিন গ্রামের মোরশেদ আলমের ছেলে ২৭ বছর বয়সী মো. সুজন হোসেন এবং কমলনগর থানার হাজীরহাট ইউনিয়নের কৃঞ্চপুর গ্রামের ছৈয়াল বাড়ির সুভাষ চন্দ্র সরকারের ছেলে ৩২ বছর বয়সী কৃষ্ণ কমল সরকারকে গ্রেপ্তার হয়েছেন।
পুলিশের হাতে আটক ডাকাতদলের হোতাসহ সহযোগীরা। ছবি: নিউজবাংলা
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘গত শুক্রবার ভোরে ১০-১৫ জনের একটি ডাকাত দল চাপরাশিরহাট পশ্চিম বাজারে অস্ত্রের মুখে নৈশপ্রহরীসহ অন্যান্য চলাচলকারী লোকজনকে জিম্মি করে। এরপর প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে দুটি স্বর্ণের দোকানে স্বর্ণালংকার লুট করে। এ সময় ডাকাত দলকে বাধা দিলে নৈশপ্রহরী শহীদুল্লাহকে মাথায় আঘাত করে হত্যা করা হয়।’
তিনি বলেন, ‘এরপর ঘটনার গুরুত্ব অনুধাবন করে জেলা পুলিশের বেগমগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নাজমূল হাসান রাজীবের নেতৃত্বে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সদর সার্কেল মোর্তাহিন বিল্লাহ, ওসি কবিরহাট রফিকুল ইসলাম, ওসি ডিবি নাজিম উদ্দীন আহমেদ, কবিরহাট থানার ওসি তদন্ত, এসআই কৃষ্ণ কুমার দাস ও এসআই ফিরোজ আহমেদের সমন্বয়ে পুলিশের একটি বিশেষ দল গঠন করেন পুলিশ সুপার শহীদুল ইসলাম। ঘটনাটি তদন্তকালে দলটি সংবাদ পায়, ডাকাতদের বহনকারী পিকআপচালক নোমান লক্ষ্মীপুর জেলার কমলনগর থানা এলাকায় লুণ্ঠিত স্বর্ণ ও রুপা বিক্রির চেষ্টা করছেন। পরবর্তীতে পুলিশ নোমানের অবস্থান চিহ্নিত করে কমলনগর থানার মুন্সিরহাট এলাকা থেকে রোববার তাকে গ্রেপ্তার করে। এরপর তার দেয়া তথ্যানুযায়ী একই এলাকার স্বর্ণ ব্যবসায়ী সুজনকে তার বাড়ি থেকে আটক করা হয়।
‘জিজ্ঞাসাবাদে সুজন লুট করা স্বর্ণ ক্রয় ও বিক্রয়ে সহযোগিতা করার কথা স্বীকার করেন এবং তার কাছ থেকে ১৬০ ভরি রুপা উদ্ধার করা হয়। সুজনের দেয়া তথ্যানুযায়ী, কমলনগর থানার চরলরেন্স বাজারের স্বর্ণ ব্যবসায়ী কৃঞ্চ কমলের কাছ থেকে আরও ৬০ ভরি স্বর্ণালংকার উদ্ধার করা হয়।
‘নোমানের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী মূল পরিকল্পনাকারী শাহাদাত ও রনিকে আটক করা হয়। শাহাদাতের তথ্যমতে তার শ্বশুরবাড়ি থেকে স্বর্ণালংকার বিক্রির তার ভাগের সাড়ে তিন লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়।’
এসপি আরও বলেন, ‘গ্রেপ্তারকৃতরা জিজ্ঞাসাবাদে গত ১ ডিসেম্বর রাতে বেগমগঞ্জ থানার ছয়ানী এলাকার নুরুল হুদার গরুর খামার হতে পাঁচটি গরু চুরি করেছে বলেও স্বীকার করেন। ডাকাত দলের সর্দার শাহাদাতকে সঙ্গে নিয়ে কুমিল্লা জেলার চৌদ্দগ্রাম থানা এলাকা থেকে চুরি হয়ে যাওয়া চারটি গরু উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে বেগমগঞ্জ মডেল থানায় মামলা হয়। এ ছাড়া গত ৬ ডিসেম্বর দিবাগত রাতে কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর থানাধীন চাইলাকান্দি বাজারের ভক্ত স্বর্ণালয় ও কুব্বত আলী শিল্পালয়ে ডাকাতির ঘটনায় জড়িত ছিল বলে স্বীকার করেন তারা। এ বিষয়েও মুরাদনগর থানায় একটি মামলা হয়েছে। কবিরহাট থানায় করা হত্যা ও ডাকাতি মামলায় তাদের আদালতে পাঠানো হয়েছে।’