বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

জনগণের টাকায় প্রশাসন কর্তাদের বাণিজ্যিক আয়োজন

  • প্রতিবেদক, খুলনা   
  • ১১ ডিসেম্বর, ২০২৩ ১২:৪৫

টিআইবির সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) খুলনার সভাপতি অ্যাডভোকেট কুদরত-ই-খুদা বলেন, ‘যেটা জনগণের টাকায় নির্মিত হবে, সেটা জনগণের সম্পত্তি। সেটা কোনো সমিতির কাছে ছেড়ে না দিয়ে সরকারের কাছে রাখতে হবে। লভ্যাংশের টাকা জনগণের কল্যাণে ব্যয় করতে হবে। এটার লভ্যাংশ যদি সরকারি কর্মকর্তাদের সংগঠন পায়, তাহলে সেটা আমরা সরাসরি অনিয়ম বলব। এটা হওয়া উচিত নয়।’

খুলনা শহরে সরকারি অর্থায়নে (জিওবি খাত) বিলাসবহুল এডমিনিস্ট্রেটিভ কনভেনশন সেন্টার নির্মাণ প্রায় শেষের দিকে রয়েছে। ২০২৪ সালের জুনে নির্মাণ কাজ শেষ হলে বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস এসোসিয়েশনের (বিএএসএ) কাছে এটি হস্তান্তর করা হবে। পরবর্তী সময়ে বিএএসএর প্রতিনিধি হিসেবে খুলনা বিভাগীয় কমিশনার কনভেনশন সেন্টারটি পরিচালনা করবেন।

বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় থেকে জানা যায়, কনভেনশন সেন্টারটি পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বিএএসএর নেতৃত্বে একটি কমিটি থাকবে। যে কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করবেন খুলনা বিভাগীয় কমিশনার ও সদস্য সচিবের দায়িত্ব পালন করবেন খুলনা জেলা প্রশাসক।

প্রশাসনের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিএএসএ দায়িত্ব নেয়ার পরে সরকারের রাজস্ব বিভাগের সঙ্গে কনভেনশন সেন্টারের কোনো সম্পর্ক থাকবে না। অর্থাৎ সরকারের টাকায় নির্মাণ করা হলেও লভ্যাংশের কোনো টাকা সরকার পাবে না।

এমনকি সরকারের বিভিন্ন দপ্তর এটি ব্যবহার করতে হলেও ভাড়া পরিশোধ হবে। তবে সরকারি, আধাসরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের জন্য ভাড়ার পরিমান আলাদ আলাদা থাকবে। সেই হিসেবে সরকারি দপ্তরগুলি এটি ব্যবহারের জন্য কিছুটা ছাড় পাবে।

এ ছাড়া সম্প্রতি পরিকল্পনা মন্ত্রনালয়ের বাস্তবায়ন পরীক্ষণ ও মূল্যয়ন বিভাগ থেকে প্রকল্পটি পরিদর্শন করে একটি প্রতিবেদন তৈরী করেছে। তাতে বলা হয়েছে, এ প্রকল্পটি সরকারি অর্থ ব্যয়ে বাস্তবায়িত হলেও বিএএসএ নিকটে হস্তান্তর করা হচ্ছে।

তারা পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষনের দায়িত্ব পেলে ৩য় কোনো পক্ষকে ভাড় বা লিজ প্রদান করবে। এতে যা আয় আসবে তা বিএএসএ’র ফান্ডে জমা হবে। এক্ষেত্রে সরকারের রাজস্ব কোষাগারে কোনো অর্থ জমা হবে কি-না তা ডিপিপিতে স্পষ্ট করে লেখা নেই।

সরকারি অর্থ ব্যয়ে বাস্তবায়িত প্রকল্প থেকে সৃজিত আয় সরকারি কোষাগারে জমাদানের বিষয়টি নিশ্চিত করা প্রয়োজন।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) খুলনার সভাপতি অ্যাডভোকেট কুদরত-ই-খুদা বলেন, ‘যেটা জনগণের টাকায় নির্মিত হবে, সেটা জনগণের সম্পত্তি। সেটা কোনো সমিতির কাছে ছেড়ে না দিয়ে সরকারের কাছে রাখতে হবে। লভ্যাংশের টাকা জনগনের কল্যাণে ব্যয় করতে হবে। এটার লভ্যাংশ যদি সরকারি কর্মকর্তাদের সংগঠন পায়, তাহলে সেটা আমরা সরাসরি অনিয়ম বলবো। এটা হওয়া উচিত নয়।’

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব ও প্রকল্প পরিচালক আবু সায়েদ মো. মনজুর আলম বলেন, ‘আমার কাজ হলো শুধু এটা বানিয়ে দেয়া। তবে এটা কীভাবে রান করবে, সেটা নীতিনির্ধারণ পর্যায়ে চলছে। এখনও ফাইনাল সিদ্ধান্ত হয়নি। এ বিষয়ে আমি সংশ্লিষ্ট না।’

খুলনা বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় সূত্র জানায়, ২০১৮ সালের ৯ জানুয়ারি প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) অনুমোদিত হয়, যার প্রাক্কলিত ব্যয় ছিল ১২৬৯০৩৯২ টাকা। এর প্রশাসনিক অনুমোদন হয় ওই বছরেরই ৪ ফেব্রুয়ারি এবং পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ঢাকার বাস্তুকল্প আর্কিটেক্টস লিমিটেডের সঙ্গে চুক্তি হয় ১৮ এপ্রিল।

ওই বছরের ২৭ নভেম্বর দরপত্র আহবান এবং সরকারের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের ক্রয় বিভাগে অনুমোদন হয় ২০১৯ সালের ১৩ মার্চ। এরপর ওই বছরের ১৮ এপ্রিল ঠিকাদারের সঙ্গে চুক্তির মধ্য দিয়ে প্রকল্পের কাজ শুরু হয়, কিন্তু কাজ শুরুর এক বছরের মাথায় করোনার প্রকোপ দেখা দেয়ায় কিছুটা বিঘ্ন ঘটে।

এরপর প্রথম সংশোধনের মাধ্যমে ১৪৬২৭.৬৭ লক্ষ টাকা প্রাক্কলন ব্যয় ধরে ২০২১ সাল পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানো হয়। পরবর্তী সময়ে দ্বিতীয় সংশোধনের মাধ্যমে ২০২৩ সাল পর্যন্ত মেয়াদ বাড়িয়ে প্রাক্কলন ব্যয় ধরা হয় ১৫৯৩৩.৫৪ লক্ষ টাকা। অর্থাৎ তিনবার মেয়াদ বাড়িয়ে ৩ বছরে প্রাক্কলন ব্যয় বাড়ানো হয় ৩৪২.৬২ লক্ষ টাকা।

এ বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে নির্মাণ কাজ শেষ করার কথা থাকলেও বাস্তব অগ্রগতি হয়েছে মাত্র ৭৬ শতাংশ।

পরিকল্পনা মন্ত্রনালয়ের মূল্যায়ন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রকল্পটি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে ডিপিপিতে উল্লিখিত ক্রয় পরিকল্পনা ও কর্মপরিকল্পনা যথাযথভাবে অনুসরণ করা হয়নি। যে কারণে দুই বার সংশোধন করেও কাজ শেষ করা যাচ্ছে না।

এ ক্ষেত্রে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের তদারকি ঘাটতি ও প্রকল্প ব্যবস্থাপনায় চরম দুর্বলতা ও উদাসীনতা হয়েছে বলে প্রতীয়মান হয়।

প্রকল্পের দ্বিতীয় সংশোধনীতে ১১৩৮.৩৩ লক্ষ টাকা ভূমি অধিগ্রহন বাবদ ধরা হয়েছিল। তবে মেয়াদ শেষ শেষ পর্যায়ে থাকলেও সেই টাকা কোথাও খরচ করা হয়নি। অন্যদিকে, যে ৬১ শতক জয়গায় কনভেনশন সেন্টার নির্মাণ করা হচ্ছে, সেটি সরকারি খাস জমি ছিল।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এল.এ) আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘কনভেনশন সেন্টারেটি খাস জমিতে নির্মিত হচ্ছে। তবে পাশে গাড়ি পার্কিংয়ের জায়গার জন্য আমরা আরও ১২ শতক জমি অধিগ্রহণ করছি। সেখানে বহুতল ভবন রয়েছে। তাই অধিগ্রহণে বেশ অর্থ খরচ হবে।

‘আমরা ওই স্থানের ফিল্ড বুক তৈরীর করেছে। গণপূর্ত বিভাগ থেকে ভবনের দাম নির্ধারিত হলেই মালিকদের সম্পত্তির মূল্য পরিশোধ করা শুরু হবে। সব মিলে কিছুদিনের মধ্যে অধিগ্রহণের সব কাজ শেষ হয়ে যাবে।’

নির্মাণের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক আবু সায়েদ মো. মনজুর আলম বলেন, ‘আমাদের ১৭ থেকে ২০ শতাংশ কাজ বাকি আছে। ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত নির্মাণকাজের সময় বৃদ্ধির জন্য আবেদন করা হয়েছে। আশা করছি ওই জুনের মধ্যে সব কাজ শেষ করতে পারব।’

তিনি বলেন, মূল ভবনের দৃশ্যমান কাজ শেষ হয়ে গেছে। অভ্যন্তরীণ ফার্নিচারও কেনা শেষ হয়ে গেছে। এখনও পার্কিংয়ের জমি অধিগ্রহণের কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে।

এ বিভাগের আরো খবর