মেহেরপুর-২ (গাংনী) আসনের দুইবারের সংসদ সদস্য (এমপি) ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মকবুল হোসেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন চেয়ে পাননি মকবুল, তবে সেবার তিনি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেননি।
২০০১ ও ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে মকবুল আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে করে পরাজিত হয়েছিলেন। তিনি ১৯৯৬ ও ২০১৪ সালের সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিয়ে হন বিজয়ী।
আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছিলেন মকবুল, তবে আওয়ামী লীগ দলীয়ভাবে তার ডাকে সাড়া না দেয়ায় এবারও তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দেন। যাচাই-বাছাইয়েও পেয়েছেন মনোনয়নপত্রের বৈধতা।
আগামী নির্বাচন উপলক্ষে দেয়া হলফনামা অনুযায়ী, এ প্রার্থীর আয়ের কোনো উৎস নেই। তার মালিকানাধীন কোনো বাড়ি, গাড়ি, এমনকি কৃষিজমিও নেই। স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি আছে নামমাত্র।
নির্বাচনের হলফনামায় তার বার্ষিক আয়, স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের যে বিবরণী পাওয়া গেছে, তা বিশ্লেষণ করে এসব তথ্যই মিলেছে।
হলফনামা অনুযায়ী, যৌথ মালিকানার তিন কাঠা জমি ছাড়া মকবুল হোসেনের আর কোনো স্থাবর সম্পদ নেই।
২০১৩ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় দেয়া হলফনামায় মকবুল এবং তার স্ত্রীর কোনো স্থাবর সম্পত্তি ছিল না। ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে ব্যবসা থেকে তার বার্ষিক আয় ছিল দুই লাখ ২১ হাজার টাকা। এখন তা কমে দাঁড়িয়েছে শূন্যের কোঠায়।
হলফনামা অনুযায়ী, বর্তমানে মকবুল হোসেনের বার্ষিক কোনো আয় নেই। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে তার ও তার স্ত্রীর জমাকৃত কোনো টাকা কিংবা বন্ড ও সঞ্চয়পত্র নেই।
বতর্মানে মকবুল ও স্ত্রীর নগদ টাকা রয়েছে যথাক্রমে তিন লাখ ও ৫০ হাজার। তার গৃহস্থালি সামগ্রীর মূল্য ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা।
মকবুলের স্বর্ণ রয়েছে ৪০ ভরি। তার স্ত্রীর স্বর্ণ রয়েছে ১০ ভরি।
২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে মকবুলের বার্ষিক আয় ছিল দুই লাখ ২১ হাজার টাকা। আয়ের খাত ছিল ব্যবসা। নগদ ছিল ৯ লাখ ৭৮ হাজার টাকা। সে সময় তার ৪০ ভরি স্বর্ণ ছিল এবং গৃহস্থালি সামগ্রী ছিল ৫০ হাজার টাকার।
ওই বছর তার স্ত্রীর নামে কোনো স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি ছিল না। ছিল না কোনো স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকা।
হলফনামা অনুযায়ী, মকবুল হোসেনের বর্তমান স্থাবর সম্পদ বলতে যৌথ মালিকানার তিন কাঠা জমি এবং যৌথ মালিকানার পাকা দোতলা বাড়ি ছাড়া আর কিছু নেই। অবশ্য দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় তার কোনো স্থাবর সম্পদ ছিল না।
স্থানীয়দের প্রতিক্রিয়া
দুইবারের এমপি বীর মুক্তিযোদ্ধা মকবুল হোসেনের এমন হলফনামা দেয়ার কথা শুনে আওয়ামী লীগের অনেক নেতা-কর্মীই বিরূপ মন্তব্য করেছেন।
স্থানীয় আওয়ামী লীগের কর্মী সালাউদ্দিন বলেন, ‘এখন গণমাধ্যমের মাধ্যমে হলফনামা সমন্ধে জানতে পারছি। আগে এগুলো নিয়ে কারোর মাথাব্যথা ছিল না। এখন বুঝতে পারছি সংসদ সদস্য নির্বাচনে হলফনামায় তথ্য দেয়ার ক্ষেত্রে নেতারা যত মিথ্যা তথ্য দিয়ে থাকেন।
‘এটা আসলে ঠিক না। যারা তথ্য চুরি করে হলফনামা দিতে পারে, তারা জনগণকে আর কীইবা দিতে পারে?’
আওয়ামী লীগের কর্মী বিপুল হোসেন বলেন, ‘সাবেক এমপি মকবুল হোসেনের আয়ের উৎস নেই, এটা কেমন কথা! তাহলে উনি চলেন কীভাবে?
‘আর তার কোনো ব্যাংকে টাকা নেই, এটা ঠিক। টাকা যদি ছেলেদের অ্যাকাউন্টে থাকে, তাহলে তার অ্যাকাউন্টে থাকবে কীভাবে?’