বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

জেলার ভেতরে ওসিদের বদলি: বিরোধী প্রার্থী-সমর্থকদের শঙ্কা

  • প্রতিনিধি, মানিকগঞ্জ   
  • ৯ ডিসেম্বর, ২০২৩ ১২:৪৭

এ বিষয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিক জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. জাহাঙ্গীর আলম বিশ্বাস বলেন, ‘ওসি ও ইউএনওদের বদলি নির্বাচনে কোনো সুফল আনবেনা। কারণ ওসিরা দীর্ঘদিন একই জেলায় থাকায় বিভিন্ন কারণে আগে থেকেই এমপিদের সঙ্গে একটা সুসর্ম্পক তৈরি হয়েছে। সুতরাং থানা বদলি হলেও প্রার্থীদের কোনো সমস্যা হবেনা। তাছাড়া জেলার মূল এসপি-ডিসির তো বদলি হয় নাই।’

আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে মানিকগঞ্জের সাতটি থানার ওসি ও তিনটি উপজেলার ইউএনও-কে বদলি করা হয়েছে। ইউএনওদের বদলি নিয়ে তেমন আলোচনা না হলেও ওসিদের জেলায় ভেতরেই বিভিন্ন থানায় বদলি হওয়ায় প্রার্থী, সমর্থক ও সচেতনমহলে চলছে নানান সমালোচনা।

পুলিশ সদর দপ্তরের পার্সোনেল ম্যানেজমেন্ট শাখা-২ এর অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক আদেশে বৃহস্পতিবার তাদেরকে বদলি করা হয়েছে।

এর আগে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সুষ্ঠ করার লক্ষ্যে সারাদেশের ৩৩৮টি থানার ওসিকে বদলির চেয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগে প্রস্তাব করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। বদলির অনুমোদন হওয়ার পর এসব থানার ওসিদের বদলি করা করা হয়।

জননিরাপত্তা বিভাগের বদলি আদেশপত্রে জানা যায়, মানিকগঞ্জের শিবালয় থানার ওসি শাহ নূর-এ আলমকে হরিরামপুর থানায়, ঘিওর থানার ওসি মো. আমিনুর রহমানকে সিংগাইর থানায়, দৌলতপুর থানার ওসি সফিকুল ইসলাম ইসলাম মোল্যাকে সাটুরিয়া থানায়, সিংগাইর থানার ওসি সৈয়দ মিজানুর রহমানকে মানিকগঞ্জ সদর থানায়, হরিরামপুর থানার ওসি সুমন কুমার আদিত্যকে দৌলতপুর থানায়, মানিকগঞ্জ সদর থানার ওসি মো,আব্দুর রউফ সরকারকে শিবালয় থানায় এবং সাটুরিয়া থানার ওসি সুকুমার বিশ্বাসকে ঘিওর থানায় বদলি করা হয়েছে।

এ ছাড়াও মানিকগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার জ্যোতিশ্বর পালকে ফরিদপুরের আলফাঙ্গা উপজেলায়, শিবালয় উপজেলার নির্বাহী অফিসার মো.জাহিদুর রহমানকে টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলায় এবং সিংগাইর উপজেলার নির্বাহী অফিসার দিপন দেবনাথকে নারায়নগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে বদলি করা হয়েছে।

জেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা যায়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মানিকগঞ্জের তিনটি আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ থেকে মানিকগঞ্জ-১ আসনে আব্দুস সালাম, মানিকগঞ্জ-২ আসনে মমতাজ বেগম ও মানিকগঞ্জ-৩ আসনে জাহিদ মালেকসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ২১ জন প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন।

জেলার ভেতরেই ওসি বদলের বিষয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও সমর্থকদের অধিকাংশ খুশি হলেও স্বতন্ত্রসহ অন্য রাজনৈতিক দলের প্রার্থী ও সমর্থকরা বলছেন ভিন্ন কথা।

এ বিষয়ে গণফোরামের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ও মানিকগঞ্জ-৩ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী অধ্যক্ষ মফিজুল ইসলাম খান কামাল বলেন, ‘ওসিদের যেহেতু বদলিই করা হয়েছে তাহলে জেলার ভেতরে বদলি না করে অন্য জেলায় বদলি করা উচিত ছিল। আমার দৃষ্টিতে একটা বদলি না, এটা শুধুমাত্র লোক দেখানো বদলি।’

মানিকগঞ্জ-১ আসনের স্বতন্ত্রপ্রার্থী সালাউদ্দিন মাহমুদ জাহিদ বলেন, ‘ওসিদের বদলি করেছে, এটা ভালো সিদ্ধান্ত। তবে জেলার ভেতরে বদলি না হলে ভালো হতো। কারণ মানিকগঞ্জের সাতটি থানার ওসিরা দীর্ঘদিন ধরে এক থানায় থেকে আরেক থানায় আছে। সুতরাং মানিকগঞ্জ জেলার তিনটি আসনের বর্তমান এমপি ও প্রার্থীদের সঙ্গে তাদের পূর্ব পরিচয় রয়েছে।

জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা গাজী কামরুল হুদা সেলিমও তাদের সঙ্গে একমত প্রকাশ করে বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন চাইলে ওসি বা ইউএনওদের বদলি না করেই সুষ্ঠ নির্বাবচন করতে পারবেন। যেহেতু বদলি করা হয়েছে, সুতরাং এটাকে খারাপ নজরে দেখার সুযোগ নেই। কিন্তু যেসকল ওসিদের একই জেলার বিভিন্ন থানায় বদলি করা হয়েছে। সেকল ওসিদের সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রার্থীদের অল্প সময়ের মধ্যেই নির্বাচন প্রভাবিত করা সম্ভব।’

তবে ওসিদের এমন বদলিতে খুশি মানিকগঞ্জ-২ আসনে আওয়ামী লীগের এমপি প্রার্থী মমতাজ বেগম। তিনি বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন যা করেছেন, সেটা ভালোই করেছেন। আমরা নির্বাচন কমিশনের আদেশ মেনে নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণা করে আসছি। আশা করি ওসিদের বদলিতে আমার কোনো সমস্যা হবে না। কারণ ভোট তো দিবেন ভোটাররা।’

এ বিষয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিক জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. জাহাঙ্গীর আলম বিশ্বাস বলেন, ‘ওসি ও ইউএনওদের বদলি নির্বাচনে কোনো সুফল আনবেনা। কারণ ওসিরা দীর্ঘদিন একই জেলায় থাকায় বিভিন্ন কারণে আগে থেকেই এমপিদের সঙ্গে একটা সুসর্ম্পক তৈরি হয়েছে। সুতরাং থানা বদলি হলেও প্রার্থীদের কোনো সমস্যা হবেনা। তাছাড়া জেলার মূল এসপি-ডিসির তো বদলি হয় নাই।’

নাম প্রকাশে একাধিক দলের রাজনৈতিক ব্যক্তিরা জানান, মানিকগঞ্জের সাতটি থানার ওসিরা দীর্ঘদিন ধরে মানিকগঞ্জের বিভিন্ন থানায় আছেন। অনেক থানার ওসি আছেন, যারা রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে রাজনৈতিক বক্তব্য দিয়েছে। যেসকল ওসিদের বদলি করা হয়েছে, এদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার অভিযোগ রয়েছে।

তাই আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ওসিরা যে প্রভাবিত হবেন না বা অতিউৎসাহিত হয়ে কারো পক্ষে কাজ করবেন না, সেটা বিশ্বাস করার সুযোগ নাই।

তবে এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং অফিসার রেহেনা আকতার এবং জেলা নির্বাচন অফিসার মুহাম্মদ আমিনুর রহমান মিঞার সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয় নি।

জানুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সুষ্ঠ করার লক্ষ্যে বর্তমান কর্মস্থলে ছয় মাসের বেশি চাকরির মেয়াদ হয়েছে, সেসকল থানার ওসি এবং ইউএনওদের বদলি চেয়ে গত ৩০ নভেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগে প্রস্তাব পাঠায় নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এরপর প্রস্তাবটি পাশ হওয়ায় ওসি এবং ইউএনওদের বদলি করা হয়েছে।

এ বিভাগের আরো খবর