বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

সড়কে ঝরে গেলেন জীবনযুদ্ধে হার না মানা রুবেল

রুবেলের ছোট ভাই সোহেল পারভেজ বলেন, ‘এত কষ্টের মধ্যেও ভাইয়া জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স-মাস্টার্স করেছে। দুই বছর হলো বিয়ে করছে ভাইয়া। ১৮ মাসের একটা মেয়েও আছে তার।’

ছোটবেলায় বাবাকে হারিয়ে সংসারের দায়িত্ব কাঁধে নেন। পড়াশুনার পাশাপাশি টিউশনের উপার্জনে চলত পরিবারের খরচ আর তিন ভাই-বোনের লেখাপড়া।

শত কষ্টের মধ্যেও জীবনযুদ্ধে হার না মানা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী রুবেল পারভেজ। সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন ৪১তম বিসিএসে। কিন্তু রুবেলে এত সংগ্রাম আর জীবনযুদ্ধের পথ শেষ হয়ে গেছে নিমিষেই।

বাসের চাকা পিষ্ট করেছে রুবেলের দেহ। ছিন্নবিচ্ছিন্ন দেহ নিয়ে রুবেল প্রাণ হারিয়েছেন সড়কে।

দেড় বছরের শিশু রাইসা হারাল তার বাবাকে। স্ত্রী, মা আর ভাই-বোন পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে এখন শুধুই চোখের পানি ফেলছেন।

এদিকে সেলফি পরিবহনের চাপায় রুবেলের মৃত্যুর ঘটনায় শোক নেমে এসেছে তার সহপাঠী ও প্রিয়জনদের মাঝে। কেউই মেনে নিতে পারছেন না তার এই মৃত্যু। বিচার ও ক্ষতিপূরণ দাবি করে তারা বয়কটের দাবি তুলেছেন রুবেলকে পিষ্ট করে হত্যায় অভিযুক্ত সেলফি পরিবহনকে।

ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে ঢাকার ধামরাইয়ের থানারোড এলাকায় বৃহস্পতিবার সকাল ৯টার দিকে সেলফি পরিবহনের দুই বাসের রেষারেষিতে প্রাণ হারান জাবি শিক্ষার্থী রুবেল পারভেজ।

একই দুর্ঘটনায় আব্দুল মান্নান নামে আরেক যুবক প্রাণ হারিয়েছেন। গুরুতর আহত আরেকজন ভর্তি আছেন হাসপাতালে।

৩২ বছর বয়সী রুবেল পারভেজ ধামরাই পৌরসভার পাঠানতোলা এলাকায় স্ত্রী-সন্তান নিয়ে ভাড়া বাসায় বসবাস করতেন। মানিকগঞ্জে মার্কেন্টাইল ব্যাংকে এক্সিকিউটিভ অফিসার হিসেবে কর্মরত ছিলেন তিনি। টাঙ্গাইল জেলার মির্জাপুর থানার মোকছেদ আলীর ছেলে রুবেল সম্প্রতি ৪১তম বিসিএস এ সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছিলেন।

রুবেলের বন্ধু ননী গোপাল বলেন, ‘ছোটবেলায় বাবাকে হারানোর পর থেকেই রুবেল ওর পরিবারের দায়িত্ব নিয়েছে। টিউশনি করে খরচ চালিয়েছে, নিজে পড়াশুনা করেছে। সবশেষ বিসিএসে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘ধামরাইয়ে ২০০৭ সাল থেকেই ভাড়া বাসায় বসবাস করত রুবেল। আমরা একসঙ্গে কলেজে পড়েছি। ওর দেড় বছরের রাইসা নামে একটা মেয়ে আছে। ওর স্ত্রী ফারজানা অনার্সে অধ্যয়নরত। কোনোভাবেই ওর মৃত্যু আমরা মেনে নিতে পারছি না।’

রুবেলের ছোট ভাই সোহেল পারভেজ বলেন, ‘ছোটবেলায় আমাদের বাবা মারা যান। তখন থেকেই ভাইয়া সংগ্রাম করে লেখাপড়া করছে। আমাদের তিন ভাই ও এক বোনের পড়া এবং সংসারের খরচ টিউশনি করে ভাই চালাত।

‘এত কষ্টের মধ্যেও ভাইয়া জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স-মাস্টার্স করেছে। দুই বছর হলো বিয়ে করছে ভাইয়া। ১৮ মাসের একটা মেয়েও আছে তার।’

তিনি বলেন, ‘আমার ভাইকে সড়কে হত্যা করা হয়েছে। এটা কোনো দুর্ঘটনা হতে পারে না। আমরা এই হত্যার বিচার চাই।’

এদিকে রুবেল পারভেজের মৃত্যুর সংবাদ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে শোক নেমে এসেছে তার সহপাঠী, বন্ধু ও প্রিয়জনদের মাঝে। রুবেলের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ ও সেলফি পরিবহনের রুট পারমিট বাতিলসহ বয়কটের ডাক দিয়েছেন তারা।

জাব্বার হোসেন নামে একজন তার ফেসবুকে লিখেছেন, ‘রুবেল ভাইয়া আপনার এমন মৃত্যু মানতে পারছি না। মাথায় আকাশ ভেঙে পরার মতো অবস্থা। ক্লাস ৬ থেকে ১২ পর্যন্ত ভাইয়ার কাছ থেকে গনিত শিখে এসেছি।’

রুবেল ব্যক্তিগত জীবনে লেখালেখির সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন বলে জানান তার পরিবার।

এ বিভাগের আরো খবর