বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

একই ভবনে স্কুল ও পুলিশ ক্যাম্প, আতঙ্কে শিক্ষার্থীরা

  • প্রতিনিধি, আনোয়ারা (চট্টগ্রাম)   
  • ২ ডিসেম্বর, ২০২৩ ১৫:২৪

পরৈকোড়া পুলিশ ক্যাম্পের বিষয়ে ইনচার্জ এসআই কাজী দুলাল বলেন, ‘চট্টগ্রাম রেঞ্জ থেকে প্রতি মাসের রোটেশনে আমরা দায়িত্ব পালন করতে আসি এখানে। এখানে আমিসহ ১২ জন দায়িত্ব পালন করছি। কোনো সদস্য বাচ্চাদের ধমক দেয়া হয়নি কিংবা তাদের ভয় হয় এমন আচরণ আমাদের সদস্যরা করেননি।’

বিদেশি অনুদানপ্রাপ্ত সাইক্লোন সেল্টারটি তিনতলা বিশিষ্ট হলেও নিচতলাটা দুর্যোগ মোকাবিলার জন্য উন্মুক্ত। তৃতীয় তলা পুরোটা নিয়েই পুলিশ ক্যাম্প। দ্বিতীয় তলায় চলছে শিক্ষা কার্যক্রম।

চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার পরৈকোড়া ইউনিয়নের পূর্ব কন্যারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চিত্র এটি।

এখানে বেশিরভাগ শিক্ষার্থীদের মধ্যেই নেই শিশুদের স্বভাবজাত চপলতা। কেমন যেন এক বিষন্নতা তাদের চেহারায়। দুই-একজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে কারণটা জানা গেল।

পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী তন্বিমা দে বলল, ‘স্কুলে খুব ভয় লাগে, আমরা খেলতে পারি না। একটু হইচই হলে উনারা বকা দেয়। আর উনারা হঠাৎ হঠাৎ এমন ভাবে নাম-ধাম জিজ্ঞাসা করেন, গলার পানি শুকিয়ে যায়। বিভিন্ন সময় লজেন্স দিতে চায়, আমরা নিব না বললে বেঁধে নিয়ে যাবে বলে ভয় দেখান।’

বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা রুমাশ্রী মল্লিক বলেন, ‘বাচ্চাদের নিয়ে বারান্দায় চট পেতে বসে পাঠদান করছি। তিনটি কক্ষে তৃতীয়, চতুর্থ, পঞ্চম শ্রেণির পাঠদান করতে হচ্ছে, তাই বাধ্য হয়ে বারান্দায় পাঠদান চলছে।’

সরেজমিনে গিয়ে বুধবার দেখা যায়, শিশুরা টিফিনের সময়ও শ্রেণিকক্ষে জড়সড় হয়ে বসে আছে। অথচ এ সময়টাতে বাচ্চাদের দাপিয়ে বেড়ানো, খেলাধুলায় মেতে থাকার কথা।

তৃতীয় তলায় দেখা গেল পুলিশ সদস্যদের কেউ ক্যারম খেলছেন, কেউ বসে ভাত খাচ্ছেন, আবার কেউ গল্প করছেন। চারপাশে সিগারেটের খালি প্যাকেট। রান্না ঘরের দেয়াল নোংরা। বাইরে থেকে রঙিন হলেও ভেতরের চিত্র ভিন্ন।

স্কুলের অভ্যন্তরে এ পরৈকোড়া পুলিশ ক্যাম্পের বিষয়ে ইনচার্জ এসআই কাজী দুলাল বলেন, ‘চট্টগ্রাম রেঞ্জ থেকে প্রতি মাসের রোটেশনে আমরা দায়িত্ব পালন করতে আসি এখানে। এখানে আমিসহ ১২ জন দায়িত্ব পালন করছি। কোনো সদস্য বাচ্চাদের ধমক দেয়া হয়নি কিংবা তাদের ভয় হয় এমন আচরণ আমাদের সদস্যরা করেননি।

‘অতীতে কারা দায়িত্ব পালন করেছে, তারা আদৌ এমন কিছু করেছে কি না আমাদের জানা থাকার কথা নয়। আমরা ওসি মহোদয়ের নির্দেশনায় দৈনন্দিন দায়িত্ব পালন করি। কোনো ধরনের অভিযোগ থাকলে তা আমাদের ঊর্ধ্বতনকে জানাতে পারেন।’

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) জসীম উদ্দীন বলেন, ‘মাত্র চারটি কক্ষ নিয়ে অফিস, শ্রেণি কার্যক্রম চালাতে বেগ পেতে হচ্ছে। পাশাপাশি বাচ্চাদের মধ্যে পুলিশ আতঙ্ক কাজ করছে। আপনি তো জানেন গ্রামের বাচ্চারা পুলিশ নামকেই ভয় পায়। সেখানে তাদের স্কুলেই পুলিশের বসবাস। এটা তাদের কোমল মনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। তাদের স্বতঃস্ফূর্ততা কমে গেছে।’

স্থানীয় চেয়ারম্যান আজিজুল হক চৌধুরী বাবুল বলেন, ‘বিষয়টি বিগত দুটি মাসিক সমন্বয় মিটিংয়ে উপস্থাপন করেছি। ইউএনও মহোদয় এ স্থান পরিদর্শন করেছেন। বাজারে একটি ভবন খালি আছে। আমরা সেখানে স্থানান্তরের সুপারিশ করেছি। আশা করছি একটা সমাধান হবে।’

উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার সানাউল্লাহ কাউছার বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে আমরা কাজ করছি। ইউএনও মহোদয়কে অবহিত করা হয়েছে। নির্বাচনের পরপর এটি সরিয়ে নেয়ার আশ্বাস পেয়েছি।’

এ বিয়ে আনোয়ারা থানার ওসি সোহেল আহমেদ বলেন, ‘স্থানীয়দের নিরাপত্তার জন্য ১৯৯৫ সালে এখানে ক্যাম্প স্থাপিত হয়, কখনো কোনো অভিযোগ আসেনি। যেহেতু বিষয়টা নিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা উদ্বিগ্ন, তাই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও ইউএনও মহোদয়ের পরামর্শে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে দ্রুতই।’

এ বিভাগের আরো খবর