জামালপুরবাসীর দীর্ঘদিনের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে বিজয়ের মাসে চালু হল চট্টগ্রাম-জামালপুর আন্তঃনগর রেল ‘বিজয় এক্সপ্রেস’।
জামালপুর রেলষ্টেশন থেকে শুক্রবার রাত ৮ দশ মিনিটে চট্টগ্রামের উদ্দেশে ছেড়ে যাবে বিজয় এক্সপ্রেস। এরই মধ্যে বিজয় এক্সপ্রেস চলাচলের সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে রেলওয়ে কতৃপক্ষ।
রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ জানায়, বিজয় এক্সপ্রেস জামালপুর-চট্টগ্রাম রুটে চলাচলকারী প্রথম আন্তঃনগর ট্রেন। এর আগে এটি ময়মনসিংহবাসীর দাবির প্রেক্ষিতে ২০১৪ সালের ১৯শে ডিসেম্বর ময়মনসিংহ-চট্টগ্রাম রুটে যাত্রা শুরু করে। জামালপুরবাসীর দীর্ঘ দিনের দাবি ও আন্দোলনে রেল কর্তৃপক্ষ এ ট্রেনের রুট বর্ধিত করে জামালপুর-চট্টগ্রাম পর্যন্ত যাত্রা শুরু হলো।
৩৪০ কিলোমিটার দুরত্বের এ রুটে বিজয় এক্সপ্রেসে শোভন চেয়ার, এসি চেয়ার, এসি কেবিন ও নন এসি কেবিন সম্বলিত আসন ব্যবস্থা থাকবে। সর্বনিম্ন শোভন চেয়ারের ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ৪৩০ টাকা এবং সর্বোচ্চ এসি কেবিনের ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ১৪৭৮ টাকা।
এ ট্রেনে জামালপুর থেকে ২১৭টি টিকিট বরাদ্দ রয়েছে। প্রতিদিন রাত ৮টা ১০ মিনিটে জামালপুর রেলওয়ে জংশন থেকে ছেড়ে গিয়ে পিয়ারপুর, ময়মনসিংহ, গৌরিপুর, আঠারবাড়ি, কিশোরগঞ্জ, সরারচর, ভৈরব, আখাউড়া, কুমিল্লা, লাকসাম, ফেনী, ভাটিয়ারী যাত্রা বিরতি শেষে ভোর ৫টায় চট্টগ্রাম রেলওয়ে জংশনে পৌঁছাবে।
অপরদিকে চট্টগ্রাম থেকে সকাল ৯টা পনের মিনিটে চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে সন্ধ্যা ৬টা দশ মিনিটে জামালপুরে পৌঁছার কথা রয়েছে। মঙ্গলবার বাদে সপ্তাহে ৬ দিন নিয়মিতভাবে এই রুটে যাতায়াত করবে এই ট্রেন।
বিজয় এক্সপ্রেস চালু হওয়াতে বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামের সঙ্গে যোগাযোগে দুরত্ব ও ভাড়া কমার পাশাপাশি ব্যবসা বাণিজ্য ও পর্যটনের প্রসার ঘটবে বলে আশা করছেন স্থানীয়রা।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আদিত্য রহমান বলেন, ‘পড়াশোনার জন্য তিন বছর আমি চট্টগ্রামে যাতায়াত করছি। এতদিন ভেঙ্গে ভেঙ্গে জামালপুর থেকে চট্টগ্রাম যাওয়া লাগত। এতে খরচটা বেশি হত। শিক্ষার্থী হিসেবে এখন আমাদের জন্য খরচ ও ভোগান্তি কম হবে।’
চট্টগ্রামের মেয়ে সামিহা সুলতানা বলেন, ‘বিয়ের পর ১২ বছর যাবত স্বামীর বাড়ি জামালপুর আছি। এখান থেকে সরাসরি ট্রেন যোগাযোগ না থাকায় বছরে ১ বার বাবার বাড়ি যেতাম। অনেক সময় প্রয়োজনেও যাওয়া হতো না। এখন বিজয় এক্সপ্রেস ট্রেন চালু হওয়াতে আশা করছি সহজেই যেতে পারবো। ট্রেন চালু হওয়াতে আমার বাচ্চারা সবচেয়ে বেশি খুশি হয়েছে। কারণ তারা এখন ইচ্ছা করলেই নানা বাড়ি যেতে পারবে।’
প্রায় ১০ বছর ধরে আন্তঃনগর বিজয় এক্সপ্রেস ময়মনসিংহের পরিবর্তে জামালপুর থেকে ছেড়ে যাওয়ার দাবি করে আসছিলেন স্থানীয়রা। সম্প্রতি বিজয় এক্সপ্রেসের স্টারটিং পয়েন্ট জামালপুর রেলওয়ে জংশন করার সিদ্ধান্ত নেয়ায় খুশির জোয়ার বইতে শুরু করে জেলাবাসীর মধ্যে। এমন খবরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রেলওয়ে বিভাগকে ধন্যবাদ জানিয়ে পোস্ট করেছেন অনেকে।
জামালপুর রেলওয়ে স্টেশনের সহকারী স্টেশন মাস্টার মো. উজ্জল শেখ জানান, চলতি মাসের ১৫ নভেম্বর চট্টগ্রাম রেলওয়ে বিভাগের সহকারী চীফ অপারেটিং সুপারিন্টেন্ডেন্ট (এফ) (পূর্ব) কামাল আক্তার হোসেন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে ওয়ার্কিং টাইম টেবিল-৫৩ আন্তঃনগর ট্রেনের সময়সূচি পরিবর্তন করা হয়।
সেখানে বিজয় এক্সপ্রেসের স্টারটিং পয়েন্ট ময়মনসিংহের পরিবর্তে জামালপুর করা হয়। বিজয় এক্সপ্রেস ট্রেন চলাচলের সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। ইতোমধ্যে অনলাইনে টিকেট যথারীতি ছাড়া হয়েছে। আজ থেকে আন্তঃনগর বিজয় এক্সপ্রেস জামালপুর থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাবে।
জামালপুর চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাট্রিজ এর সহ-সভাপতি মো: ইকরামুল হক নবীন বলেন, ‘ময়মনসিংহ বিভাগের একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক অঞ্চল হচ্ছে জামালপুর জেলা। বিশেষ করে কৃষি, শিল্প-বাণিজ্য, বিপণনসহ নানা ক্ষেত্রে দেশের অন্য যেকোনো জেলার চাইতে কোনো অংশেই কম নয়। বিজয় এক্সপ্রেস ট্রেন চালু হওয়াতে জামালপুর থেকে এখন দ্রুত সময়ে পণ্য আনা-নেয়ার পাশাপাশি অর্থ সাশ্রয় হবে এবং ভোগান্তি কমবে।’
জামালপুরের লোহা ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘লোহার কাঁচামাল ও বিভিন্ন রকমের মেশিনারিজ যন্ত্র চট্টগ্রাম থেকে আনতে হয়। তাই আমাদের যাতায়াত সহজ হলে অল্প সময়ে আসা যাওয়া করতে পারব। দীর্ঘদিনের আন্দোলনের ফসল বিজয় এক্সপ্রেস ট্রেন বিজয়ের মাসে আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হওয়াতে বর্তমান সরকার কে ধন্যবাদ জানাই।’