স্কুলে স্কুলে শিক্ষার্থীদের মাঝে লিফলেট দিয়ে নারীদের কারিগরি প্রশিক্ষণ নেয়ার আহ্বান। পাশাপাশি এলাকাজুড়ে করা হয় চটকদার মাইকিংও। দর্জির কাজ শেখানো শেষে আগ্রহী নারীদের সেলাই মেশিন দেয়ার কথা বলে অর্ধকোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা করতোয়া কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের পরিচয়দানকারী প্রতারকচক্র।
এ ঘটনার বিচার চেয়ে থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী নারীরা। আর তাদেরকে অভিযুক্তদের আইনের আওতায় আনার আশ্বাস পুলিশ সুপারের।
কী বলছেন ভুক্তভোগীরা
ভুক্তভোগী এক নারীর মাদারীপুর পৌর শহরের পাকদী এলাকার নুপুর আক্তার। স্বল্প দামে সেলাই মেশিন পাওয়ার আশায় প্রথমে ১০০ টাকা, পরে আরও ৫ হাজার টাকা দেন তিনি। তবে সেলাই মেশিন পাওয়া তো দূরে থাক, কষ্টের অর্জিত টাকাটাও ফেরত পেলেন না তিনি।
তিনি বলেন, ‘পাকদী এলাকায় অন্তত ২০ জনের কাছ থেকে ৫ হাজার করে টাকা নিয়ে পালিয়েছে প্রতারকরা। পাশের ঘটমাঝি এলাকা থেকে অন্তত একশ’ মেয়েদের থেকেও টাকা নেয়া হয়েছে। এমন প্রতারণার জন্যে দায়ীদের বিচারের আশায় সদর থানায় লিখিত অভিযোগও দিয়েছি। তবে প্রতারকদের এখনো গ্রেপ্তার করা হয়নি। আমাদের দাবী, যেন দ্রুত তাদের ওই দলকে গ্রেপ্তার করা হয়।
শুধু তিনিই যে এমন পরিস্থির শিকার এমন না। তার পাশাপাশি এমন ঘটনার শিকার আরও অন্তত দেড় হাজার নারী। তারা সকলেই আর্থিক ক্ষতির শিকার।
একাধিক ভূক্তভোগীর অভিযোগ, গত ১০ সেপ্টেম্বর সদর উপজেলার ঘটমাঝি, দুধখালী, মধ্য খাগদী, পাকদি, হাউসদি সহ বিভিন্ন গ্রামের বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে লিফলেট বিতরণ করে একটি কিছু লোক। পরে মাইকিং করে বিদ্যালয়ে এলাকার নারীদের দর্জির কাজ শেখার আহবান জানান তারা। প্রথমে সদস্য ফি ১০০ টাকা ও প্রয়োজনীয় বই কেনার জন্য ৫০০ টাকা করে নেয় জামাল উদ্দিন সরদার ও নাহিদ নামে করতোয়া কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের পরিচয়দানকারী দুই ব্যক্তি।
এরপর কয়েকদিন কাজ শিখিয়ে সেলাই মেশিন দেয়ার কথা বলে প্রত্যেকের কাছ থেকে ৩৮০০ থেকে ৫০০০ টাকা করে নেন তারা।
প্রতারকদের নিয়ে বিদ্যালয়ের যা বক্তব্য
সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়কে কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করে প্রতারকচক্র। এমনই একটি বিদ্যালয়ের শিক্ষক জানালেন প্রতারণার বিষয়। আর চরমুগরিয়া এলাকার কোহিনুর বেগমের বাসায় দুইমাস থাকলেও ভাড়া না দিয়েই চলে যায় বগুড়ার জামাল ও আর চাপাইনবাবগঞ্জের নাহিদ নামে দুই ব্যক্তি।
এ ব্যাপারে ঘটমাঝি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক অরুণ কৃষ্ণ রায়, ‘জামাল ও নাহিদ নামের দুজন আমাকে কিছু কাগজপত্র দেখিয়েছে যে, তারা সরকারি দপ্তরের অনুমতি নিয়েই দর্জির কাজ শিখাবেন। সেই হিসেবে আমি তাদের একটি কক্ষ দিয়েছিলাম। কিন্তু তারা যে প্রতারক, তা বুঝতে পারেনি। পরে কিছু মহিলারা আমাকে জানিয়েছেন যে তারা প্রতারণার শিকার হয়েছেন।’
পুলিশ কী বলছে?
এ ব্যাপারে পুলিশ সুপার মো. মাসুদ আলমের সঙ্গে কথা বললে তিনি বলেন, ‘এমন ঘটনায় প্রতারকচক্রর তিন জনকে আটক করা হয়েছে। তবে ঘটনার মূল হোতাদের এখনো গ্রেপ্তার করা যায়নি। তবে শীঘ্রই তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হবে। এরা দীর্ঘ দিন ধরে প্রতারণা করে আসছে।’
সেলাই মেশিন প্রশিক্ষনের কার্যক্রমই নয়, বিদেশগামীদের প্রশিক্ষণ, সহজ শর্তে ঋণ প্রদানসহ নানা প্রলোভন দেখিয়ে এসব প্রাথমিক বিদ্যালয় বেঁছে নেয় প্রতারকচক্র। দীর্ঘদিন ধরে এমন কার্যক্রম করলেও ধরাছোঁয়ার বাইরে অভিযুক্তরা রয়েছে বলে জানান এ কর্মকর্তা।