বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

সাদিকের পক্ষে একাট্টা মহানগর আওয়ামী লীগ, চিন্তিত নন জাহিদ

  •    
  • ২৯ নভেম্বর, ২০২৩ ২০:১৮

বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের দাবি, প্রশাসন ব্যবহার করে ভোট বাক্স ভরার সুযোগ নেই এবার। অন্যদিকে বরিশাল-৫ আসনে নৌকার টিকিট পাওয়া প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুখের দাবি, সিটি নির্বাচনেও নৌকার মনোনয়ন পাওয়া আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাতের বিরোধিতা করেছিল মহানগর আওয়ামী লীগ। তবে তাদের সে বিরোধিতা ধোপে টেকেনি। তাই কে কী বলল- তা নিয়ে মাথা ব্যথা নেই তার।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে বরিশালে ভোটের মাঠ উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে বরিশাল সদর আসনে নৌকার মনোনয়নবঞ্চিত সাবেক সিটি মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ স্বতন্ত্র নির্বাচন করার ঘোষণা দেয়ার পর দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগ। সাদিকপন্থীরা ভাষ্য, বরিশাল জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ নৌকার প্রার্থী নয়, বরং সাদিক আব্দুল্লাহকে জয়ী করতে সর্বোচ্চ কাজ করবেন।

বরিশাল সিটি করপোরেশন (বিসিসি) নির্বাচনে নৌকার মনোনয়ন চেয়ে বঞ্চিত হওয়ার পর পুনরায় সংসদ নির্বাচনে বরিশাল-৫ আসন থেকে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়নবঞ্চিত হন সাদিক। এতে নগরে কোণঠাসা হয়ে পড়েন সাদিকের কর্মী-সমর্থকরা। তবে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সাদিক আব্দুল্লাহ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ঘোষণা দেয়ায় তার কর্মী-সমর্থকদের মাঝে প্রাণ ফিরেছে।

অন্যদিকে বরিশাল সদর অর্থাৎ বরিশাল-৫ আসনে নৌকার মনোনয়ন পাওয়া পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুখের দাবি, সিটি নির্বাচনেও মহানগর আওয়ামী লীগ নৌকার মনোনয়ন পাওয়া আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাতের বিরোধিতা করেছিল। তবে তাদের সে বিরোধিতা ধোপে টেকেনি। জনগণ ভোটের মাধ্যমে খোকন সেরনিয়াবাতকেই নির্বাচিত করেছে। তাই কে কী বলল- তা নিয়ে মাথা ব্যথা নেই তার।

সোমবার বরিশাল সদরের রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয় থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন জাহিদ ফারুখ শামীম। বুধবার মনোনয়নপত্র জমাও দিয়েছেন তিনি। অন্যদিকে মঙ্গলবার সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর পক্ষে মহানগর আওয়ামী লীগের এক ডজন নেতা মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করলেও বুধবার পর্যন্ত তা জমা দেয়া হয়নি।

বুধবার দুপুরে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে মনোনয়নপত্র জমা দেন বরিশাল-৫ আসনে নৌকার টিকিট পাওয়া পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুখ শামীম। ছবি: নিউজবাংলা

মনোনয়ন জমা না দিলেও নির্বাচনি প্রচারে তাদের তোড়জোড় চলছে জোরেশোরেই। বুধবার শান্তি সমাবেশের নামে সাদিক আব্দুল্লাহর পক্ষে নগরে বিশাল শো ডাউন করেছে মহানগর আওয়ামী লীগ। বরিশাল জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে সমাবেশের পর মিছিল করেন তারা। সমাবেশ থেকে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীরা সাদিক আব্দুল্লাহর পক্ষে সকলকে কাজ করার আহ্বান জানান।

সমাবেশে বরিশাল জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ বরিশাল আওয়ামী লীগকে আগলে রেখেছেন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বরিশাল-৫ আসন থেকে তৃণমূল ভোটে নির্বাচিত হবেন সাদিক আব্দুল্লাহ। আমরা জেলা ছাত্রলীগ তার জন্য সর্বোচ্চ কাজ করব।’

বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি গাজী নইমুল হোসেন লিটু বলেন, ‘বরিশালে আওয়ামী লীগের নেতা একজনই, তিনি হচ্ছেন সাদিক আব্দুল্লাহ। আগামী ৭ জানুয়ারি নির্বাচনে সাদিক আব্দুল্লাহকে সাধারণ মানুষ বিপুল ভোটে জয়ী করবেন।’

বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বরিশাল জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান একেএম জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘আমরা সবসময় বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগকে সুসংগঠিত করতে কাজ করেছি। মহানগর আওয়ামী লীগকে শক্তিশালী করতে কাজ করেছেন সাদিক আব্দুল্লাহ। বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হয়ে ৫ বছরে বরিশালকে সমৃদ্ধ করেছেন সাদিক আব্দুল্লাহ, নগরীকে চাঁদাবাজমুক্ত করেছেন তিনি। তাই এবার আমরা তার পক্ষে স্বতন্ত্র নির্বাচন করতে প্রস্তুত।’

তিনি বলেন, ‘আমরা ফসল রোপন করব আর পাকা ফসল আরেকজনে কেটে ঘরে তুলবে, তা হতে দেয়া যাবে না। আমাদের ফসল আমাদের ঘরেই রাখতে চাই। আমরা কোনো বহিরাগতর ঘরে ফসল নিতে দেব না। যাকে নৌকার মনোনয়ন দেয়া হয়েছে, তাকে কোনো আন্দোলন সংগ্রামে আমরা পাইনি। যিনি সবসময় জনগণের সঙ্গে থাকে, আমরা চাই তাকে।

‘সাদিক আব্দুল্লাহ নির্বাচনে অংশ নিতে চাননি, কিন্তু আমরা তাকে চেপে ধরেছি নির্বাচন করার জন্য। জনগণ ভোটকেন্দ্রে যাবে, আপনার ভোট আপনি দেবেন, কোনো জালিয়াতির সুযোগ নেই। কোনো প্রশাসন ব্যবহার করে আপনারা বাক্স ভরবেন, সেই সুযোগটি নেই। সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আমাদের নির্যাতন করেছে, সেই সুযোগ এবার দেয়া হবে না।’

বরিশালে শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশ শেষে মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর নেতৃত্বে নগরীতে একটি মিছিল বের হয়। ছবি: নিউজবাংলা

অন্যদিকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বরিশাল-৫ আসনে নৌকার প্রার্থী জাহিদ ফারুক বলেছেন, ‘আমার ওপর আস্থা রাখায় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। তিনিই আমাকে ২০১৮ সালে মনোনয়ন দিয়ে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বানিয়েছিলেন। আমিও চেষ্টা করেছি আমার ওপর দেয়া দায়িত্ব ও কর্তব্য সততা, নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সঙ্গে পালন করতে। এ কারণে প্রধানমন্ত্রী আমার ওপর আস্থা রেখেছেন বিধায় আমাকে আবারও মনোনয়ন দিয়েছেন।’

বুধবার দুপুরে বরিশাল জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের রিটার্নিং কর্মকর্তা শহিদুল ইসলামের কাছে মনোনয়নপত্র দাখিল শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন তিনি।

মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়া ও তার পক্ষে মহানগর আওয়ামী লীগের অবস্থানের বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘গত সিটি নির্বাচনের সময়ও সমস্যা হয়েছিল। তখনও মহানগর আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাতকে সঠিকভাবে সহায়তা করেনি। কিন্তু আপামর জনসাধারণ যারা আওয়ামী লীগকে ভালোবাসে, যারা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বকে বিশ্বাস করে এবং আস্থা রাখে তারা ঠিকই কাজ করেছে। আর সেজন্যই খোকন সেরনিয়াবাতকে বিপুল ভোটের ব্যবধানে নির্বাচিত হয়েছেন।’

তিনি বলেন, ‘সংসদ নির্বাচনে আমি নৌকার প্রার্থী। আমি আওয়ামী লীগের প্রকৃত প্রার্থী। সুতরাং যারা আওয়ামী লীগপন্থী এবং শেখ হাসিনার প্রতি আস্থা রাখেন, তারা অবশ্যই আমার পাশে থাকবেন। আমি জানি বরিশালের সাধারণ মানুষের আমার সম্পর্কে ভালো ধারণা রয়েছে। আমার সততা, নিষ্ঠা এবং আন্তরিকতার জন্য তারা আমাকে ভালোবাসেন। তাই আমি মনে করি, আপামর জনসাধারণ আমাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবেন।’

নির্বাচনে জয়ী হওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ভোটে জিতলে সদর উপজেলাসহ বরিশালকে উন্নয়নশীল সমৃদ্ধশালী একটি শহরের রূপান্তরিত করব। এর মাধ্যমে জননেত্রী শেখ হাসিনার স্মার্ট বাংলাদেশের পথে আমরা এগিয়ে যেতে সক্ষম হব এবং তার হাতকে আরও শক্তিশালী করব।’

জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের কমিটির কোনো নেতা-কর্মী তার সঙ্গে থাকবেন কি না- জানতে চাইলে জাহিদ ফারুক বলেন, ‘জেলা, উপজেলা ও মহানগরের যারা রয়েছেন, তারা এরমধ্যেই ফোন দিয়ে বলতে শুরু করেছেন- আমরা নৌকা প্রতীকে ভোট দেব, কোনো ব্যক্তিকে নয়। সুতরাং মেসেজ ক্লিয়ার।’

স্বতন্ত্র বা আওয়ামী লীগের মনোনয়নবঞ্চিত প্রার্থীদের নিয়ে মহানগরের দায়িত্বশীল নেতাদের বক্তব্য কী- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বলতে চাওয়াটা গণতান্ত্রিক অধিকার। মেয়র নির্বাচনের সময় অনেকে অনেক কথা বলেছিল, কিন্তু তাতে কোনো কাজ হয়নি। আমরা গল্প বলি না, রেজাল্ট দেখে বলি। মনোনয়ন পাওয়ার আগেও অনেকে বলেছিল- আমরা মনোনয়ন পেয়ে গেছি। আগে মিছিলও নামিয়েছে তারা, কিন্তু বাস্তবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে মনোনয়ন দিয়েছেন। বরিশালের উন্নয়নের জন্য আমার ওপর জনগনের বিশ্বাস আছে। তারা আমাকে ভালোবাসে বিধায় ব্যালটের মাধ্যমে নির্বাচিত করে ওদেরকে সমুচিত জবাব দেবে।’

এ বিভাগের আরো খবর