বিএনপির নেতা-কর্মীরা কঠিন সময় পার করছে মন্তব্য করে দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, তাদের অবস্থা দেশছাড়া উদ্বাস্তুর মতো।
দলটির ডাকা দেশব্যাপী সর্বাত্মক অবরোধের দিন বুধবার বিকেলে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
বিএনপি নেতা-কর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে মাতম চলছে দাবি করে রিজভী বলেন, ‘সারা দেশে চলছে বিএনপি নেতা-কর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে মাতম আর মর্সিয়া। কান্নার আহাজারিতে এক বিষণ্ন গুমোট অবস্থা বিরাজ করছে জনসমাজে। হাতিরঝিলের বাসা থেকে বের হওয়ার সময় ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের সাবেক সভাপতি ফজলুর রহমান খোকনকে বর্বরোচিত আক্রমণ করে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী ক্যাডাররা। প্রচণ্ড মারধরের পর রক্তাক্ত খোকনকে পুলিশের হাতে ধরিয়ে দেয়। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা আর সশস্ত্র আওয়ামী ক্যাডাররা একই সেনাদলে পরিণত হয়েছে। এদের কাজ শুধু শেখ হাসিনার আক্রোশ বাস্তবায়ন করা।
‘দুইজন শিশু বর্ষা ও নুরী চিৎকার করে কাঁদছে তার মায়ের মুক্তির জন্য। গোয়েন্দা পুলিশ শিশুদের পিতাকে না পেয়ে তার মাকে ধরে নিয়ে গেছে। এমনিভাবে ছয় বছরের শিশু সিয়াম বুকফাটা আর্তনাদ করছে তার কারাবন্দি বাবা আবুল কালামের জন্য। পিতা আবদুল হাইয়ের তিন সন্তানকে কারান্তরীন করা হয়েছে। এদের মধ্যে এক ছেলের হয়েছে ১০ বছর সাজা। আরেক ছেলেকে না পেয়ে তার স্ত্রীকে গ্রেপ্তার করে তিন দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। এ ধরনের ঘটনার বর্ণনা দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হবে।’
বিএনপি নেতা-কর্মীরা দুঃসময় পার করছে মন্তব্য করে দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ‘বিএনপির নেতা-কর্মীরা এক কঠিন সময় পার করছে। অনেকটা দেশছাড়া উদ্বাস্তুর মতো। সহায় সম্বলহীন, নিঃস্ব তারা। বিগত ১৫ বছরে অনেককে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। চাকরি থাকলেও কোনো পদোন্নতি পায়নি, ব্যবসা-বাণিজ্য কেড়ে নেয়া হয়েছে। দোকানপাট, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ভেঙে ফেলা হয়েছে।
‘এর ওপর এখন ঘরছাড়া, বাড়িছাড়া, এলাকাছাড়া নেতা-কর্মীদের ধানক্ষেতে মশারি টানিয়ে ঘুমানোর দৃশ্য দেশবাসী দেখেছে। সুপারির বাগান, ফলের বাগান এবং রান্নাঘরের লাকড়ি রাখার স্তূপের মধ্যে কোনো রকমে জায়গা করে রাত পার করছে বিএনপির নেতা-কর্মীরা। রাষ্ট্র এখন তার নাগরিকদের জীবন আর সম্পদের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দেয় না।’
রিজভী জানান, ২৪ ঘণ্টায় ১৪ মামলায় সারা দেশে বিএনপি, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের ৩৬৫ জনের বেশি নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশের চার-পাঁচ দিন আগে থেকে এ পর্যন্ত ৪৫৮টির বেশি মামলায় দলটির ১৭ হাজার ৭১০ জন নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।