শখ থেকে পাখি পালন শুরু করেন সাভারের নূর হোসেন মানিক। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চাষি মানিক নামেই যাকে চেনে সবাই।
শুরুর যাত্রাটা শখ থেকে পাখি পালন হলেও এখন সেটা বাণিজ্যিক রূপ নিয়েছে। সরকারি চাকরি ছেড়ে নিজের বাড়িতেই গড়ে তুলেছেন ‘শখের খামার’ নামের প্রতিষ্ঠান। বিভিন্ন প্রজাতির পাখির পাশাপাশি এখন ছাগলও পালন করছেন মানিক।
শুধু খামার থেকেই নয়, অনলাইন প্ল্যাটফর্ম থেকেও আয় করছেন তিনি, কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছেন এলাকার বেশ কয়েকজনের।
সাভারে আশুলিয়ার নরিঙ্গারটেক এলাকার শখের খামারের পরিচিতি ছড়িয়েছে মূলত অনলাইন প্ল্যাটফর্ম থেকেই। এখন নিজ এলাকাতেও বেশ পরিচিত মানিক।
মানিকের খামারে গিয়ে দেখা যায়, নিজ বাড়ির পাশেই সাত থেকে আট শতাংশ জায়গায় পরিকল্পনা মাফিক বিভিন্ন প্রজাতির পাখি, ময়ূর, রাজহাঁস, দেশি-বিদেশি জাতের মুরগি, টার্কি ও কচ্ছপ পালন করছেন তিনি।
তিনি জানান, মূলত সৌখিনরাই তার প্রধান ক্রেতা। ২০১৫ সালে স্বল্প পুঁজিতে শুরু করা চাষি মানিকের এই খামার এখন বাণিজ্যিক রূপ নিয়েছে। প্রতিদিন ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত আটজন বেতনভুক্ত কর্মচারী কাজ করেন তার খামারে। তাদের মাসিক বেতন এক লাখ ৮০ হাজার টাকা।
পাখির খামার থেকে কিছু দূরে এগিয়ে গেলে দেখা যায় বাণিজ্যিকভাবে গড়ে তোলা মানিকের ছাগলের খামার।
তিনি বলেন, ‘এখানে ভারতের শিরোহি প্রজাতির প্রায় শতাধিক ছাগল রয়েছে। মূলত ব্রিডিংয়ের মাধ্যমে সারা বছরই ছাগলের বাচ্চা বিক্রি করি।’
পশু-পাখির প্রতি ভালোবাসা থেকে খামার শুরু করা মানিক একসময় পুলিশ সদস্য পেশায় নিয়োজিত ছিলেন।
তিনি জানান, কেরাণীগঞ্জ কারাগারের কারারক্ষী হিসেবে চাকরি করেছেন অনেকদিন। পরে ২০২০ সালে করোনার সময়ে খামারের পুরোপুরি মনোনিবেশ করতে সরকারি চাকরি ছেড়ে দেন।
এখন পুরোদমে খামার পরিচালনা করে আর্থিকভাবে সচ্ছল নূর হোসেন ওরফে চাষি মানিক।
চাষি মানিক বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই শৌখিন মানসিকতা থাকায় পশু-পাখি ভালো লাগত। যখন ছোট ছিলাম, স্কুলে পড়তাম তখন বিভিন্ন পাখির বাসা খুঁজে বেড়াতাম। একটু বড় হওয়ার পরে কবুতরের প্রতি আকৃষ্ট হলাম। এরপর পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন ধরনের পাখি যখন যেটা ভালো লাগত সেটা পালন করতাম। ২০১৩-১৪ সালের দিকে বাণিজ্যিকভাবে খামার করার চিন্তাভাবনা করি।
‘এখান আমার খামারে বিভিন্ন ধরনের যে পাখি ও প্রাণী আছে এগুলো আমার শখ বা মনের খোরাক। এখানে আসলে আমি মানসিকভাবে প্রশান্তি পাই। এখানে এসে বসলে আমার অবসাদ দূর হয়।’
তিনি বলেন, ‘আমার শখের বিভিন্ন ধরনের এক্সোটিক বার্ড, অ্যানিমেল আছে। বাংলাদেশে যারা ইমপোর্টার আছে বছরের বিভিন্ন সময় তারা এগুলো বাইরে থেকে নিয়ে আসে। তাদের কাছ থেকেই সংগ্রহ করেছি।’
লাভ বার্ড, ইন্ডিয়ান রিংনেট (টিয়া পাখি), বিভিন্ন ধরনের কোনিউর গ্রুপের যেমন সান, পাইনাপেল কোনিউর, গ্রীনচেক কোনিউর পাখি আছে মানিকের কাছে। এ ছাড়া দেখা মিলেছে ময়ূরসহ কয়েক ধরনের ফ্রিজেন্টের। যেটা দেখতে অনেকটা ময়ূরের মতো। পাশাপাশি রাজহাঁস, চিনাহাঁস, টার্কি, বিভিন্ন প্রজাতির মুরগি, সেভরেক ও টাইগার মুরগিসহ দেশি মুরগিও আছে।
তবে অল্প পুঁজি নিয়ে শুরু করলেও এই সাত থেকে আট বছর পরে পরিশ্রমের মাধ্যমে তিনি এ জায়গায় পৌঁছেছেন বলে জানান।
কীভাবে ব্যবসার পরিধি বাড়ালেন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘মূলত শুরুটা শখ থেকে করা হলেও পরে তা বাণিজ্যিকভাবে আকার ধারণ করেছে। আর আমাদের ব্যবসার পরিধিটা বেড়েছে সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যাণেই। ইউটিউব ও ফেইসবুক এখন ভালো একটা প্রচার মাধ্যম। আমরা মার্কেটিংয়ের মূল মাধ্যমটাই বেছে নিয়েছি সোশ্যাল মিডিয়া।’
তিনি বলেন, ‘‘‘শখের খামার অ্যাগ্রো প্রজেক্ট’ নামে আমাদের ফেইসবুক যে পেজটি আছে, সেখানে এক লাখ ৯১ হাজার ফলোয়ার আছে। ‘বার্ডস ক্যানভাস’ নামে আমাদের আরেকটি পেইজ আছে। সেটাতে এক লাখ ৬৯ হাজারের মতো ফলোয়ার আছে। এ ছাড়া ইউটিউবের দুটি চ্যানেল আছে। একটিতে দুই লাখ ৩০ হাজার এবং আরেকটিতে ৭৫ হাজারের মতো সাবস্ক্রাইবার আছে। এই দুইটি চ্যানেল ও ফেসবুক থেকে আমার যে পরিমাণ আয় হয়, তা ভালোমতো চলার জন্য যথেষ্ট।’’’
মানিক জানান, ছাগল ও পাখির খামার মিলে তিনিসহ আটজন কাজ করেন। রুটিন মাফিক সবাইকে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কাজ করতে হয়। যেখানে খাবার দেয়া, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা মেইনটেনেন্স করতে হয়।
চাষি মানিকের ছোট ভাই লিটন কবির বলেন, ‘আমার বড় ভাইয়ের খামারে ১০ জন কর্মচারী কাজ করে। আমি নিজেও কাজ করি সেখানে। ছাগলের খামারটা পাখির খামার থেকে কিছুটা দূরে। ছাগলগুলোকে আলাদাভাবে পরিচর্যা করতে হয়।’
সাভার উপজেলার নির্বাহী অফিসার মাজহারুল ইসলাম বলেন, ‘চাষি মানিক নামে ওই যুবক তার বাড়ির পাশেই শখের খামার গড়ে তুলেছেন। শুনেছি, সেখানে বিভিন্ন বিদেশি প্রজাতির পাখি, ময়ূর ও ছাগল পালন করে এখন স্বাবলম্বী তিনি। তার খামারে কাজ করে বেশ কয়েকজন স্থানীয় ব্যক্তির কর্মসংস্থানও হয়েছে। পাশাপাশি খামারের ভিডিও করে অনলাইন প্ল্যাটফর্ম থেকেও মাসিক বাড়তি আয় করছেন তিনি। বর্তমানে বেকার যুবকদের জন্য এ ধরনের প্রজেক্ট অনুকরণীয় হতে পারে।’
উপজেলার পক্ষ থেকে চাষি মানিকের মতো উদ্যোক্তাদের সার্বিক সহযোগিতা করা হবে বলেও জানান তিনি।