জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা দেশের পর্যটন খাতের জন্য বড় ধাক্কা হয়ে দেখা দিয়েছে। নভেম্বরে পর্যটনের ভর মৌসুমেও পর্যটন কেন্দ্রগুলো অনেকটাই পর্যটকশূন্য।
সৈকত শহর কক্সবাজার, সেন্টমার্টিন, কুয়াকাটা, পার্বত্য জেলাগুলোসহ দেশের বেশিরভাগ জনপ্রিয় পর্যটন গন্তব্যে দর্শনার্থীর সংখ্যা ব্যাপক হারে কমে গেছে।
সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের এক দফা দাবিতে দেশব্যাপী বিএনপি ও সমমনা বিরোধী দলগুলোর চলমান অবরোধ-হরতালের কারণে পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে ৯০ শতাংশ অগ্রিম বুকিং বাতিল হয়ে গেছে। এক সময়ের ব্যস্ত হোটেল-মোটেলগুলোতে এখন নজিরবিহীন নীরবতা।
পর্যটন শিল্প-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জানুয়ারির মাঝামাঝি পর্যন্ত পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে হোটেল, মোটেল ও রিসোর্টের অগ্রিম বুকিং বাতিল হওয়ায় গত কয়েক সপ্তাহে দেড় হাজার কোটি টাকার লোকসান গুনতে হয়েছে।
হোটেল-মোটেল মালিকরা জানান, অক্টোবরের আগে কক্সবাজারের পাঁচ শতাধিক হোটেল-মোটেলের ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ কক্ষ প্রতিদিন বুকিং হতো।
সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে পর্যটকের সংখ্যা ব্যাপকভাবে কমে গেছে। কক্সবাজারে পর্যটকের সংখ্যা ৫০ হাজার থেকে নেমে দাঁড়িয়েছে ৫ থেকে ১০ হাজারে। আর এদের বেশিরভাগই মূলত স্থানীয়। কুয়াকাটা এবং সেন্টমার্টিনেও একই অবস্থা বিরাজ করছে।
হোটেল ও মোটেল মালিকরা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলছেন, রাজনৈতিক অস্থিরতা তাদেরকে ব্যাপক ক্ষতি মুখে ফেলে দিয়েছে। এর নেতিবাচক বড় প্রভাবটা পড়বে কর্মচারীদের ওপর। কেননা ব্যবসায়িক মন্দার কারণে তারা কর্মী ছাঁটাই করতে বাধ্য হবেন। বেতন দেয়ার ক্ষেত্রেও সংকট তৈরি হবে।
কক্সবাজার, সেন্টমার্টিন, রাঙ্গামাটি ও কুয়াকাটার মতো পর্যটন স্পটগুলোতে এর প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশের (টোয়াব) সভাপতি শিবলুল আজম কোরেশি।
বার্তা সংস্থা ইউএনবি-কে তিনি বলেন, ‘পর্যটন খাতের জন্য সংকটময় সময় এখন। নভেম্বর, ডিসেম্বর, জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসের আগাম বুকিং একে একে বাতিল করা হয়েছে।
‘কক্সবাজার, কুয়াকাটা, সুন্দরবন, সিলেট, রাতারগুল, জাফলং-তামাবিল, রাঙ্গামাটি ও পতেঙ্গা সৈকতে এই সময় পর্যটকের উপচেপড়া ভিড় হওয়া স্বাভাবিক চিত্র। অথচ সব পর্যটন কেন্দ্র পর্যটকের অভাবে এখন ফাঁকা।’
টোয়াব সভাপতি বলেন, ‘পর্যটন মৌসুম সাধারণত অক্টোবরে শুরু হয় এবং নভেম্বরে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছায়। চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার ফলে এই মাসে হোটেল ও মোটেলগুলো প্রায় খালি পড়ে আছে। অবরোধের কারণে বুকিং বাতিল করা হয়েছে।’
কক্সবাজার হোটেল-মোটেল গেস্ট হাউজ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সেলিম নেওয়াজ জানান, লাগাতার অবরোধের কারণে পর্যটন নগরীতে বর্তমানে পাঁচ শতাধিক হোটেল-মোটেল খালি পড়ে আছে।
কলাতলী মেরিন ড্রাইভ রোড হোটেল-মোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুখিম খান বলেন, ‘দীর্ঘ সময় ধরে অবরোধের কারণে আমাদের এখানে পর্যটন খাতে এক হাজার থেকে দেড় হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হবে।’
পর্যটন খাতকে বাঁচাতে পর্যটকবাহী যানবাহন হরতাল ও অবরোধের আওতার বাইরে রাখতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
কুয়াকাটা হোটেল-মোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোতালেব শরীফ বলেন, ‘রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার মধ্যে মানুষ পরিবার-পরিজন নিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ভ্রমণে যেতে চায় না। নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে বিপুলসংখ্যক পর্যটক তাদের আগাম বুকিং বাতিল করে দিয়েছেন।’