অনৈতিক প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় মরতে বসেছিলেন এক গৃহবধূ। ক্ষুব্ধ হয়ে ভুক্তভোগীর হাত পা বেঁধে শরীরে আগুন দেয় স্থানীয় বখাটেরা। পরে স্থানীয়দের সহায়তা পানিতে ঝাঁপ দিয়ে প্রাণে বাঁচলেও শরীরের অন্তত ১০ শতাংশ পুড়ে গেছে ভুক্তভোগী ওই নারীর।
শনিবার রাতে শরীয়তপুর সদরের কাগদী এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনার পর ভুক্তভোগীর পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে ইতোমধ্যে তদন্তে কাজ শুরু করেছে থানা পুলিশ।
ভুক্তভোগী ওই নারীর নাম হিমা আক্তার। তিনি শরীয়তপুর পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাগদী গ্রামের মৃত ইউনুস সরদারের মেয়ে।
ভুক্তভোগী হিমা ও তার পরিবার জানায়, গত ৩ মাস ধরে হিমাকে নানা ধরনের খারাপ প্রস্তাব দিয়ে উত্যক্ত করে আসছিলেন প্রতিবেশী ইদ্রিস পাহাড়ের ছেলে রাসেল পাহাড়। ফেসবুক মেসেঞ্জারে অর্থের লোভ দেখিয়ে প্রায়ই হিমাকে নিজ বাড়িতে যেতে বলতেন রাসেল। রাসেলের এ ধরনের অনৈতিক প্রস্তাবে রাজি হননি হিমা। এতে এক পর্যায়ে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন রাসেল। এরই জেরে শনিবার রাত নয়টার দিকে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে বাড়ির বাইরে বের হলে হিমাকে জোর করে মুখ চেপে ধরে পাশের একটি বাঁশ বাগানে নিয়ে যান রাসেল ও তার এক সহযোগী। সেখানেই চিকন প্লাস্টিকের পাইপের সাহায্যে তার হাত পা বেঁধে ফেলেন তারা। এরপর হিমার শরীরে আগুন আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়।
হিমার চিৎকারে এ সময় আশপাশের মানুষ ছুটে এলে পালিয়ে যান ওই দুই অভিযুক্ত। তাৎক্ষণিকভাবে পাশের পুকুরের পানিতে লাফ দিয়ে প্রাণে বেঁচে যান হিমা। কিন্তু ততক্ষণে তার শরীরের কোমরের নিচ থেকে হাটু পর্যন্ত ঝলসে যায়। ওই রাতেই স্থানীয়দের সহায়তার হিমাকে হাসপাতালে ভর্তি করে তার স্বজনরা।
হাসপাতালে গৃহবধূ হিমার বোন খাদিজা আক্তার জানান, ‘বোনের কান্না শুনে দৌড়ে বাথরুমের কাছে গিয়ে দেখি, আমার বোনের শরীরে আগুন দাউ দাউ করে জ্বলছে। তখন কোনো উপায় না পেয়ে ওকে পুকুরের পানিতে ঝাঁপ দিতে বলি।’
এ ব্যাপারে শরীয়তপুর পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আলমগীর মৃধা বলেন, ‘আমার এলাকায় এমন একটি ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটবে কখনো ভাবতে পারিনি। ঘটনা জানতে পেরে হিমাকে হাসপতালে ভর্তি করার ব্যবস্থা করি। পরবর্তীতে হিমার বোনকে নিয়ে থানায় গিয়ে পুলিশের কাছে অভিযোগ দিয়েছি। পুলিশ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে।’
শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের জুনিয়র কনসালটেন্ট (সার্জারি) শামীম আব্দুল্লাহ বলেন, ‘শনিবার রাতে আগুনে পোড়া অবস্থায় হিমা আক্তার নামে এক রোগী ভর্তি হন। কোনো গরম পানি কিংবা আগুনের ছেকা নয়, ক্ষতস্থান আগুনে পুড়ে গেছে। হিমা আক্তারের শরীরের অন্তত ১০ শতাংশ পুড়ে গেছে। প্রাথমিক চিকিৎসাশেষে তিনি এখন অনেকটা আশঙ্কামুক্ত। আশা করি, তিনি দ্রুতই সে সুস্থ হয়ে উঠবেন।’
শরীয়তপুরের পুলিশ সুপার মাহাবুবুল আলম বলেন, ‘ঘটনাটি অত্যন্ত ন্যক্কারজনক। রোববার হিমার পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় একটি অভিযোগ দেয়া হয়েছে। অভিযোগ পাওয়ার পর পুলিশ ঘটনাটি অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে তদন্ত করছে। খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে ঘটনার সঙ্গে জড়িত প্রত্যেককে আইনের আওতায় আনা হবে।’