আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেশের বাইরে থেকে আধিপত্য বিস্তার করা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল।
সোমবার সকালে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন প্রশিক্ষণ ইনিস্টিটিউটের ভবনে সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে ৩০০ আসনের জন্য নিয়োজিত ৩০০ নির্বাচনিঅনুসন্ধান কমিটির সদস্যদের আইন-বিধি ও কর্মপদ্ধতি বিষয়ক প্রশিক্ষণের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘আমরা একটি ফ্রি, ফেয়ার এবং ক্রেডিবল ইলেকশন চাচ্ছি। দুর্ভাগ্যজনক হলো আমাদের নির্বাচনে বাইরে থেকে থাবা বা হাত এসে পড়েছে। তারা আধিপত্য বিস্তার করে রেখেছে। আমাদের অর্থনীতি, আমাদের ভবিষ্যৎ, আমাদের অনেক কিছু রক্ষা করতে হলে নির্বাচন সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও বিশ্বাসযোগ্য করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমাকে নিয়ে যেভাবে যুক্তরাষ্ট্র কমেন্ট করতে পারে, আমি কিন্তু ওয়াশিংটনে গিয়ে হুমকি-ধমকি দিতে পারছি না। এটা একটা বাস্তবতা। তবে আমাকে বাঁচাতে হলে আমার সাধারণ জনগণকে বাঁচাতে হলে আমার গার্মেন্ট বাঁচাতে হলে যে দাবিটা আমাদের বা বাইরের, ওরা (বিদেশি) খুব বেশি দাবি করেনি। তাদের (বিদেশিদের) একটাই দাবি বাংলাদেশের নির্বাচন ফ্রি, ফেয়ার এবং ক্রেডিবল হতে হবে।’
সিইসি বলেন, ‘নির্বাচন নিয়ে দেশে যে বিতর্ক হচ্ছে তা অনাকাঙ্ক্ষিত। নির্বাচন নিয়ে রাজনীতি দ্বিধাবিভক্ত। নির্বাচন নিয়ে দেশ সংকটে আছে। এখান থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। নির্বাচনে আমরা অবিতর্কিত ফলাফল দেখতে চাই। সব এজেন্ট যেন ফলাফল গ্রহণ করেন।’
তিনি বলেন, ‘নির্বাচনকালে দায়িত্ব পালনে সততা এবং সাহসিকতা যেন থাকে। বাংলাদেশ একটা প্রজাতন্ত্র। নির্বাচন ছাড়া বাংলাদেশ কখনো প্রজাতন্ত্র হতে পারে না। প্রজাতন্ত্র মানেই জনগণের প্রতিনিধিদের দ্বারা শাসন পদ্ধতি। একনায়কতন্ত্র ও রাজতন্ত্র খুব একটা খারাপতন্ত্র আমরা বলছি না। তবে প্রজাতন্ত্রের শাসনব্যবস্থা সব থেকে জনপ্রিয়। গণতন্ত্র বাঁচিয়ে যদি রাখতে হয় তাহলে নির্বাচন বাঁচিয়ে রাখতে হবে। নির্বাচন নিয়ে বিতর্ক অনাকাঙ্ক্ষিত।’
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ ও লক্ষ্মীপুর-৩ আসনের উপ নির্বাচনের প্রসঙ্গ টেনে সিইসি বলেন, অতি সম্প্রতি আমরা খুব কষ্ট পেয়েছি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া এবং লক্ষ্মীপুরে ওখানেও সিল মারা হচ্ছে। আমারা সেটা প্রতিহত করতে পারি নাই। আমাদের প্রশাসন পারেনি। আমাদের নির্বাচন কর্মকর্তারা পারেনি। এটা লজ্জার।
সিল মারাটা নির্বাচনের সংস্কৃতির অংশ হয়ে গিয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, ‘এটা মন্দ সংস্কৃতি। পেশিশক্তির ব্যবহার করা। কালো টাকা ব্যবহার করা। এই ধরনের কারচুপি করা দীর্ঘদিন ধরে চর্চার মাধ্যমে একটা অপসংস্কৃতির চর্চা হয়ে গেছে।’
ক্রমান্বয়ে এই অপসংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে জানিয়ে সিইসি বলেন, এসব ক্ষেত্রে আমারা নিরন্ত্রণ চেষ্টা করছি। নির্বাচন কমিশন থেকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছি নির্বাচনকে অবাধ, নিরপেক্ষ ও বিশ্বাসযোগ্য করার জন্য নির্বাচন কমিশন যথাসাধ্য চেষ্টা করবে।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে সবাই চোখ কান খোলা রেখে সৎভাবে দায়িত্ব পালন করবেন বলে আশা প্রকাশ করেন সিইসি। তিনি বলেন, ‘নির্বাচন নিয়ে কিন্তু দেশ একটা সংকটে আছে। বিশ্বাস অবিশ্বাসের দোলাচালে আছে। এখান থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। এখানে সকলকে সমভাবে দায়িত্বশীল হয়ে দায়িত্ব পালন করতে হবে।’
সিইসি বলেন, ‘আমেরিকার গণতন্ত্র আড়াই শ বছরের বেশি হয়ে গেছে। আমাদের গণতন্ত্র অনেক নতুন। কিন্তু মাঝে মাঝে অনেক ধাক্কা, সামরিক শাসন, গণঅভ্যুথান ইত্যাদি হয়ে সাংবিধানিক প্রক্রিয়া স্থিরভাবে ৫০ বছর হয়ে উঠতে পারিনি।’
নির্বাচনের দিন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা দেখতে চাই যারা ভোটার তারা আসছে, আসতে পারছে। তাদেরকে বাধা দিচ্ছে না। যদি বাধা দেয়া হয় তাহলে নির্বাচন প্রভাবিত হয়েছে।’
ভোটারের লাইন যেন ঘণ্টার পর ঘণ্টা থেমে না থাকে মন্তব্য করে সিইসি বলেন, ‘যদি থেমে থাকে তাহলে মনে করা হবে ভেতরে এই (সিল মারা) কাজটি হচ্ছে। লাইনটা চলমান থাকতে হবে। তারপর ওরা (ভোটাররা) ভোটাধিকার প্রয়োগ করে বেরিয়ে আসতে পারছে কি না।’
উল্লেখ্য, তিন দিনব্যাপী প্রশিক্ষণের প্রথম দিন ১০৫ জন বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাকে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে ৩০০ ‘নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটি’ গঠন করে গত বৃহস্পতিবার প্রজ্ঞাপন জারি করেছে ইসি।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, দায়িত্ব পাওয়া নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটির কর্মকর্তারা নির্বাচনীনি দায়িত্ব পালনের জন্য নির্বাচন কমিশনে ন্যস্ত থাকবেন। এসব কমিটি দায়িত্ব পালনকালে নির্বাচনপূর্ব অনিয়ম সংঘটিত হলে, তা অনুসন্ধান করে প্রতিবেদন পাঠাবে সংশ্লিষ্ট জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কাছে। এরপর সংশ্লিষ্ট জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ওই অনুসন্ধান প্রতিবেদন নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সচিবের কাছে পাঠাবেন।