৩০ বছর আগে বেড়াতে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে ভারতে স্ত্রীকে বিক্রির অভিযোগে এক ব্যক্তির নামে মামলা হয়েছে মেহেরপুরে।
নিকট আত্মীয় ও পরিবারের লোকজন ধারণা করেছিলেন, ওই নারী মারা গেছেন। তবে তিনি সম্প্রতি ফিরে আসেন। এরপরই ঘটনা জানাজানি হয়।
মেহেরপুর সদর উপজেলার কুতুবপুর ইউনিয়নের সুবিধপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটেছে। গত ১০ নভেম্বর মেহেরপুর সদর উপজেলার শোলমারি সীমান্ত এলাকা দিয়ে ভারত থেকে দেশে ফিরে আসেন রেজিয়া খাতুন।
ফিরে আসা রেজিয়া খাতুনকে দেখতে ভিড় জমিয়েছেন অনেকে।
তার স্বামী অভিযুক্ত আজগর আলী বলছেন, পাচারের অভিযোগ সত্য নয়।
বাড়ি ফিরে রেজিয়া স্বজনদের জানিয়েছেন, তার স্বামী আজগর আলী ৩০ বছর আগে ১৯৯৩ সালের দিকে ভারতের এক পাচারকারীর কাছে তাকে বিক্রি করে দিয়েছিলেন। এত বছর তিনি ভারতের জম্মু-কাশ্মীরের বড়গ্রাম বিরু এলাকায় বন্দি হিসেবে জীবনযাপন করছিলেন।
গোপনে রেজিয়া খাতুন পরিবারের লোকজনের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করতে সক্ষম হন। গত তিন মাস ধরে স্বজনরা যোগাযোগ করলে তাকে ছাড়তে রাজি হন ওই পাচারকারী।
পরে এ ঘটনার জেরে ২০২৩ সালের ১৬ নভেম্বর মেহেরপুরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলা করেন ওই নারী। মামলায় স্বামী আজগর আলী ও প্রতিবেশী জয়নাল আবেদীনকে আসামি করা হয়। মামলাটি আমলে নিয়ে গত ২০ নভেম্বর আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে ট্রাইব্যুনাল।
মেহেরপুর আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) একেএম আছাদুজ্জামান এই মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
স্বজনদের কাছে খবর পাঠানোর বর্ণনা দিয়ে রেজিয়া খাতুন বলেন, ‘তিন মাস আগে পড়ে গিয়ে আঘাত পেলে আমার পা ভেঙে যায়। তখন কাশ্মীরের বিরু এলাকার ওই পাচারকারী গোপনে চিকিৎসা নেয়ার জন্য আমাকে নদীয়া জেলার পন্ডিতপুর গ্রামের এক চিকিৎসকের কাছে পাঠান। চিকিৎসা নিতে এসে মেহেরপুরের এক ব্যক্তির সঙ্গে পরিচয় হয়। তার মাধ্যমে নিজের বেঁচে থাকার কথা স্বজনদের জানাই।’
তিনি আরও বলেন, ‘এরপর পরিবারের লোকজন বিভিন্ন মাধ্যমে ওই পাচারকারীর সঙ্গে যোগাযোগ করে আমাকে বাড়িতে নিয়ে আসেন। আমাকে পাচারের সঙ্গে জড়িত সবার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করছি। যাতে আর কোনো নারীকে এমন জীবন পেতে না হয়।’
রেজিয়ার বড় ভাই আনারুল ইসলাম বলেন, ‘৩০ বছর আগে আজগর আলী আমার বোনকে পাচারকারীর কাছে বিক্রি করে দিয়েছিল। এতদিন জানতাম মারা গেছে। তিন মাস আগে আমিরুলের মাধ্যমে জানতে পারি বোন বেঁচে আছে। পরে বিভিন্ন মাধ্যমে পাচারকারীর সঙ্গে যোগাযোগ করে তাকে বাড়িতে নিয়ে এসেছি।’
পাচারের বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত আজগর আলী বলেন, ‘বিয়ের এক বছর পরই রেজিয়ার সঙ্গে আমার বিচ্ছেদ হয়ে গিয়েছিল। যোগাযোগ করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছিলাম। পরে লোকমুখে শুনেছিলাম মারা গেছে। এখন আমার বিরুদ্ধে পাচারের যে অভিযোগ তোলা হচ্ছে, এটি আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ছাড়া কিছু না।’
এ ঘটনায় আরেক অভিযুক্ত জয়নাল আবেদীনের দাবি, ষড়যন্ত্র করে রেজিয়ার হারিয়ে যাওয়ার ঘটনায় তাকে ফাঁসানো হয়েছে।
মেহেরপুর জেলা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের আইনজীবী একেএম আছাদুজ্জামান বলেন, ‘মানব পাচারের অভিযোগ প্রমাণিত হলে অভিযুক্তদের মৃত্যুদণ্ড অথবা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হতে পারে। আমরা ভুক্তভোগীকে সব ধরনের আইনি সহায়তা দেব।’