ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার দুই শিক্ষা অফিসারের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ এনে তদন্তের দাবিতে জেলা শিক্ষা অফিসে লিখিত আবেদনের দেড় মাস পেরিয়ে গেলেও তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়নি।
তদন্ত কমিটি কবে গঠন করা হবে তারও সদুত্তর দিতে পারছে না জেলা শিক্ষা অফিস।
যাদের নামে অভিযোগ উঠছে তারা হলেন উপজেলার শিক্ষা অফিসার (টিইও) সৈয়দ আহমেদ ও সহকারী শিক্ষা অফিসার (এটিইও) মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন।
মূলত উপজেলাটির ৭১ নম্বর কাদিগড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে কেন্দ্র করে প্রভাবশালীদের ইশারায় পক্ষপাতমূলক বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগ উঠে তাদের বিরুদ্ধে। ফলে তদন্তের বিষয়টি উল্লেখ করে গত ৮ অক্টোবর বিদ্যালয়ের সাবেক সভাপতি জাকির হোসাইন জুয়েল, দাতা সদস্য ও অভিভাবক সদস্য মাজিবুল হক তালুকদারসহ এলাকার ৪৬ জন জেলা শিক্ষা অফিসে নিজেদের স্বাক্ষরসহ লিখিত অভিযোগ দেন ওই দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, গত এক যুগ ধরে এই বিদ্যালয়ে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে শিক্ষার মান তলানিতে পৌঁছেছিল। এমতাবস্থায় অভিভাবক ও স্থানীয়দের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে চলতি বছরের ১ মে নুপুর আক্তারকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে দ্বায়িত্ব দেয়া হয়। এরপর থেকেই স্কুলটিতে শিক্ষার উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এসেছে। শিক্ষার্থীর সংখ্যা ও উপস্থিতির হার বেড়েছে।
কিন্তু সম্প্রতি স্থানীয় সাইফুল ইসলাম ও জামাতা রমিজ খান স্কুলের সরকারি জায়গা থেকে বাঁশ কেটে মাটি ভরাট করে পেঁপে বাগান গড়ে তুলে দখল করার বিষয়ে উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে জানানো হলে তিনি ব্যবস্থা নেননি।
স্থানীয়রা জানায়, স্কুলটিতে অস্থির অবস্থা বিরাজ করার মধ্যেই কোনো কারণ ছাড়া নুপুর আক্তারকে দ্বায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেয়ায় ওই দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সন্দেহের জট ভারী হয়। ফলে স্থানীয়রা তাদের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ এনে মানববন্ধন-ঝাড়ু মিছিলসহ অবশেষে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে লিখিত অভিযোগ দেন।
বিদ্যালয়ের বর্তমান ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মাহমুদা পারভীন বলেন, ‘প্রথমে এই পদে আমি দ্বায়িত্ব নিতে চাইনি। পরে উপজেলার ঊর্ধ্বতন স্যাররা আমাকে বুঝিয়ে বলেছে দ্বায়িত্ব নিতে, তাই নিয়েছি। কারণ, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা যা বলে তাই আমাদেরকে মেনে চলতে হয়।’
বিদ্যালয়ের সাবেক সভাপতি মো. জাকির হোসেন জুয়েল বলেন, ‘টিইও এবং এটিইও ইচ্ছে করলে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অভিভাবক কিংবা শিক্ষকদের ডেকে নিয়ে নুপুর আক্তারকে তার পদ থেকে সরাতে পারতেন। কিন্তু তা না করে যখন দুইটি পক্ষের মধ্যে বিরোধ দেখা দিয়েছে, ঠিক সেই মুহূর্তে কোনো কারণ ছাড়াই অন্যায়ভাবে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের পদ থেকে নুপুর আক্তারকে সরিয়েছেন তারা।’
এতে ওই শিক্ষা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে সন্দেহের দানা বেঁধেছে।
সাইফুল ইসলামের জামাতা রমিজ খান বলেন, ‘উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে জানিয়েই বিদ্যালয়ের জায়গা থেকে কয়েকটি বাঁশ কেটে নেয়া হয়েছে। এখানে আমাদের কোনো অন্যায় নেই। আমাদের কথায় নুপুর আক্তারকে তার পদ থেকে সরানো হয়নি।’
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার সৈয়দ আহমেদ বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ সঠিক নয়। দায়িত্ব পালনে পক্ষপাতমূলক আচরণের সুযোগ নেই। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বিষয়টি অবগত আছেন। তদন্ত করলেও সমস্যা নেই। একই ধরনের বক্তব্য সহকারী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেনের।’
এ বিষয়ে ময়মনসিংহ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘উপজেলার ওই দুই শিক্ষা অফিসারের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ অনেক আগেই পেয়েছি। তবে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়নি।’
কেন তদন্ত কমিটি গঠন করেননি এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘অনেক দিন যাবত ব্যস্ততার মধ্যে সময় যাচ্ছে। এ ছাড়া নুপুর আক্তারের পক্ষের লোকজন লিখিত অভিযোগ দিয়েছে বলে মনে হয়েছে।’
তবুও এখন অভিযোগটি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হবে। টিইও এবং এটিইও অন্যায় করে থাকলে জবাবদিহির আওতায় আনাসহ যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান তিনি।