চট্টগ্রাম-১২ আসনের সংসদ সদস্য হুইপ সামশুল হক চৌধুরীর বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ এনে মনোনয়ন না দিতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীকে চিঠি দিয়েছেন হুইপের নির্বাচনী আসনের দলীয় সাত জ্যেষ্ঠ নেতা।
এ সাত নেতার পাঁচজন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান উপদেষ্টা।
আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী বরাবর শুক্রবার এই চিঠি পাঠান তারা।
চিঠিতে স্বাক্ষরকারী সাত নেতা হলেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার শামসুদ্দিন আহমেদ, বাকশালের তৎকালীন চট্টগ্রাম জেলা সভাপতি ও পটিয়া থানা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার কাজী আবু তৈয়ব, চট্টগ্রাম জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার চৌধুরী মাহাবুবুর রহমান, বীর মুক্তিযোদ্ধা এ কে এম আবদুল মতিন চৌধুরী, বীর মুক্তিযোদ্ধা খায়ের আহমদ, কেন্দ্রীয় শ্রমিক লীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক মাহাফুজুর রহমান খান এবং পটিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি শাহাদাত হোসেন।
চিঠিতে হুইপ সামশুল হক চৌধুরীকে টেন্ডারবাজ, বালুখেকো, দুর্নীতিবাজ, মাদককারবারি, ভূমিদস্যু, তৃণমূল নেতা-কর্মীদের শত্রু হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতাদের এই চিঠিতে হুইপ সামশুল হক চৌধুরীর বিরুদ্ধে ১৪টি অভিযোগ তুলে ধরা হয়েছে। এর মধ্যে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে আত্মীয়কে জেতাতে নৌকার প্রার্থীকে পরাজিত করা, জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পে অনিয়ম, প্রভাব খাটিয়ে পটিয়া ক্লাবে নির্বাচন বন্ধ রাখা, বালুর দাম বৃদ্ধি করে জোর করে কৃষকদের জমির টপসয়েল কেটে নেয়া, বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীদের নানা সুযোগ-সুবিধা দেয়া, নিজেকে ‘কওমিদের এমপি’ ঘোষণা করে ধর্মীয় মেরুকরণ, স্থানীয় সরকারের সব পর্যায়ে প্রভাব খাটানো, আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতাদের বিভিন্নসময় অপমান-নির্যাতন করা, ভূমিদস্যুতা অন্যতম।
চিঠিতে বলা হয়, বর্তমান হুইপ দলীয় মনোনয়ন পেলে তার অনৈতিক ও দলের জন্য ক্ষতিকর গর্হিত কাজ ভবিষ্যতে আরও বৃদ্ধি পাবে। কারণ তিনি জনকল্যাণের কথা চিন্তা না করে শুধু স্বীয় স্বার্থ ও তার আত্মীয়স্বজনদের স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়েছেন। বিভিন্ন প্রতিবেদনে এসবের স্পষ্ট তথ্য পাওয়া যাবে।
চিঠিতে নেতারা দাবি করেন, আওয়ামী লীগের ১৫ বছরের শাসন আমলে পটিয়ায় যে হারে নেতা-কর্মীরা মামলা হামলা ও নির্যাতনের শিকার হয়েছে, বিএনপি-জামায়াতের বিরুদ্ধেও ততটি মামলা হয়নি। এই কারণে পটিয়ায় তৃণমূলের কর্মীরা হুইপ যেন মনোনয়ন না পান সেই প্রার্থনা করছেন।
প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানিয়ে চিঠিতে বলা হয়, ‘আগামী নির্বাচনে মনোনয়নপ্রত্যাশী দলের অসংখ্য ত্যাগী, দক্ষ ও সৎ নেতৃত্ব রয়েছে। সেখান থেকে একজন যোগ্য ব্যক্তিকে মনোনয়ন দিয়ে কর্মীদেরকে দীর্ঘদিনের অভিশাপ ও হাহাকার থেকে অবমুক্ত করুন। আর এ জন্য পটিয়া আওয়ামী পরিবারকে বাঁচানোর তাগিদ থেকে ও তার স্বেচ্ছাচারী আচরণে ক্ষুব্ধ হয়ে অনেকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে এগিয়ে এসেছেন।
‘আপনি তাদের মধ্যে একজন যোগ্য ব্যক্তিকে পটিয়ায় মনোনয়ন দিবেন; এটায় তৃণমূলের আবেদন। কারণ নেতা-কর্মীরা সর্বদা আপনার সার্বিক কর্মকাণ্ডের সফলতার জন্য দোয়া করছেন। পাশাপাশি আমরা যাতে জনগণের মাঝে আপনার সকল সেবাপ্রাপ্তি সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে প্রচার ও প্রসার করতে পারি, তাতে অগ্রণী ভূমিকা রাখার জন্য একজন যোগ্য নেতাকে মনোনয়ন প্রদান করার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করছি।’
এই চিঠির বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো মন্তব্য করেননি সামশুল হক।
হুইপ সামশুল হক চৌধুরী ২০০৮ সালে চট্টগ্রাম-১১ (তৎকালীন পটিয়া) আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পরবর্তী সময়ে ২০১৪ ও ২০১৮ সালে চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) আসন থেকে দলীয় মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচিত হন তিনি।
এবারও চট্টগ্রাম-১২ আসন থেকে নৌকার টিকিট চান সামশুল হক চৌধুরী।