বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ভরা মৌসুমে পর্যটক খরা মৌলভীবাজারে

  •    
  • ২৪ নভেম্বর, ২০২৩ ১৬:০৫

পর্যটন সেবা সংস্থার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও গ্র্যান্ড সেলিম রিসোর্টের মালিক সেলিম আহমেদ বলেন, ‘রাজনৈতিক অস্থিরতায় পুরো জেলার পর্যটন ব্যবসায় ধস নেমেছে। জেলায় ছোট-বড় মিলিয়ে শতাধিক হোটেল, মোটেল, রিসোর্ট রয়েছে। সবগুলোই এখন ফাঁকা। প্রতিদিন প্রায় অর্ধকোটি টাকার মতো ক্ষতি হচ্ছে।’

চায়ের রাজধানী হিসেবে পরিচিত মৌলভীবাজারে ভরা মৌসুমেও দেখা নেই পর্যটকদের। গত মাসের মধ্যবর্তী সময়েও জেলার যেসব পর্যটন কেন্দ্র সকাল-সন্ধ্যা লোকারণ্য ছিল, সেগুলোতে এখন সুনসান নীরবতা। অলস সময় পার করছেন দেড় শতাধিক হোটেল, গেস্ট হাউস, মোটেল, রিসোর্টের কর্মীরা। এতে মৌসুমের শুরুতেই ক্ষতির মুখে পড়েছেন পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।

টানা অবরোধ, হরতাল ও দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতায় এমন পর্যটক খরা তৈরি হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। পর্যটক না আসায় দৈনিক প্রায় অর্ধকোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে বলে জানান শ্রীমঙ্গল পর্যটন সেবা সংস্থার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও গ্র্যান্ড সেলিম রিসোর্টের স্বত্বাধিকারী সেলিম আহমেদ।

সরকারি ছুটির দিন শুক্রবার জেলার বিভিন্ন হোটেল, রিসোর্ট ও রেস্তোরাঁ ঘুরে দেখা যায়, বেশির ভাগে নেই পর্যটক। দর্শনীয় স্থানগুলোতে নেই দেশি কিংবা বিদেশি পর্যটক।

জেলার অন্যতম পর্যটন গন্তব্য কমলগঞ্জের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, মাধবপুর লেক, বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর স্মৃতিসৌধ, মণিপুরী পাড়া, হামহাম জলপ্রপাত, ছয়সিঁড়ি দীঘি, ক্যামেলিয়া লেক, পাত্রখোলা লেক, পদ্মছড়া লেক, বামবুতল লেক, হরিনারায়ণ দীঘি, শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জের সবুজে আচ্ছাদিত চা বাগান, রাবার বাগান, বধ্যভূমি একাত্তর চত্বর, হাইল হাওর, বাইক্কা বিল, হাকালুকি হাওর, মুন ব্যারেজ।

সম্প্রতি এসব জায়গা ঘুরে দেখা গেছে, পর্যটক প্রায় শূন্য। অথচ মাসখানেক আগে চিত্র ছিল উল্টো।

পর্যটন ব্যবসায়ীদের ভাষ্য, প্রতি বছরের সেপ্টেম্বর থেকে পরের বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত মৌলভীবাজারের দেড় শতাধিক হোটেল, মোটেল, রিসোর্ট, গেস্ট হাউসে থাকত শতভাগ অগ্রিম বুকিং। চলতি বছরও অগ্রিম বুকিং হয়েছিল, তবে অক্টোবর মাসের ২৮ তারিখ থেকে অবরোধ-হরতাল ও রাজনৈতিক অস্থিরতায় প্রায় ৯৫ শতাংশ বুকিং বাতিল হয়ে গেছে। দ্রুত এ অবস্থা থেকে উত্তরণ না হলে পর্যটন শিল্পে চরম বিপর্যয় নেমে আসতে পারে।

শ্রীমঙ্গলের হোটেল প্যারাডাইজের স্বত্বাধিকারী হাজী আবুজার বাবলা বলেন, ‘হরতাল ও অবরোধের কারণে ট্যুরিস্ট মৌসুমের তুলনায় ১০ ভাগও নাই। অথচ এখন নভেম্বর মাস পর্যটনের ভরা মৌসুম। প্রতি বছর এ সময়ে পর্যটন স্পটগুলোতে থাকত উপচেপড়া ভিড়।

‘এখন ক্ষতির মুখে আমরা। এই ক্ষতি কীভাবে পুষিয়ে উঠব, বুঝতে পারছি না। কর্মচারী ও বিদ্যুৎ বিল, ব্যাংকের লোন, বাসা বাড়া—সবকিছু দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। আমার মনে হয় না এভাবে ব্যবসা চালিয়ে যেতে পারব। এভাবে যদি চলে তাহলে হোটেল রিসোর্ট গুটিয়ে নিতে হবে। আমরা দ্রুত দেশের এমন সংকটের সামাধান চাই।’

কমলগঞ্জ অরণ্য বিলাস ইকো রিসোর্টের মালিক এহসান কবির সবুজ বলেন, ‘বিগত কয়েক বছরে পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসার ধকল গেছে। করোনাভাইরাস, বন্যাসহ নানা কারণে পর্যটন শিল্প ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এবার আশায় ছিলাম অতীতের ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে নিতে পারব, কিন্তু দেশের যে পরিস্থিতি, এ অবস্থায় পর্যটক বলতেই নাই।

‘ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে পারব কি না, তা নিয়ে শঙ্কায় আছি। এ অবস্থা চলতে থাকলে কর্মচারী ছাঁটাই করতে হবে। একই সঙ্গে ব্যবসা বন্ধ করতে হবে।’

লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের পাশের ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান বলেন, ‘লাউয়াছড়ায় ডাব বিক্রি করে সংসার চলে। এক মাস ধরে এ উদ্যানে কোনো ট্যুরিস্ট নাই। বেচাবিক্রি নাই। দুরাবস্থায় আছি। সংসার চালানো দায় হয়ে পড়েছে।’

কসমেটিক ও চা পাতা ব্যবসায়ী দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘খুব খারাপ অবস্থা যাচ্ছে। হরতাল ও অবরোধের কারণে পর্যটক নাই। সারা বছর আমরা অপেক্ষায় থাকি এই সময়ে পর্যটকের আনাগোনা বেশি থাকে, কিন্তু পর্যটকশূন্য থাকায় সংসার ও পরিবারের খরচ চালানো অসম্ভব হয়ে দাড়িয়েছে।’

এ বিষয়ে পর্যটন সেবা সংস্থার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও গ্র্যান্ড সেলিম রিসোর্টের মালিক সেলিম আহমেদ বলেন, ‘রাজনৈতিক অস্থিরতায় পুরো জেলার পর্যটন ব্যবসায় ধস নেমেছে। জেলায় ছোট-বড় মিলিয়ে শতাধিক হোটেল, মোটেল, রিসোর্ট রয়েছে। সবগুলোই এখন ফাঁকা। প্রতিদিন প্রায় অর্ধকোটি টাকার মতো ক্ষতি হচ্ছে।

‘এ অবস্থা চলমান থাকলে কর্মী ছাঁটাই করতে হবে। ইতোমধ্যে অনেক প্রতিষ্ঠান ছাঁটাই শুরু করেছে। অনেকের ব্যাংক ঋণ পরিশোধ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। যদি ডিসেম্বর ও জানুয়ারি এই সমস্যা থাকে, তাহলে ধ্বংসের মুখে পড়বে হোটেল রিসোর্ট।’

লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের দায়িত্বরত ব্যবস্থাপক শাহিন আহমেদ বলেন, ‘লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে এই সময়ে প্রতিদিন ৫০০-৭০০ দেশি-বিদেশি ট্যুরিস্ট আসতেন। তখন টিকিট বিক্রি করে সরকারের রাজস্ব আয় হতো ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা।

‘এখন গড়ে ৮০ থেকে ১২০ জন পর্যটক আসছেন। সরকারের রাজস্ব আসছে তিন থেকে পাঁচ হাজার টাকা।’

লাউয়াছড়া রেঞ্জ কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘এই মৌসুমে হাজার হাজার পর্যটক দেখা যেত। বর্তমানে হরতাল ও অবরোধের কারণে দেখা নাই।

‘মানুষ নিরাপদে যাতায়াত করতে পারে না, যানবাহন চলে না। তাই ভ্রমণে আসে না। প্রতি বছর যে পরিমাণ রাজস্ব আদায় হতো, তা এখন হচ্ছে না।’

ট্যুরিস্ট পুলিশ মৌলভীবাজার জোনের উপপরিদর্শক (এসআই) প্রবাণ সিনহা বলেন, ‘নানা কারণে তুলনামূলকভাবে এবার পর্যটক অনেক কম, তবে ট্যুরিস্ট পুলিশ জেলার পর্যটন স্পটগুলোতে নিয়মিত টহল দিচ্ছে। নিরাপত্তা ব্যবস্থাও জোরদার করা হয়েছে।

‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এসব ব্যাপারে সোচ্চার। পর্যটকরা যাতে কোনো সমস্যার সম্মুখীন না হয়, সে লক্ষ্যে চেষ্টা করে যাচ্ছি।’

কমলগঞ্জ থানার ওসি সঞ্জয় চক্রবতী বলেন, ‘আমার থানা এলাকায় অনেক পর্যটন স্পট। আমরা সবসময় ট্যুরিস্টদের সেবা প্রদান করে থাকি। কারও কোনো সমস্যা কখনও যেন না হয়, সে খেয়াল আমাদের সবসময় থাকে। বর্তমানে বিএনপি-জামায়াতের দেয়া হরতাল-অবরোধের কারণে দেশের অনেক ক্ষতি হচ্ছে।

‘সেই ক্ষতির অংশ পড়েছে পর্যটন শিল্পের ওপর। এই সময়ে হাজার হাজার পর্যটক দেখা যেত এখানে। বর্তমানে নাই বললেই চলে। আমরা চাই এসব বন্ধ হোক; পর্যটন শিল্প রক্ষা হোক।’

এ বিভাগের আরো খবর