বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

নওগাঁয় সেচমূল্য নিয়েও পানি না দেয়ার অভিযোগ কৃষকদের

  • প্রতিনিধি,    
  • ২৪ নভেম্বর, ২০২৩ ০৯:১৬

উপজেলার সিদ্দিকপুর গ্রামের শাহীন শাহ নামের এক ব্যক্তি ৮ নভেম্বর বিএমডিএ’র দুটি গভীর নলকূপের ব্যাপারে সরকারের কেন্দ্রীয় অভিযোগ প্রতিকার ব্যবস্থার অনলাইন প্ল্যাটফর্মের (জিআরএস) মাধ্যমে নওগাঁ জেলা প্রশাসনে একটি অভিযোগ করেন। চিঠি প্রাপ্তির বিষয়টি নিশ্চিত করে মহাদেবপুর জোনের সহকারী প্রকৌশলী ইমদাদুল হক বলেন, ‘সরেজমিন তদন্ত করা হচ্ছে। আমরা তদন্ত অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।’

বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) কর্মকর্তাদের যোগসাজসে ও সঠিক নজরদারির অভাবে নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার ৬ গ্রামের কৃষকেরা শোষণমূলক সেচের পানি বণ্টন ব্যবস্থার শিকার হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

অগ্রিম টাকা পরিশোধ করেও সময়মতো সঠিক পরিমাণ সেচ মিলছে না তাদের। এতে ফসল উৎপাদন কমে যাওয়াসহ নানা ক্ষতির মুখে পরছেন তারা। অন্যদিকে, নিয়ম-নীতি উপেক্ষা করে ইচ্ছেমতো সেচমূল্য আদায় করার বিষয়টি সবারই জানা।

এখানে সেচের জন্য বিএমডিএ-এর গভীর নলকূপ চাষিদের একমাত্র ভরসা। স্থানীয় দুইজন প্রভাবশালী ডিপ অপারেটরের কাছে জিম্মি সিদ্দিকপুরসহ আশেপাশের অন্তত ৫টি গ্রামের প্রায় ৬০০ কৃষক।

এমন অবস্থায় ক্ষুব্ধ চাষিরা। তবে এ নিয়ে কর্তৃপক্ষের দৃশ্যমান কোনোই তৎপরতা নেই। তাদের নীরব ভূমিকা নিয়ে জনমনে দেখা দিচ্ছে নানান প্রশ্ন। এ ব্যাপারে দ্রুত প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উপজেলা সেচ কমিটির সভাপতি, বিএমডিএ’র চেয়ারম্যান, নির্বাহী পরিচালক ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিবের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ভুক্তভোগীরা।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিএমডিএ’র গভীর নলকূপ অপারেটর (ডিপ অপারেটর) পদটি নিয়োগের মাধ্যমে পরিচালনা করা হয়। উপজেলার সিদ্দিকপুর গ্রামের মাঠে দুটি সরকারি গভীর নলকূপ রয়েছে। এসব নলকূপ অপারেটর হিসেবে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপে নিয়োগ পায় মহাদেবপুর সদরের ধান-চাল ব্যবসায়ী ওসমান গণি ও তার ভাই আবদুর রাজ্জাক। তারা ব্যবসায়িক কাজে ব্যস্ত থাকায় তাদের বড় ভাই সিদ্দিকপুর গ্রামের লোকমান হোসেন ওই দুটি নলকূপ থেকে সিদ্দিকপুর, বকাপুর, চকচান, বাজিতপুর, শিবরামপুর ও আখেড়া গ্রামের প্রায় ৬০০ জন কৃষকের প্রায় ৯০০ বিঘা জমিতে সেচের পানি দেন।

তবে তিনি নানা ছলচাতুরির মাধ্যমে কৃষকদের থেকে সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করে বলে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ। অতিরিক্ত টাকা না দিলে জমিতে সেচ বন্ধ করে দেয়া হয় বলেও জানান তারা।

স্থানীয় শিবরামপুর গ্রামের কৃষক রবিউল ইসলাম, সিদ্দিকপুর গ্রামের রতন চন্দ্র মহন্ত, ছমির, তমেজ, মোহাম্মদ আলীসহ অন্তত ৪০ জন ভুক্তভোগী কৃষকের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, অগ্রিম টাকা পরিশোধ করেও সময়মতো ক্ষেতে সঠিক পরিমাণ সেচের পানি পাওয়া যায় না। এতে ফসল উৎপাদন অর্ধেকে নেমে এসেছে। নলকূপ অপারেটরের হাতে ‘জিম্মি’ হয়ে পরেছেন কৃষকরা।

তারা আরও বলেন, প্রতি বিঘায় উপজেলা সেচ কমিটি নির্ধারিত সেচ মূল্য এক হাজার ২০০ টাকা হলেও তাদেরকে বিঘা প্রতি এক হাজার ৫০০ থেকে এক হাজার ৬০০ টাকা করে দিতে হয়। আর এসব নিয়ে কৃষকেরা প্রতিবাদ করলে মারপিটসহ তাদের নানাভাবে ভয়ভীতি প্রদর্শন করা হয়। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তারা অত্যান্ত প্রভাবশালী হওয়ায় ভয়ে এলাকার কেউ এদের বিরদ্ধে মুখ খুলতে সাহস করে না বলেও দাবি করেন কৃষকরা।

বিষয়টি নিয়ে সিদ্দিকপুর মৌজার গভীর নলকূপ অপারেটর ব্যবসায়ী ওসমান গণির সঙ্গে মুঠোফোনে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।

অপর নলকূপ অপারেটর আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন। সেচের পানি নিয়ে কোনো সমস্যা নেই। বর্তমানে আমার ভাই ওই দুটি ডিপ পরিচালনা করছেন। সামনে মৌসুম থেকে আমি এবং আমার ছোট ভাই ওসমান নিজেই নলকূপ দুটি পরিচালনা করবো।’

এদিকে, গত ৮ নভেম্বর উপজেলার সিদ্দিকপুর গ্রামের শাহীন শাহ নামের এক ব্যক্তি বিএমডিএ’র ওই দুটি গভীর নলকূপের ব্যাপারে সরকারের কেন্দ্রীয় অভিযোগ প্রতিকার ব্যবস্থার অনলাইন প্ল্যাটফর্মের (জিআরএস) মাধ্যমে নওগাঁ জেলা প্রশাসনে একটি অভিযোগ করেন। এরপর ৯ নভেম্বর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) সোহেল রানা অভিযোগটি বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের পানি ও জল সরবরাহ শাখায় প্রেরণ করেন। শাহীন শাহের করা অভিযোগ প্রাপ্তির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন বিএমডিএ’র তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ও পানি ও জল সরবরাহ শাখার প্রধান শমসের আলী।

অভিযোগের বিষয়ে নিউজবাংলার প্রতিবেদক তার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অভিযোগটি তদন্তের জন্য বিএমডিএ’র মহাদেবপুর জোনে চিঠি দেয়া হয়েছে।’

চিঠি প্রাপ্তির বিষয়টি নিশ্চিত করে মহাদেবপুর জোনের সহকারী প্রকৌশলী ইমদাদুল হক বলেন, ‘সরেজমিন তদন্ত করা হচ্ছে। আমরা তদন্ত অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।’

উপজেলা সেচ কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা (ইউএনও) কামরুল হাসান সোহাগ বলেন, ‘যদি কৃষকরা তাদের সমস্যা নিয়ে অভিযোগ করে তবে অবশ্যই তদন্ত করে প্রয়োজনীয় প্রদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।’

এ বিভাগের আরো খবর