বার্ধক্যজনিত কারণে এবার নির্বাচন না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সিলেট-৫ (জকিগঞ্জ-কানাইঘাট) আসনে আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য হাফিজ আহমদ মজুমদার। দলীয় মনোনয়নপত্রও সংগ্রহ করেননি রেড ক্রিসেন্ট বাংলাদেশ ও পূবালী ব্যাংকের সাবেক এ চেয়ারম্যান। এ কারণে এ আসনে এবার নতুন মুখ খুঁজছে আওয়ামী লীগ। দলের পাঁচ নেতাসহ এ আসনের প্রার্থী হতে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন সাতজন।
এদিকে আওয়ামী লীগের এমপি এবার প্রার্থী হতে অনাগ্রহী হওয়ায় আশাবাদী হয়ে উঠেছে জাতীয় পার্টি। জোটগতভাবে নির্বাচন হলে এবার আসনটি জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দেয়া হবে বলে আশাবাদী দলটির নেতারা।
মহাজোট গঠনের পর থেকেই সিলেট-৫ আসন নিয়ে চলছে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির টানাপোড়েন। গত নির্বাচনে মহাজোটের প্রধান দুটি দল ঐকমত্যে পৌছাতে না পারায় উন্মুক্ত রাখা হয় এ আসন। ফলে আওয়ামী লীগ থেকে হাফিজ আহমদ মজুমদার ও জাতীয় পার্টি থেকে মো. সেলিম উদ্দিন এখানে প্রার্থী হন। সেবার বিএনপির নেতৃত্বাধীন ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী ছিলেন জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম নেতা মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুক। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হাফিজ মজুমদার বিজয়ী হন।
এর আগে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেট-৫ আসনে জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দেয় আওয়ামী লীগ। মহাজোটের ব্যানারে প্রার্থী হয়ে সেবার নির্বাচিত হন জাতীয় পার্টির যুগ্ম মহাসচিব সেলিম উদ্দিন। পরবর্তী সময়ে তিনি সংসদের বিরোধী দলীয় হুইপের দায়িত্বও পালন করেন।
এবার নির্বাচনে প্রার্থী না হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে বুধবার হাফিজ আহমদ মজুমদারের সঙ্গে মোবাইলফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
হাফিজের ঘনিষ্ট একাধিক নেতা জানিয়েছেন, বার্ধক্যজনিত কারণে হাফিজ মজুমদার এবার নির্বাচন করতে আগ্রহী নন। এ কারণে দলীয় মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেননি, তবে দলের ওপর মহল থেকে তাকে প্রার্থী হওয়ার অনুরোধ করলে তিনি সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করতে পারেন।
এদিকে হাফিজ আহমদ মজুমদার দলীয় মনোনয়নপত্র সংগ্রহ না করায় আশাবাদী হয়ে উঠেছেন আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির মনোনয়নপ্রত্যাশীরা।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, সিলেট-৫ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন সাতজন। তাদের মধ্যে রয়েছেন সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ, সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও ঢাকাস্থ সিলেট বিভাগীয় আইনজীবী পরিষদের সভাপতি মোশতাক আহমেদ, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আহমদ আল কবীর, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক কাওসার চৌধুরী। এ ছাড়া তাসলিমা খানম, মো. খসরুজ্জামান, ফখর উদ্দিন আলী আহমদ নামে আরও তিনজন আওয়ামী লীগের মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন, তবে তারা রাজনীতিতে সংক্রিয় নন বলে খবর পাওয়া গেছে।
মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে মাসুক উদ্দিন আহমদ দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। পরে আসনটি মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দেয়া হলে প্রার্থী হন মো. সেলিম উদ্দিন। ফলে দলের সিদ্ধান্তকে সম্মান জানিয়ে মনোনয়ন প্রত্যাহার করেন মাসুক উদ্দিন। একাদশ সংসদ নির্বাচনে মাসুক উদ্দিন আহমদ মনোনয়ন চাইলেও শেষ পর্যন্ত নৌকার টিকিট পান রেডক্রিসেন্টের সাবেক চেয়ারম্যান হাফিজ আহমদ মজুমদার।
এবার দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার আশা ব্যক্ত করে মাসুক উদ্দিন আহমদ বলেন, ‘আমি এই এলাকার সন্তান। এখানকার মানুষের সাথে আমার ঘনিষ্ট সম্পর্ক। দল আমাকে মহানগরের দায়িত্ব দিলেও নিজ এলাকা কখনো ছেড়ে যাইনি। আশা করছি, দল ও এলাকার জন্য আমার দীর্ঘদিনের কর্মকাণ্ড বিবেচনায় নিয়ে এবার আমাকে মনোনয়ন প্রদান করা হবে।’
জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা সীমান্তিকের প্রতিষ্ঠাতা ড. আহমদ আল কবীরও গেল দুইবার দলীয় মনোনয়ন চেয়েছিলেন। এলাকার শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও অবকাঠামাগোত উন্নয়নে তিনি দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন।
ড. আহমদ আল কবীর বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর আদর্শের একজন সৈনিক হিসেবে আমি এলাকার উন্নয়নে সাধ্যমতো কাজ করে যাচ্ছি। আরও বেশি কাজ করার সুবিধার্থে দলীয় মনোনয়ন চেয়েছি। আশা করছি দল ও দলনেত্রী আমাকে মূল্যায়ন করবেন।’
ঢাকাস্থ সিলেট বিভাগীয় আইনজীবী পরিষদের সভাপতি মোশতাক আহমেদও এর আগে মনোনয়ন চেয়ে বঞ্চিত হন। গেল সিটি নির্বাচনেও তিনি দলীয় প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণায় সক্রিয় ছিলেন।
এদিকে এই আসনের সাবেক সংসদ সদস্য সেলিম উদ্দিন এবারও জাতীয় পার্টির মনোনয়নপ্রত্যাশী। সিলেট-৫ ও সিলেট-৬ আসনে দলীয় মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন তিনি।
সেলিম উদ্দিন বলেন, ‘এবার ভোট জোটগতভাবে হবে কি না, এটা দলের শীর্ষ নেতারা সিদ্ধান্ত নেবেন, তবে আমি মাঠে সক্রিয় রয়েছি। জোট হোক বা না হোক, সুষ্ঠু ভোট হলে জনগণ আমাকে মূল্যায়ন করবেন বলে বিশ্বাস করি।’