দিনাজপুর পৌরসভার মেয়রের পদ থেকে সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলমকে সাময়িক বরখাস্তের সিদ্ধান্ত নিয়ে হাইকোর্টের আদেশ ছয় সপ্তাহের জন্য স্থগিত করেছে সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ।
রাষ্ট্রপক্ষে আবেদনের শুনানি নিয়ে প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে আপিল বিভাগ বৃহস্পতিবার এ আদেশ দেয়। খবর বাসসের
একই সঙ্গে এই সময়ের মধ্যে রাষ্ট্রপক্ষকে নিয়মিত লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করতে বলা হয়েছে।
হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত হওয়ায় সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলম আপাতত মেয়র পদে ফিরতে পারছেন না বলে জানিয়েছেন ডেপুটি এটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায়।
সাময়িক বরখাস্তের সিদ্ধান্তের বৈধতা নিয়ে জাহাঙ্গীরের রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে মঙ্গলবার হাইকোর্ট রুল দিয়ে সাময়িক বরখাস্তের আদেশ এক মাসের জন্য স্থগিত করে। সেই সঙ্গে প্যানেল মেয়র হিসেবে একজন কাউন্সিলরকে দায়িত্ব দেয়ার সিদ্ধান্তও স্থগিত করা হয়। ফলে মেয়র হিসেবে জাহাঙ্গীরের দায়িত্ব পালনের পথও খোলে।
হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ আবেদন করে। এটি আপিল বিভাগের চেম্বার কোর্ট হয়ে বৃহস্পতিবার আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য ওঠে।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন, সঙ্গে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ মোহাম্মদ মোরশেদ ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায়। জাহাঙ্গীরের পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র অ্যাডভোকেট মো. রুহুল কুদ্দুস কাজল।
রুহুল কুদ্দুস কাজল আজকের আপিল বিভাগের আদেশের বিষয়টি সাংবাদিকদের জানান।
তিনি বলেন, ‘আজ সর্বোচ্চ আদালতকে বলেছি বিষয়টি নিয়ে হাইকোর্টে রুল শুনানির জন্য ধার্য রয়েছে। এখন রুল শুনানি হবে।’
সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলম বিএনপির রংপুর বিভাগীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক। টানা তৃতীয় মেয়াদে দিনাজপুর পৌরসভার মেয়র নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব পালন করছিলেন তিনি।
দিনাজপুর পৌরসভার মেয়র সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলমকে সাময়িক বরখাস্ত করে গত ৩১ অক্টোবর প্রজ্ঞাপন জারি করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগ।
প্রজ্ঞাপনে লেখা হয়, আপিল বিভাগ আদালত অবমাননার দায়ে সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলমকে দণ্ড দিয়েছে। আর দিনাজপুরের চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোয় ২০০৯ সালের স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) আইনের ৩২(১)(খ)(ঘ) ধারা অনুযায়ী ‘পৌরসভা বা রাষ্ট্রের হানিকর কার্যকলাপে জড়িত থাকা, নৈতিক স্খলনজনিত অপরাধে আদালত কর্তৃক দণ্ডিত এবং অসদাচরণ ও ক্ষমতার অপব্যবহার’-এর দায়ে মেয়রের পদ থেকে অপসারণের কার্যক্রম শুরু করায় তার দিনাজপুর পৌরসভার মেয়রের ক্ষমতা প্রয়োগ করা প্রশাসনিক দৃষ্টিকোণে সমীচীন নয় বলে সরকার মনে করে। স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) আইনের ৩১(১) ধারা অনুযায়ী সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলমকে দিনাজপুর পৌরসভার মেয়রের পদ থেকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হলো।
এর আগে আদালত অবমাননার দায়ে দণ্ডিত সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলম গত ১৮ অক্টোবর দিনাজপুর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয়।
আদালত অবমাননার দায়ে আপিল বিভাগের রায় অনুযায়ী এক মাসের সাজাভোগ শেষে ১৬ নভেম্বর কারামুক্তি পান সাময়িক বরখাস্ত হওয়া মেয়র জাহাঙ্গীর। এরপর সাময়িক বরখাস্তের আদেশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ১৯ নভেম্বর হাইকোর্টে রিট করেন।