বিএনপি-জামায়াত যদি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করে তবে তার পরিণতি ভালো হবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর তেজগাঁওয়ে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে আওয়ামী লীগের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ড সভায় স্বাগত বক্তব্যে তিনি এ হুঁশিয়ারি দেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, নির্বাচনে আসার মতো আত্মবিশ্বাস তাদের (বিএনপি) নেই। কারণ ২০০৮ নির্বাচনে তারা মাত্র ৩০টি সিট পেয়েছে। আর আমরা দেশ পরিচালনা করে মানুষের আস্থা অর্জন করেছি। আমরা ভোটে অনেক এগিয়ে। এটা জেনেই তারা নির্বাচনে না এসে, নির্বাচন বানচাল করার চেষ্টা করছে।
তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াত নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করলেও আওয়ামী লীগের শক্তি দেশের জনগণ। কেউ নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করলে তার পরিণতি ভালো হবে না।
দেশবাসীকে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের আহ্বান জানিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচনের বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই।
শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি মিছিল-মিটিং করলেও আওয়ামী লীগ সেখানে বাধা দেয়নি। মিছিল-মিটিং এবং সুস্থ রাজনীতির সময় বিএনপির গ্রহণযোগ্যতা বাড়ছিল, ভালো জমায়েতের পাশাপাশি মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতাও তো বাড়ছিল। কিন্তু যখন তারা আবার সহিংসতার সেই পুরোনো রূপে ফিরে গেলো তখন তারা আবার জনবিচ্ছিন্ন সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে জনগণের কাছে পরিচিতি পেয়েছে।
তিনি প্রশ্ন তোলেন, আজ আন্তর্জাতিকভাবে অনেক দেশ কথা বললেও যখন মিলিটারি ডিক্টেটররা মানুষের অধিকার ক্ষুণ্ন করেছিল তখন তাদের চেতনা কোথায় ছিল? দেশের জন্য কাজ করেন জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, তিনি কোনো দেশের তাবেদারি করেন না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, নির্বাচন চলাকালীন সময় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী, প্রশাসক সম্পূর্ণ নির্বাচন কমিশনের নিয়ন্ত্রণে। তফসিল ঘোষণার পর থেকে কোনো অফিসার বদলি করা, এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় বদলি, এগুলো নির্বাচন কমিশনারের অনুমতি ছাড়া করা যাবে না। যদি নির্বাচন কমিশন চায় তখন সেটা পরিবর্তন করা যায়, তা ছাড়া করা যাবে না।
তিনি বলেন, জাতির পিতা যে সংবিধান দিয়েছিলেন এবং নির্বাচনে যে নীতিমালা দিয়েছিলেন, সেখানে একটা বিষয় ছিল যে, ব্যালট পেপারের পেছনে প্রিজাইডিং অফিসারের সিল থাকবে, জিয়াউর রহমান নির্বাচনের আগে অর্ডিন্যান্স করে তা সবকিছু বাতিল করে দেয়। অর্থাৎ বাক্স ভরে ভরে রেখে দেয়া ইত্যাদি ইত্যাদি...।
সরকারপ্রধান বলেন, আওয়ামী লীগ যখনই সরকারে এসেছে, তখনই বিভিন্ন সংস্কার করেছে। যাতে নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠু হয়। জনগণ তার ভোট দিতে পারে, যাতে জনগণ তার অধিকার প্রয়োগ করতে পারে। আমরাই স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স, ছবিসহ ভোটার তালিকা এবং জনগণ যাতে ভোট দিতে পারে, সেক্ষেত্রে মানুষকে সচেতন করা, সেগুলো আওয়ামী লীগই করেছে।
তিনি আরও বলেন, নির্বাচন কমিশন সম্পূর্ণ প্রধানমন্ত্রী দপ্তরের সঙ্গে যুক্ত ছিল। বাজেট থেকে শুরু করে সবকিছু প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে যেত। সেই জায়গা থেকে স্বাধীন করে দিয়েছি। নির্বাচন কমিশন গঠনের ক্ষেত্রে আমরা আইন করি। যেগুলো আগে করা ছিল না। আইনের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়। সেখানে কোনো হস্তক্ষেপ করা হয়নি।
আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ চায় দেশে গণতন্ত্র থাকুক এবং রাজনৈতিক দলগুলো স্বাধীনভাবে কাজ করুক। তবে বিএনপি ক্ষমতায় থাকতে আওয়ামী লীগ সেই রাজনীতি করার সুযোগ পায়নি। সারা দেশে দলের ২১ হাজার নেতা-কর্মীকে হত্যা করেছে বিএনপি।
অতীতের মতো মনোনয়নের ব্যবসা করতে হলেও বিএনপিকে নির্বাচনে আসার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, কার কত দম সেটাও দেখতে চায় আওয়ামী লীগ।
সরকার প্রধান বলেন, সাধারণ মানুষ কত কষ্ট করে একটা বাস তৈরি করে, সেটা ভাড়া দিয়ে খায়। তাদের সেই রুটি রুজিতে হাত দিয়েছে তারা। সিএনজি, গাড়ি, লঞ্চ, স্টিমার, রেল কোনোকিছু বাদ যায়নি। ট্রেন তো খালেদা বন্ধ করতে চেয়েছিল, আমরা তো আলাদা মন্ত্রণালয় করে সারা বাংলাদেশে রেল লাইন করে দিয়েছি, মানুষ যত অল্প পয়সায় চলতে পারে তার ব্যবস্থা করেছি। তারপর কত মানুষের জীবন নিয়েছে। প্রায় তিন হাজারের মতো মানুষকে তারা আগুন দিয়ে পুড়িয়েছে। জ্বালাও-পোড়াও করে একটা ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে তারা কি পেয়েছে জানি না।
তিনি বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশের পর এখন আওয়ামী লীগের লক্ষ্য দক্ষ জনগোষ্ঠী তৈরি করে স্মার্ট সরকার এবং স্মার্ট সোসাইটি গঠন করা।
সকাল ১০টার পর আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ডের সভায় শুরু হয়। এদিনের সভায় রাজশাহী, রংপুর ও খুলনা বিভাগের সংসদীয় আসনগুলোর মনোনয়ন চূড়ান্ত করা হবে। টানা তিন দিন চলবে সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের এ সভা। বৃহস্পতিবারের পর ধাপে ধাপে বাকি বিভাগগুলোর প্রার্থী চূড়ান্ত করবে আওয়ামী লীগ।